ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টার্গেট কিলিংয়ে পিস্তল ও রিভলভার ব্যবহারের পরিকল্পনা

প্রত্যন্ত কোন এলাকা দখলে নিয়ে ‘মুসলিম ভিলেজ’ গড়তে চায় আনসার

প্রকাশিত: ২২:৩৪, ৩ জুন ২০২০

প্রত্যন্ত কোন এলাকা দখলে নিয়ে ‘মুসলিম ভিলেজ’ গড়তে চায় আনসার

গাফফার খান চৌধুরী ॥ দীর্ঘ সময় পর আবারও নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসার আল ইসলাম তাদের কর্মকা- শুরু করেছে। জঙ্গী সংগঠনটি আগের মতো চাকু দিয়ে টার্গেট কিলিং করার পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে। টার্গেট কিলিং সহজ করতে তারা পিস্তল ও রিভলবার এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে। সে মোতাবেক তারা অস্ত্রগোলাবারুদ সংগ্রহ করছে। পাশাপাশি নিজেদের প্রস্তুতও করছে। জঙ্গী সংগঠনটির একটি গ্রুপের আট জন গ্রেফতার হওয়ার পর এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ইতোমধ্যেই চার জন আদালতে ১৮৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। সর্বশেষ গ্রেফতার জঙ্গী সংগঠনটির সুইসাইডাল স্কোয়াডের এক সদস্যকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে র‌্যাব-২ এর স্পেশালাইজড ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানির কমান্ডার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী জনকণ্ঠকে জানান, জঙ্গী সংগঠনটি পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও সিরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে থাকা বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের মতো দেশের প্রত্যন্ত একটি এলাকা দখলে নিতে চায়। এজন্য তাদের পছন্দ প্রত্যন্ত অঞ্চলের বা কোন গভীর পাহাড়ের কোন গ্রাম। সেই গ্রামের দখল নিয়ে তারা সেখানে মুসলিম ভিলেজ গড়ে তুলবে। যে গ্রাম মানবসৃষ্ট কোন আইন দ্বারা পরিচালিত হবে না। ইসলামী আইন দ্বারা পরিচালিত হবে। যেটিকে মুসলিম ভিলেজ নাম দেয়া হবে। সেখানে শক্ত অবস্থান নিয়ে তারা দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের জন্য সশস্ত্র জিহাদ করে যাবে। চলতি বছরের শুরু থেকেই তারা এমন তৎপরতা চালাচ্ছিল। করোনাভাইরাসের কারণে বাহ্যিক কাজে কিছুটা ভাটা পড়েছিল। দেশ স্বাভাবিক হওয়ার পর আবার তারা এমন তৎপরতা শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই একটি গ্রুপের দশ জন গ্রেফতার হয়েছে। সর্বশেষ গত ৩০ মে পাবনা থেকে গ্রেফতার হওয়ার আব্দুল্লাহ আকাশ। তাকে সাত দিনের রিমান্ডে এনে ঢাকায় জিজ্ঞাসাবাদ করছে র‌্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকেই জঙ্গী সংগঠনটি এমন তৎপরতা শুরু করে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে মুন্সীগঞ্জ, সিলেট ও পাবনায় ধারাবাহিক অভিযান চালানো হয়। ২৯ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জ থেকে তিন জনকে বিস্ফোরকসহ গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্য মোতাবেক পাবনা থেকে আনসার আল ইসলামের আত্মঘাতী স্কোয়াডের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়। সবমিলিয়ে মোট দশ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সংক্রান্ত মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসতে চাঞ্চল্যকর সব পিলে চমকানোর মতো কাহিনী। এই পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মূলত আট জন হার্ডলাইনে রয়েছে। বাকি দুই জন জঙ্গীবাদের প্রাথমিক পর্যায়ের। গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য মোতাবেক চলতি বছরের ৩০ মার্চ খোদ রাজধানীর উত্তরায় অভিযান চালানো হয়। প্রায় চার ঘণ্টার টানা অভিযানের পর শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার করা সম্ভব হয় জঙ্গী সংগঠনটির অর্থদাতা মুহিব মুশফিক খানকে। তার কাছে জঙ্গীদের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত নির্দেশিকা ও সহযোগী জঙ্গী সদস্যদের অনলাইনের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের সুস্পষ্ট তথ্য। তার কাছে বহু ইলেকট্রনিক ডিভাইস পাওয়া যায়। যার মধ্যে বিস্ফোরকও ছিল। এসব ডিভাইস প্রযুক্তিগত নানা কাজে ব্যবহৃত হতো। তারা ফেসবুক, হোয়াটস্এ্যাপ, টেলিগ্রাম ও মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটানোর পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে নানা পরামর্শ করত। গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য মোতাবেক সর্বশেষ গত ৩০ মে পাবনা শহরের বিসিক শিল্প এলাকা সংলগ্ন কলাবাগান মাঠপাড়া এলাকা থেকে আব্দুল্লাহ আকাশ (২৫) নামে জঙ্গী সংগঠনটির এক সদস্যকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়। এই জঙ্গীর বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দীন ফারুকী জানান, জঙ্গী সংগঠনটি বিশে^র অন্যান্য দেশের মতো বিশেষ করে পাকিস্তান, আফগানিস্তান বা অন্যান্য যেসব দেশে জঙ্গী সংগঠনের বিস্তর এলাকাজুড়ে আধিপত্য আছে, তাদের মতো বাংলাদেশেও তাদের একটি গ্রাম টার্গেট ছিল। তারা দেশের যেকোন একটি জায়গাকে মুসলিম ভিলেজ হিসেবে গড়ে তুলবে। ওই গ্রাম থেকেই তারা তাদের কর্মকা- চালাবে। সেখানে কথিত মানুষের তৈরি নীতি নয়, আল্লাহর আইনে সবকিছু চলবে। এমনকি কেউ সরকারকে কোন খাজনা দিবে না। মুসলিম ভিলেজ গড়ে তুলতে তারা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের কোমলমতি যুবকদের টার্গেট করে উদ্বুদ্ধ করে আসছিল। মুসলিম ভিলেজ প্রতিষ্ঠা করতে গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতারের আশঙ্কা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে তারা অস্ত্রগোলাবারুদের মজুদ গড়ে তুলছিল। এজন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক সংগ্রহ করছিল। তার কাছে আইইডি (ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বোমা তৈরির বিপুল সরঞ্জাম, জঙ্গীবাদী বই, পিডিএফ ডকুমেন্টস মিলে।
×