ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষমতাসীনদের স্বস্তি কেড়ে নিন ॥ ওবামার আহ্বান

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ৫ জুন ২০২০

ক্ষমতাসীনদের স্বস্তি কেড়ে নিন ॥ ওবামার আহ্বান

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ পুলিশী হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের পরামর্শ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ছড়িয়েপড়া টানা বিক্ষোভ নিয়ে প্রথমবারের মতো ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দিলেন তিনি। বুধবার ভার্চুয়াল টাউন হল সভায় ওবামা এসব কথা বলেন। এছাড়া সাবেক আরও চারজন প্রেসিডেন্ট বিক্ষোভের পক্ষ নিয়েছেন। লন্ডনে চতুর্থদিনের মতো বিক্ষোভ হয়েছে। ফ্লয়েডের মেয়ে জিয়ানা জানিয়েছে তার বাবা দুনিয়া বদলে দিয়েছে। খবর সিএনএন, ওয়াশিংটন পোস্ট, এনবিসি নিউজ ও নিউইয়র্ক টাইমসের ওবামা বলেছেন, সত্যিকার পরিবর্তন আনতে হলে আমাদের একটি সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরতে এবং ক্ষমতায় থাকা মানুষদের অস্বাচ্ছন্দ্যকর করে তোলার উভয় কাজই করতে হবে। একইসঙ্গে আমাদের বাস্তবিক সমাধান ও বাস্তবায়নযোগ্য আইন প্রয়োজন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে ওবামা ফাউন্ডেশন। এতে আলোচ্য সূচীতে ছিল দেশটির পুলিশে সংস্কার। মিনিয়াপলিসে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার ঘটনায় সপ্তাহব্যাপী বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে ওই আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। এর আগে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ব্যর্থতার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছিলেন ওবামা। কিন্তু বুধবার তিনি মহামারীর মধ্যেও চলমান বিক্ষোভে প্রতিবাদকারীদের প্রতি পরামর্শ দিলেন। ওবামা বলেন, আমি সরাসরি দেশের কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ-তরুণীদের বলতে চাই, আপনারা জেনে রাখুন যে, আপনারা গুরুত্বপূর্ণ। আমি আপনাদের জানাতে চাই যে, আপনাদের জীবন ও স্বপ্ন গুরুত্বপূর্ণ। ভাষণে ওবামা বলেছেন, এই মুহূর্তে বিক্ষোভে অংশ নেয়াদের রাজনৈতিক অগ্রসরতা রয়েছে। তারা পুলিশ ও প্রশাসনিক পর্যায়ে বড় ধরনের সংস্কারের দাবি তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন ধরনের বিক্ষোভে এমনটি এর আগে হয়নি। ১৯৬০ দশকের নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে চলমান বিক্ষোভের তুলনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ওবামা বলেন, ইতিহাস সম্পর্কে আমি ভালই জানি এবং তাই বলছি এবার ভিন্ন কিছু রয়েছে। মানুষের মনে পরিবর্তন হচ্ছে, আমরা যে আরও ভাল করতে পারি সেটির জন্য বৃহত্তর স্বীকৃতি প্রয়োজন। এটি হলো দেশজুড়ে কার্যক্রম, সংগঠিত করা এবং অনেক বেশি তরুণের অংশগ্রহণের সরাসরি ফলাফল। ‘বাবা তো দুনিয়াই বদলে দিল!’ ॥ শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে স্বামীর মৃত্যুর প্রায় আট দিন পরে প্রথমবার প্রকাশ্যে দেখা গেল রক্সি ওয়াশিংটনকে। মিনিয়াপোলিসের সিটি হলে জর্জ ফ্লয়েডের স্মরণসভায় যোগ দেন তিনি। মায়ের ঠিক পাশেই সাদা টপ পরা ছয় বছরের মেয়ে জিয়ানা। তার দিকে তাকিয়েই রক্সি ভাঙা গলায় বললেন, মেয়েটা আমার চোখের সামনেই বড় হবে। একদিন গ্র্যাজুয়েটও হবে। কিন্তু জর্জের কিছুই দেখা হলো না। ডায়াস ছেড়ে মাকে জড়িয়ে ধরে একবার শুধু চোখ বুজলো সে। তারপর হল থেকে বেরিয়ে এলো বাবার বন্ধু, সাবেক বাস্কেটবল তারকা স্টিফেন জ্যাকসন সিনিয়রের হাত ধরে। তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হলো, বাবার জন্য গর্ব হয়? তোমার বাবা কি করেছিল, তুমি জান? ক্যামেরার পিছন থেকে একজন প্রশ্ন করলেন সাংবাদিকরা। তার জবাবে সে বলল, আমার বাবা তো দুনিয়াই বদলে দিল! বিক্ষোভকে সমর্থন সাবেক চারজন প্রেসিডেন্টের ॥ মার্কিন পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের পর জনগণের বিক্ষোভকে সমর্থন জানিয়ে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন দেশটির সাবেক চারজন প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট। তারা হলেন- ডোনাল্ড ট্রাম্পের পূর্বসূরি বারাক হোসেন ওবামা, জর্জ ডব্লিউ বুশ, বিল ক্লিনটন ও জিমি কার্টার। সব সীমাবদ্ধতাকে মোকাবেলা করে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে জনগণকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। পৃথক বক্তৃতা ও বিবৃতিতে তারা এসব কথা বলেন। এক বিবৃতিতে রিপাবলিকান পার্টি মনোনীত সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ লেখেন, তিনি ও তার স্ত্রী লরা বুশ দেশে চলমান দমন ও নিপীড়ন নিয়ে উদ্বিগ্ন। এটাই সময়, দেশের বঞ্চিত ও নিপীড়িতদের দৃষ্টি দিয়ে ব্যর্থতাকে নিরীক্ষণ করা। এরচেয়ে আরও ভাল উপায় হলো সহানুভূতি, প্রতিশ্রুতি, সাহসী পদক্ষেপ ও ন্যায় বিচারের মাধ্যমে শান্তি। বুধবার জাতিগত নিধনও এর সমাধান প্রসঙ্গে ভার্চুয়াল টাউন হলে আলোচনাসভায় বারাক ওবামা বক্তৃতা করেন। তিনি মার্কিনীদের অনিশ্চয়তা ও কষ্টের দিকগুলো তুলে ধরেন। দাসত্বের ইতিহাস থেকে বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদ পর্যন্ত কাঠামোগত সমস্যাগুলোকে তিনি কিভাবে দেখেন তা ব্যাখ্যা করেন ওবামা। ডেমোক্র্যাট পার্টি মনোনীত সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এক বিবৃতিতে বলেছেন, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের স্বপ্ন ছিল কোন মার্কিনীকে তার গায়ের রঙ দিয়ে বিচার করা হবে না। যা আজ অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু বুঝিয়ে দেয় যে, একজন মানুষের বর্ণপরিচয় নির্ধারণ করে দেয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের কিভাবে মূল্যায়ন করা হবে। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার বুধবার এক বিবৃতিতে বলেন, জনগণের শক্তি ও নৈতিক বিবেকসম্পন্ন মানুষকে অবশ্যই বর্ণ বৈষম্যমূলক পুলিশ, বিচার ব্যবস্থা, সাদা ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। জনগণের মতোই একটি ভাল সরকার প্রয়োজন। লন্ডনে বিশাল বিক্ষোভ ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসারের হাতে নিহত জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে বুধবার বিকেলে বিশাল বিক্ষোভ হয়েছে লন্ডনে। সেন্ট্রাল লন্ডনের হাইড পার্কের এ সমাবেশে অন্তত ১৫ হাজার মানুষ অংশ নেয়। এতে অংশ নেন সঙ্গীত শিল্পী লিয়াম পাইন। স্টার ওয়ার্সখ্যাত অভিনেতা জর্জ বয়েগা এতে ভাষণ দেন। এদিকে হাইড পার্কে বিক্ষোভ সমাবেশ কাভার করতে গিয়ে এক উগ্রপন্থীর হাত থেকে রক্ষা পান অস্ট্রেলিয়ান টিভি চ্যানেল নাইন নিউজের ইউরোপ করেসপন্ডেন্ট সোফি ওয়ালেস।
×