ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জীবন-জীবিকার লড়াই ॥ তালা খুলছে আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ৩১ মে ২০২০

জীবন-জীবিকার লড়াই ॥ তালা খুলছে আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া

বিভাষ বাড়ৈ/রহিম শেখ ॥ জীবন নাকি জীবিকা? বিশ্বজুড়ে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো হাঁটছে দুটোকে প্রাধান্য দিয়েই। বিশ্বের বড় বড় দেশ অর্থনীতি বাঁচাতে জারি হওয়া লকডাউন শিথিল করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনাভাইরাসের হুমকি বিশ্বের ঘাড়ে আরও দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যমান থাকবে। দ্বিমুখী এই সঙ্কট মোকাবেলায় আজ থেকে জীবন ও জীবিকার যুদ্ধে নামছে বাংলাদেশও। সরকারী-বেসরকারী সকল অফিস, শেয়ারবাজার, ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, আদালত, দোকানপাট, শপিংমল, ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু সীমিত আকারে চলবে আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত। আজ থেকে চলবে ট্রেন ও লঞ্চ। তবে আগামীকাল থেকে চলবে গণপরিবহন ও বিমানের অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট। তবে প্রতিটি স্তরের কার্যক্রম শুরু করতে মানতে হবে সরকার নির্ধারিত স্বাস্থ্যবিধি। সরকারী-বেসরকারী অফিসের জন্য যেমন দেয়া হয়েছে ১৮ দফা গাইডলাইন, তেমনি গণপরিবহনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান চালু করতেও মানতে হবে শর্ত। এদিকে ভাইরাস সংক্রমণের দিক থেকে সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে সব খোলার সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী মনে করছেন দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সরকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য ১৮ নির্দেশনা ॥ ছোঁয়াচে রোগ কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ রোধে টানা ৬৬ দিনের ছুটির পর রবিবার অফিস খোলার আগে এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষায় সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ১৮টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শনিবার এক সরকারী তথ্যবিবরণীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এসব কারিগরি নির্দেশনা তুলে তা পালন করতে বলা হয়েছে। সরকারী ভাষ্যে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সমন্বিত কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ‘কোভিড-১৯-এর সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের কারিগরি নির্দেশনা’ প্রণয়ন করেছে। এই নির্দেশনায় বিভিন্ন ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের জন্য করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সরকারী প্রতিষ্ঠানে পালনীয় নির্দেশনাগুলোÑ ১. কাজ আবার শুরু করার আগে মাস্ক, তরল হ্যান্ড সোপ, জীবাণুনাশক, স্পর্শবিহীন থার্মোমিটার এবং অন্যান্য মহামারী প্রতিরোধক জিনিসপত্র সরবরাহ করতে হবে এবং একটা জরুরী কর্মপরিকল্পনা রাখতে হবে এবং তার জবাবদিহি বাস্তবায়ন করতে হবে। ২. প্রতিদিন কাজের আগে ও পরে কর্মীদের শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করুন। যাদের জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট এবং অন্যান্য উপসর্গগুলো দেখা দেবে তাদের স্ক্রিনিংয়ের জন্য সময়মতো চিকিৎসা করা উচিত। ৩. ইউনিটের স্টাফ এবং বাইরে থেকে যারা আসবে তাদের শরীরের তাপমাত্রা মাপতে হবে। যাদের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকবে না তাদের ইউনিটে ঢুকতে দেয়া যাবে না। ৪. অফিস, ক্যান্টিন ও টয়লেটে ভেন্টিলেশন সুবিধা বাড়াতে হবে। সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এয়ার কন্ডিশনারের স্বাভাবিক ক্রিয়াকে নিশ্চিত করুন, বিশুদ্ধ বাতাস বৃদ্ধি করুন এবং সকল এয়ার সিস্টেমের ফিরে আসা বাতাসকে বন্ধ রাখুন। ৫. ক্যান্টিন, ডরমিটরি, টয়লেটসহ অন্যান্য জায়গা পরিষ্কার রাখতে হবে এবং জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। ৬. সীমিত পরিসরে অর্থাৎ একবারে কমসংখ্যক লোক কম সময়ে খাওয়া শেষ করবে এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে খাবার খেতে হবে। ৭. কাগজবিহীন ও সংস্পর্শবিহীন অফিস ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করতে