ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সীমান্ত খুলে দেয়ায় পর্যটকদের আনাগোনা শুরু

ইতালিতে মৃত্যু কমে ৫৫

প্রকাশিত: ২১:০৮, ৪ জুন ২০২০

ইতালিতে মৃত্যু কমে ৫৫

করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুতে শীর্ষে থাকা ইউরোপের দেশ ইতালিতে মৃত্যু এবং আক্রান্ত উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। মঙ্গলবার দেশটিতে মাত্র ৫৫ জন এ রোগে মারা যায়। আর মাত্র ১৭৮ জন আক্রান্ত হয়। এসবের প্রেক্ষিতে বুধবার থেকে স্থল সীমান্ত খুলে দিয়েছে ইতালি। এখন থেকে ইউরোপের পর্যটকরা ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন ছাড়া সেদেশে প্রবেশ করতে পারবে। বুধবার সীমান্ত খুলে দেয়ার পরই দেশটিতে পর্যটক আসতে শুরু করেছে। খবর বিবিসি, এএফপি ও আলজাজিরা অনলাইনের। সোমবার ইতালির বেসামরিক সুরক্ষা সংস্থা এক বিবৃতিতে বলেছে, ফেব্রুয়ারির পর সোমবার সেদেশে সবচেয়ে কমসংখ্যক লোক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। পাশাপাশি দেশটিতে ক্রমশই করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। প্রতিদিনই উৎসাহব্যঞ্জক খবর পাওয়া যাচ্ছে। সরকারী হিসেবে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছে ১৭৮ জন। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ২ লাখ ৩৩ হাজার ১৯৭ জন। ইতালিতে প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসছে। শুক্রবার আক্রান্ত হয়েছে ৫১৬ জন, শনিবার ৪১৬ এবং রবিবার ৩৫৫ জন, সোমবার ১৭৮ জন। তুলনামূলকভাবে মৃত্যুর সংখ্যাও কমে এসেছে। মঙ্গলবার দেশটিতে মারা যায় মাত্র ৫৫ জন। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭৫ জনে। এছাড়া ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও অব্যাহতভাবে কমে যাচ্ছে। ইতালির লম্বার্ডিতে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সেখানে আক্রান্ত হয়েছে ৮৯ হাজার ১৮ জন এবং মারা গেছে ১৬ হাজার ১৩১ জন। এক কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ এলাকায় মঙ্গলবার মাত্র ৫০ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। মঙ্গলবার আক্রান্তের এ সংখ্যাকে বেশ উৎসাহব্যঞ্জক হিসেবেই ধরা হচ্ছে। এদিকে অর্থনীতির চাকা সচল করতে মে মাসের প্রথম থেকেই দেশটি ধীরে ধীরে লকডাউন শিথিল করতে শুরু করে। করোনাভাইরাসের অন্যতম হটস্পট স্পেনে গত ২৪ ঘণ্টায় কোন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। গত তিন মাসের মধ্যে সোমবার প্রথমবারের মতো মৃত্যুশূন্য থাকে স্পেন। সোমবার স্প্যানিশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র মুখপাত্র ও দেশটির কো-অর্ডিনেশন অব হেলথ এ্যালার্টস এ্যান্ড এমার্জেন্সিসের প্রধান ফার্নান্দো সিমন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ আমরা করোনাভাইরাসে মৃত্যুর কোন খবর পাইনি। তিনি আরও জানান, স্পেনে কোভিড-১৯ ভাইরাসে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। গত ৩ মার্চের পর থেকে স্পেনে করোনাভাইরাসে নতুন করে প্রতিদিন মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও সেখানে এই প্রথমবারের মতো মৃত্যুর সংখ্যা শূন্যের কোটায় নেমে ১৩ ফেব্রুয়ারির অবস্থায় ফিরে গেল। সোমবার প্রকাশিত মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মহামারী করোনাভাইরাসে বিশ্বে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম স্পেনে এ পর্যন্ত কোভিড-১৯ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ২৭ হাজার ১২৭ জনে এবং আক্রান্তের সংখ্যা মোট ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৩৮ জনে দাঁড়িয়েছে। সিমন জানান, স্পেন খুব দ্রুততার সঙ্গে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করে ফেলে। তবে তিনি গণসমাবেশ বিষয়ে জারি করা কঠোর বিধিনিষেধ পালনে ব্যর্থতার বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান শহরে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে প্রথম শনাক্ত হওয়ার ছয় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আর এই ভাইরাসে ৩ লাখ ২৮ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এ তথ্য জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারীতে এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৮৮টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে। উৎপত্তিস্থল চীনে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমে গেছে। যদিও ইতোমধ্যে ৮৩ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার মানুষের। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে ১ এপ্রিল এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দশ লাখে পৌঁছায়। এরপর প্রতি দুই সপ্তাহেই নতুন আক্রান্তের সংখ্যা দশ লাখ করে বেড়েছে। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের চেয়ে বেশি করোনা শনাক্ত হয়েছে লাতিন আমেরিকায়। এর বেশিরভাগই আক্রান্ত হয়েছে ব্রাজিলে। সম্প্রতি জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যকে ছাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পর তৃতীয় সর্বোচ্চ করোনা আক্রান্তের দেশে পরিণত হয়েছে ব্রাজিল। করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও অনেক দেশই স্কুল ও কর্মক্ষেত্র খুলে দিয়ে লকডাউন শিথিলের পথে হাঁটছে।
×