ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৩৭ জনের ১৬ মাসের চাল আত্মসাত

প্রকাশিত: ০১:০৮, ৬ জুন ২০২০

৩৭ জনের ১৬ মাসের চাল আত্মসাত

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ, ৫ জুন ॥ মান্দা উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়নের ৩৭ জনের নাম রয়েছে ভিজিএফ কর্মসূচীর তালিকায়। কিন্তু বিষয়টি তারা জানতে পারেন তালিকায় নাম ওঠার ১৭ মাস পর। এই সময়ের মধ্যে কোন মাসেই ভিজিএফের চাল (প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল) পাননি তারা। বৃহস্পতিবার ওই ইউনিয়নের আরও ৩ নারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অনুরূপ অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ৩ সদস্যবিশিষ্ট তদস্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। খাদ্য সহায়তাবঞ্চিত ব্যক্তিদের অভিযোগ, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান তার দেহরক্ষী হাসান প্রামানিকের মাধ্যমে হতদরিদ্রদের চাল আত্মসাত করেছেন। এ ঘটনায় গত ৩১ মে ভুক্তভোগী তিন নারী জেলা প্রশাসন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। নাছিমা আখতার, মনোয়ারা খাতুন ও শাহিদা খাতুন নামে ওই তিন নারীর লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ভারশোঁ ইউনিয়নের অভিযোগকারী ওই তিন ব্যক্তিসহ ৬, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁকাপুর, মহানগর, পাকুড়িয়া, বালিচ, মোহাম্মদপুর ও ভারশোঁ গ্রামের ৩৭ ব্যক্তির নাম ভিজিএফ কর্মসূচীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে তালিকাভুক্ত ওই ব্যক্তিদের ভিজিএফের চাল পাওয়ার কথা। কিন্তু এতদিন তাদের কাউকেই ভিজিএফের তালিকায় থাকার বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টরা কেউই জানাননি। গত এপ্রিল মাসে খোঁজ-খবর নিয়ে তারা জানতে পারেন ভিজিএফের তালিকায় তাদের নাম রয়েছে। এই সময়ে স্বাক্ষর ও টিপ সই জাল করে ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ও তার দেহরক্ষী ওই ৩৭ ব্যক্তির ভিজিএফের চাল আত্মসাত করেন। অভিযোগকারী নাছিমা আখতার, মনোয়ারা ও শাহিদা খাতুন বলেন, ভিজিএফ কর্মসূচীর তালিকায় নাম ওঠাতে গ্রামের আরও কয়েকজনের সঙ্গে তারা দুই বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও ছবি জমা দেন। পরিচয়পত্র ও ছবি জমা নেয়ার পর তখন তাদের জানানো হয়, ভিজিএফের তালিকায় নাম ওঠার বিষয়টি তাদের পরে জানানো হবে। পরে জানতে পারেন তাদের নাম তালিকাভুক্ত হয়নি। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে গত এপ্রিল মাসে আবার হতদরিদ্রদের তালিকাভুক্ত করার কাজ শুরু হলে ভিজিএফের তালিকায় নাম ওঠাতে তারা আবারও জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি দেন। তখন যাচাই-বাছাইয়ের সময় জানা যায়, তাদের নাম ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে তালিকাভুক্ত হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান ও ভারশোঁ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য প্রতিপক্ষের প্ররোচনায় আমার বিরুদ্ধে ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তোলা হচ্ছে। তদন্ত করলেই প্রকৃত সত্য বের হয়ে আসবে।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, ‘অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপজেলা সমজাসেবা, পল্লী উন্নয়ন ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে চেয়াম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হবে।’ নাটোরে নামে-বেনামে কার্ড নিজস্ব সংবাদদাতা নাটোর থেকে জানান, বড়াইগ্রাম উপজেলার জোনাইল ইউনিয়নের কচুগাড়ি গ্রামের আবু সাঈদ তিন বছর ধরে ইরাকে থাকেন। তার নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর কার্ড (নম্বর-৪৭৮) রয়েছে। সেই কার্ডের বিপরীতে নিয়মিত চালও তোলা হয়েছে। অথচ সাঈদের পরিবার কিছুই জানে না। উপজেলার চান্দাই ইউনিয়নের দিয়াড় গাড়ফা গ্রামের কেরামত আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন জানলেন, তার নামে খাদ্যবান্ধব কার্ড (নম্বর ৩২৩) রয়েছে। কার্ডটি চোখের দেখাও দেখেননি। কিন্তু প্রায় তিন বছর ধরে কার্ডের চাল সরবরাহ করেছেন সংশ্লিষ্ট ডিলার। ভান্ডারদহ গ্রামের মৃত ওসমান আলীর স্ত্রী আয়না বেগমের নামে দুটি কার্ড (৪৮৭ ও ৫৯২) রয়েছে। কিন্তু তিনি চাল পান না। বড়াইগ্রাম উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে এভাবে নামে-বেনামে দুই শতাধিক কার্ড দিয়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর চাল আত্মসাত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জোনাইল ইউনিয়নের চৌমুহন গ্রামের ভুট্টু প্রামাণিকের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর কার্ড (১৬৩৫) হয়েছে প্রায় তিন বছর আগে। কিন্তু তিনি জানতেন না। সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হলে ডিলার গোপাল চন্দ্র সরকার ১৫ দিন আগে ডেকে নিয়ে এক বস্তা (৩০ কেজি) চালসহ কার্ডটি তার কাছে হস্তান্তর করেন। তিনি মাত্র একবার চাল পেলেও তার কার্ডে তিন বছর ধরেই চাল নেয়ার টিপসই দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘আমি সই করতে পারি, এখানে টিপ দেব কেন? তা ছাড়া টিপও তো আমার না।’ একই গ্রামের ছামেরন বেগম (১৬৫২) দুবার চাল পেলেও ডিলারের লোক এসে কয়েক মাস আগে কার্ডটি নিয়ে গিয়ে আর ফেরত দেননি। জালাল উদ্দিনের (১৬৮৯) স্ত্রী আম্বিয়া খাতুনও জানান যে, তাদের ডিলার চাল দেন না। ছয় মাস আগে চৌমুহন গ্রামের রাশেদা বেগম (১৬৫৮) মারা গেছেন, তবে তার নামে নিয়মিত চাল তোলা হচ্ছে। চান্দাই ইউনিয়নের দিয়ার গাড়ফা গ্রামের কেরামত আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেনের (৩২৩) নামে নিয়মিত চাল তোলা হলেও কার্ডের তথ্য তার জানা নেই। ভান্ডারদহ গ্রামের হায়দার আলী (৫২৯) ও তার স্ত্রী রহিমা খাতুনের (৫৫৯) নামে কার্ড রয়েছে। নিয়মিত চালও তোলা হচ্ছে। একই গ্রামের জমেলা বেগমের (৫১৪) নামে কার্ড থাকলেও বিষয়টি জানেন না তিনি। একই গ্রামের সড়ক দুর্ঘটনায় আহত আয়ুব আলীর নামে রয়েছে দুটি কার্ড। যার নম্বর ৫৩৩ ও ৫৮১। তবে তার কাছে একটি কার্ডও নেই। তিনি চালও পান না। ওই গ্রামের মৃত ওসমান আলীর স্ত্রী আয়না বেগমের (৪৮৭ ও ৫৯২) এবং চান্দাই গ্রামের হাবিবুর রহমানের (৭৯৬ ও ৭১৯) নামে জনপ্রতি দুটি করে কার্ডে চাল তোলা হচ্ছে। একই ভোটার আইডি নম্বর দিয়ে একজনের নামে দুটি করে কার্ড বহাল থাকলেও তা জানেন না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। চাঁপাইয়ে ৮৬৬ গরিবের চাল আত্মসাত স্টাফ রিপোর্টার চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে জানান, ২০১৭ সাল থেকে গরিবের ১০ টাকা কেজি দরের চাল আত্মসাত করে আসছে। উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানের যোগসাজশে চালের দুই ডিলার শরিফুল ইসলাম ও আশরাফুল হতদরিদ্রের চাল লুট করে ভাগাভাগি করে আসছিল। জেলা প্রশাসন নুরুল ইসলাম খবরটি জানতে পেরে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে। জেলার পাকা ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। দুই ডিলার ইউনিয়নের শত শত ভুয়া কার্ডে চাল তুলে তা বিক্রি করে আসছিল তিন বছর ধরে। নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়েবসাইডে কার্ডের তালিকা প্রকাশ করেন।
×