ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা চার লাখ ছাড়াল

প্রকাশিত: ২২:২৩, ২২ জুন ২০২০

ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা চার লাখ ছাড়াল

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ভারতে শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা চার লাখ ছাড়াল। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশটি। সেখানে গত ১৮ দিনেই আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ। ব্রাজিলে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। কানাডায় আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। সৌদিতে কার্ফু প্রত্যাহার করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে জরিমানা করা হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। নিউজিল্যান্ডে নতুন করে আরও দুই করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। খবর বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, এনডিটিভি, হিন্দুস্তান টাইমস, রয়টার্স, জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি ও ওয়ার্ল্ডোমিটার ডট ইনফোর। ওয়ার্ল্ডোমিটার ডট ইনফোর মতে, দুনিয়াজুড়ে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮৯ লাখ ছাড়িয়েছে। রবিবার পর্যন্ত বৈশ্বিক মহামারীতে এখন পর্যন্ত ২১৫ দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৮৯ লাখ ৯৫ হাজার ৪৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে। মারা গেছেন চার লাখ ৬৮ হাজার ৯১৪ জন। চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪৭ লাখ ৮৪ হাজার ৮৫০ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় এখনও রয়েছেন ৩৭ লাখ ১৮ হাজার ৬৫৩ জন। যাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন ৫৪ হাজার ৫৭২ জন। একদিনে আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৫৬ হাজার ৯২২ জন। মারা গেছেন চার হাজার ৪২৮ জন। রবিবার সকালে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭ হাজার ১১৫ জন। মারা গেছেন এক হাজার ৩৮ জন। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির ড্যাশ বোর্ডে দেখানো হচ্ছে, ৮৮ লাখ ১৪ হাজার ২৪৩ জন সংক্রমিত হয়েছেন। চার লাখ ৬৪ হাজার ৭৫২ জন মারা গেছেন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪৩ লাখ ৮০ হাজার ২৮৬ জন। ভারতে শনাক্ত রোগী ৪ লাখ ছাড়াল ॥ করোনা মহামারীর মধ্যে ভারতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়ে গেল। শনিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৫ হাজার ৪১৩ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এটি একদিনে নতুন আক্রান্ত শনাক্তের নয়া রেকর্ড। এর আগে ভারতে একদিনে এত রোগী শনাক্ত হয়নি। নতুন রোগীদের নিয়ে দেশটিতে করোনা আক্রান্তের মোট সংখ্যা চার লাখ ১০ হাজার ৪৬১ জনে দাঁড়িয়েছে। ৩০ জানুয়ারি ভারতে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। তারপর ১১০ দিনের মধ্যে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক লাখ ছাড়ালেও পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে সংখ্যাটি দুই লাখ ছাড়িয়ে যায়। এরপর তিন লাখ ছাড়াতে সময় লাগে মাত্র ১০ দিন এবং চার লাখ ছাড়াতে লাগে আরও কম, মাত্র আট দিন। প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ায় ১৪৩ দিনের মধ্যে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়ে গেল। সরকারী পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশটিতে লকডাউন প্রায় তুলে নেয়া হয়েছে। লোকাল ট্রেন, মেট্রো ও আন্তর্জাতিক ভ্রমণ বাদে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ফের পূর্ণোদ্যমে শুরু হয়েছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও রাশিয়ার পরই ভারতের অবস্থান। বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনসংখ্যার দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। একদিনে দেশটিতে আরও ৩০৭ জন কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এতে মৃত্যুর সংখ্যা ১৩ হাজার ২৯২ জনে দাঁড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার লাখ ১২ হাজার ৯৫৫ জনে। সুস্থ হয়ে উঠেছেন দুই লাখ ২৮ হাজার ৬০৫ জন। এক লাখ ২৮ হাজার ২০৫ জন রোগী নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যায় শীর্ষে আছে মহারাষ্ট্র। রাজ্যটিতে করোনা সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৮৪ জনের। আক্রান্তের সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে তামিলনাড়ু। রাজ্যটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৬ হাজার ৮৪৫ জন। ৫৬ হাজার ৭৪৬ জন আক্রান্ত নিয়ে তামিলনাড়ুুকে ছুঁই ছুঁই করছে দিল্লী। তালিকায় এরপরে থাকা গুজরাটে আক্রান্তের সংখ্যা ২৬ হাজার ৬৮০ জন। মহারাষ্ট্র, তামিলনাডু, দিল্লী ও গুজরাট- ভারতের এই চার রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই লাখেরও বেশি। যা দেশের মোট সংখ্যার ৬৫ শতাংশ। মৃত্যুর সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে দিল্লী। মোট দুই হাজার ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছে দিল্লীতে। গুজরাটে এক হাজার ৬৩৮ জন ও তামিলনাড়ুতে ৭০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ১৩ হাজার ৫৩১ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫৪০ জনের। সৌদিতে কার্ফু প্রত্যাহার ॥ করোনার কারণে সৌদি আরবে জারি করা কার্ফু বিভিন্ন বিধিনিষেধ শিথিল হচ্ছে। ভাইরাসের সংক্রমণ কমতে থাকায় ও নাগরিকদের জীবন স্বাভাবিক করার অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। সৌদির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কার্ফু প্রত্যাহার করলেও সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি না মানলে গুনতে হবে জরিমানা। এছাড়া পবিত্র নগরী মক্কার মসজিদুল হারামসহ ওই অঞ্চলের দেড় হাজারের বেশি মসজিদ রবিবার ফজরের নামাজের সময় থেকে খুলে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় সময় রবিবার সকাল ৬টা থেকে কার্ফু প্রত্যাহার করা হয়েছে। সৌদিতে সব অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম আগের মতো স্বাভাবিকভাবেই পরিচালিত হবে। এসব ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। নইলে গুনতে হবে জরিমানা। ঘর থেকে বের হলেই যথাযথ নিয়মে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও শারীরিক তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে হবে। জনসমাগম থেকে বিরত থাকারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এক স্থানে সর্বোচ্চ ৫ জনের বেশি জড়ো হতে পারবে না। পৌর, সামাজিক ও পল্লীবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সোমবার থেকে সেলুন ও বিউটি পার্লারগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলতে পারবে। মুখে মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস পরিধান করতে হবে এবং শুধু চুল কাটা ও সেভ করা যাবে একবার ব্যবহারযোগ্য উপকরণ দিয়ে। কর্মক্ষেত্রে ৭০ শতাংশের বেশি উপস্থিতি না রাখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত ওমরাহ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকবে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু থাকবে। এক প্রদেশ থেকে অন্য প্রদেশে আসা-যাওয়ায় এখন আর বাধা নেই। সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে করোনা সংক্রমণ পরীক্ষার জন্য দেশটির নাগরিকদের জন্য দুটি এ্যাপস চালু করা হয়েছে। তাবাউদ ও তাওয়াক্কালনা নামে এ্যাপস দুটি সবাইকে ডাউনলোড করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয় ৫০ জনেরও বেশি লোকের জমায়েত করা নিষিদ্ধ করেছে। যদিও সব মসজিদে সালাত আদায় করতে পারবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে। জায়নামাজ নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে হবে এবং মুখে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, যারা এই প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ লঙ্ঘন করবে তাদের জরিমানা ও শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে। গত ২৪ ঘণ্টায় সৌদি আরবে নতুন করে ৩ হাজার ৯৪১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৪৬ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে এক লাখ ৫৪ হাজার ২৩৩ জন। দেশটিতে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা এক হাজার ২৩০ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৯৮ হাজার ৯১৭ জন। সৌদি সরকারের দেয়া বিভিন্ন বিধিনিষেধ শিথিল প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ আল-আবদ আল-আলি বলেন, বিধিনিষেধ তুলে নেয়া মানেই করোনা সম্পূর্ণ নির্মূল হয়ে যায়নি। ভাইরাসটি এখনও সংক্রমণ ঘটিয়ে চলছে। এখনও আমাদের কাছে কোন ভ্যাকসিন নেই। এত প্রতিবন্ধকতা থাকার পরও আমরা এমন একটি পর্যায়ে এসেছি যে, জনজীবন স্বাভাবিক করার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমাদের খুব সতর্কতার সঙ্গে সেদিক এগোতে হবে। এছাড়া পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সৌদি আরবের সব স্থল ও নৌসীমান্ত পথ বন্ধ থাকবে। নিউজিল্যান্ডে আরও ২ রোগী শনাক্ত ॥ নিউজিল্যান্ডে আরও দুইজনের দেহে নতুন করোনা উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে বলে দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এই দুইজন কয়েকদিন আগে ভারত থেকে আসা একটি শিশু ও ৫৯ বছর বয়সী এক নারী বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এদের নিয়ে মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে নিউজিল্যান্ডে কোভিড-১৯ আক্রান্ত নতুন সাত রোগী শনাক্ত হল। সংক্রমণ ‘শূন্যের কোঠায় নেমে আসার’ ঘোষণা দেয়ার ২৪ দিন পর দেশটির কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে ব্রিটেনফেরত দুই নারীর দেহে প্রাণঘাতী ভাইরাসটির উপস্থিতি শনাক্ত করেন। শনিবার শনাক্ত হওয়া দুইজন নিয়ে নিউজিল্যান্ডে এখন ‘সক্রিয় রোগীর’ সংখ্যা সাতজনে দাঁড়িয়েছে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে এদের সবার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণ ‘শূন্যের কোঠায় নেমে আসায়’ এবং আক্রান্তরা সবাই সুস্থ হয়ে যাওয়ায় নিউজিল্যান্ড ৮ জুন তাদের সীমান্তের ভেতর সব ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নেয়। তারপরও দেশটিতে বিদেশ থেকে আগতদের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হচ্ছে। নতুন যে দুই রোগী শনাক্ত হয়েছে, তারাও কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। আক্রান্ত শিশুটি সম্প্রতি তার মা-বাবার সঙ্গে ভারত থেকে নিউজিল্যান্ড গেছে। আর ৫৯ বছর বয়সী নারীও দিল্লী থেকে কয়েকদিন আগে নিউজিল্যান্ডে ফিরেছেন বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।
×