হবে। ৮. ব্যক্তিগত মেলামেশা বা একত্র হওয়া কমাতে হবে এবং একত্র হতে হয় এমন কাজ যেমন মিটিং, ট্রেনিং এসব কাজ সীমিত করে ফেলতে হবে। ৯. অফিস, ক্যান্টিন, টয়লেটে হাত ধোয়ার জন্য সাবান অথবা জীবাণুনাশক সরবরাহ করতে হবে, যদি হাত ধোয়ার ব্যবস্থা না থাকে তাহলে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করতে হবে। ১০. কর্মচারীরা একে অপরের সংস্পর্শে আসার আগে মাস্ক পরবে। যখন হাঁচি অথবা কাশি দেবে তখন মুখ এবং নাক, কনুই অথবা টিস্যু দিয়ে ঢেকে নেবে। ব্যবহৃত টিস্যু ঢেকে ডাস্টবিনে ফেলবে। হাঁচি-কাশি শেষে তরল হ্যান্ড সোপ দিয়ে হাত ধুতে হবে। ১১. পোস্টার, সচেতনতামূলক ভিডিও এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দিয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে। ১২. জরুরী পৃথকীকরণ এলাকা স্থাপন করুন। যখন কেউ সন্দেহভাজন হবে, সময়মতো জরুরী স্থানে তাদের সাময়িকভাবে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো এবং চিকিৎসা করার ব্যবস্থা করুন। ১৩. যদি কোন এলাকাতে একটা কোভিড-১৯ কেইস পজিটিভ হয় তাহলে ওই এলাকার এয়ার কন্ডিশন সিডিসি’র গাইডলাইন অনুযায়ী জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে এবং কাজ পুনরায় শুরু করা যাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যগত পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থা বা হাইজিন নিশ্চিত করা যাবে। ১৪. নমনীয় কর্মঘণ্টা ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করতে হবে। ১৫. মানসিক ও মনঃসামাজিক বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ১৬. মোটিভেশনাল কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের আশ্বস্ত ও চাঙ্গা রাখতে হবে। ১৭. কর্মচারীদের কেউ অসুস্থ বোধ করলে বা কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হলে তার ও তার পরিবারের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলো মাথায় রেখে তাকে সরকারী বিধি মোতাবেক যথাসাধ্য সহায়তা দিতে হবে। ১৮. ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিতদের বীমা বা প্রণোদনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। গত ২৬ মার্চ থেকে চলা সাধারণ ছুটির মেয়াদ না বাড়িয়ে ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে অফিস খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই সময় স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরে অফিসে আসতে বলা হয়েছে। তবে বয়স্ক, অসুস্থ ও সন্তান সম্ভবাদের এ সময় অফিসে আসা মানা। করোনা সংক্রমণের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আক্রান্ত কিংবা মৃত দুই পরিসংখ্যানেই খুব খারাপ অবস্থানে যায়নি বাংলাদেশ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। দফায় দফায় সেই ছুটি ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সব মিলিয়ে টানা ৬৬ দিনের এই ছুটি শেষ হয়েছে শনিবার। এই সময়ে দেশের কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার কোন সরকারী হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি। তবে দিনে এই ক্ষতির পরিমাণ তিন হাজার ৩০০ কোটি টাকার কম নয় বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের গবেষক দলের হিসাবে, গত এক মাসেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর জনকণ্ঠকে বলেন, করোনাভাইরাস বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। অর্থনীতিতে এটা এখন দৃশ্যমান। আমাদের দেশে প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে বেশি হচ্ছে। কবে এই পরিস্থিতি ঠিক হবে আমরা জানি না। কেউই এটা বলতে পারবে না কবে ঠিক হবে। যখন ঠিক হবে তখন ডাটা দিয়ে বোঝানো যাবে ক্ষতির পরিমাণ কত হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে করোনার প্রভাবের শুরুটা দেরিতে হয়েছে। তাই আমাদের শেষটাও দেরিতে হবে। এজন্য খুব সতর্কতার সঙ্গে এগোতে হবে। গত বৃহস্পতিবার দেয়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে, আজ থেকে সব সরকারী, আধাসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারী অফিস নিজ ব্যবস্থাপনায় সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে। এক্ষেত্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত তরার জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে জারি করা ১৮ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। গণপরিবহন চলার বিষয়ে আদেশে বলা হয়, সীমিত পরিসরে নির্দিষ্টসংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত বিধি নিশ্চিত করে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচল করতে পারে। তবে সব অবস্থায় মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারি করা নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। আজ থেকে সীমিত পরিসরে চলবে ট্রেন ও লঞ্চ ॥ করোনা মহামারী পরিস্থিতির কারণে ৬৭ দিন যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার পর আজ থেকে সীমিত পরিসরে আন্তঃনগর ট্রেন চালাতে যাচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। যার টিকেট পাওয়া যাবে শুধু অনলাইনে। রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, এই দফায় শুধু আন্তঃনগর ট্রেনগুলো ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলবে, তবে ভাড়া বাড়বে না। শনিবার রেলভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান তিনি। রেলমন্ত্রী বলেন, ৮ জোড়া ট্রেন পূর্বের শিডিউল অনুযায়ী যাত্রা শুরু করবে এবং ৩ জুন থেকে আরও ১১ জোড়া ট্রেন যাত্রা শুরু করবে। মোট ৩৮টি ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে। এদিকে যাত্রীদের শারীরিক দূরত্ব রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারাদেশে রবিবার থেকে লঞ্চ চালাতে পারবেন মালিকরা, তবে আপাতত তাদের ভাড়া বাড়ানোর অনুমতি দেয়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআইডব্লিউটিএ। বাসে স্বাস্থ্যবিধি, তবে ভাড়া ৮০% বাড়ানোর সুপারিশ ॥ করোনাভাইরাস সঙ্কটে বাস চালুর পর ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বিআরটিএর গণপরিবহন ভাড়া নির্ধারণ কমিটি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে প্রতিটি বাসে ৫০ ভাগ সিট খালি থাকবে বলে ভাড়া সমন্বয় করতেই এই নতুন ভাড়ার সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান ইউসুব আলী মোল্লা। তিনি বলেন, প্রত্যেক বাসে ৫০ শতাংশ সিট খালি রাখতে হবে। সেই ক্ষেত্রে বাস মালিকরা লোকসানে পড়বেন। আমরা শনিবার বিআরটিএর গণপরিবহন ভাড়া নির্ধারণ কমিটির সকলের উপস্থিতিতে ৮০ শতাংশ ভাড়া নেয়ার জন্য সুপারিশ করেছি। অর্থাৎ ৫০ ভাগ যাত্রীর কাছ থেকে ৮০ ভাগ ভাড়া নেয়া হবে। ভাড়া এত বাড়ানোর সুপারিশের ব্যাখ্যায় ইউসুব আলী বলেন, ৪০ সিটের বাসে ২০ জন যাত্রী থাকলে খালি সিটের ভাড়া যাত্রীদেরই দিতে হবে। সেই হিসাবে ভাড়া ৮০ শতাংশ করা হচ্ছে। আর এই বৃদ্ধি ভাড়া করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি বিবেচনায় বাড়ানো হয়েছে। এটা সকল যাত্রী ও মালিককে মেনে নিতে হবে। কাল থেকে চলবে বিমান ॥ এছাড়া বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সব স্বাস্থ্যবিধি ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নীতিমালা অনুসরণ করে আগামীকাল সোমবার থেকে সীমিত পরিসরে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও সৈয়দপুর রুটে বিমানের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চলাচল করবে। অন্যদিকে চলাফেরায় বিধিনিষেধ আগের মতোই থাকছে। আগের মতোই রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা সবাইকে ঘরে থাকতে হবে। এই সময় জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না। হাট-বাজার এবং দোকানপাটগুলোতে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বেচাবিক্রি চলবে। সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত ও অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আপাতত বন্ধই থাকবে। স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম, চালু হচ্ছে শেয়ারবাজার ॥ করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে কারণে সীমিত ব্যাংকিং কার্যক্রম আবার স্বাভাবিক হচ্ছে। আজ রবিবার থেকে স্বাভাবিক সময়সূচী অনুযায়ী ব্যাংক চলবে। লেনদেন শুরু হবে সকাল ১০টায়। চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। আর লেনদেন পরবর্তী ব্যাংকের আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য শাখা ও প্রধান কার্যালয় বিকেল ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এদিকে মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে দুই মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকার পর আজ থেকে দেশের শেয়ারবাজারে আবার লেনদেন চালুর অনুমতি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। চরম উদ্বেগ, শঙ্কা, সুপারিশ ॥ করোনাভাইরাসের ছোবলের মধ্যে এভাবে সব খোলার সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী মনে করছেন দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এমনকি উদ্বিগ্ন খোদ দেশের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সরকার গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি। আপত্তি এসেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকেও। ফলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। করোনাভাইরাস অতি সংক্রামক হওয়ায় এই রোগ প্রতিরোধের বিধি-বিধান যথাযথভাবে প্রয়োগ ছাড়া লকডাউন শিথিল করা হলে রোগ সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ইতোমধ্যেই জাতীয় কারিগরি কমিটি এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। কমিটি বলেছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা বলে, রোগ সংক্রমণের হার সুনির্দিষ্টভাবে না কমার আগে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চালু করলে রোগের হার বাড়ার আশঙ্কা থাকে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রযোজ্য বিধি-বিধান সঠিক পদ্ধতিতে প্রয়োগ না করে শিথিল করা হলে রোগীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর প্রচ- চাপ সৃষ্টি হতে পারে। কেবল কমিটি-ই নয়। খোদ প্রধানমন্ত্রী ষেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ বলেছেন, করোনার বিপদ এখন শুধু ঢাকার মধ্যে সীমিত নেই। সারাদেশে এটা ছড়িয়ে পড়েছে। সারাদেশেই করোনা এখন আমাদের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকার বাইরে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি অত্যন্ত আতঙ্কের এবং এর ফলে মহাবিপদ সৃষ্টি হতে পারে। তিনি বলেন, নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং সরকার ও জনগণের মধ্যে সমন্বয় করে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। না হলে আমরা এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবো। ইতোমধ্যে সরকারী হাসপাতালগুলো পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। যে বেসরকারী হাসপাতালগুলো সরকার নিয়েছিল, সেখানেও এখন জায়গা দেয়া যাচ্ছে না। যদি রোগী এভাবে বাড়তে থাকে তাহলে হাসপাতালে জায়গা দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে, যেটি আমাদের জন্য আরেকটি বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল্লাহ বলেছেন, করোনা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে সরকারকে সিরিয়াসলি ভাবতে হবে। এভাবে যদি রোগী বাড়তে থাকে তাহলে লকডাউনের সরকারী সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হবে। প্রয়োজনে সেনা নামাতে হবে। কার্ফু দিয়ে জনগণকে লকডাউন মানতে বাধ্য করতে হবে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং স্বাচিপের সভাপতি ও করোনা মোকাবেলায় জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ডাঃ ইকবাল আর্সলান। তারা দুজনেই বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এর ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপরে প্রচ- চাপ পড়বে এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়তে পারে। তারা মনে করছেন, এখন ব্যক্তিগত সতর্কতাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। আপনার সুরক্ষা আপনার হাতে। অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী মনে করেন যে, আগামী ৫-৬ দিন বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এই ৫-৬ দিন যদি বাংলাদেশে সংক্রমণের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে তাহলে পরিস্থিতি অনেক খারাপ হবে। তিনি বলেন যে, তখন কার্ফু দিয়েও লাভ হবে না। কারণ ইতোমধ্যে যেসব লোক ঢাকার বাইরে গিয়েছিল তারা ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে এবং এর ফলে সামাজিক সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। এখন আমাদের আগামী ৫-৬টা দিন দেখতে হবে যে পরিস্থিতি কোনদিকে যায়। তবে এই খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তটি আরেকটু বিলম্বিত হতে পারত।
×