ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আল বিদা মাহে রমজান

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ২০ মে ২০২০

আল বিদা মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আজ পবিত্র লাইলাতুল কদর। আমরা জানি রমজানের লাইলাতুল কদর মুসলিম জীবনে এক অতি পুণ্যময় ও অনন্য রজনী। যে পাঁচটি রাতকে মহান আল্লাহ পাক অফুরন্ত বরকত প্রদান করেছেন, তন্মধ্যে লাইলাতুল কদর এক বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। বিশেষত এ রজনী হাজার মাসের চেয়েও উত্তম বলে সুরা কদরে উল্লেখ করা হয়েছে। এ রাতের ফজিলত ও মহাত্ম্য সম্বন্ধে হযরত সালমান হতে একটি তাৎপর্যপূর্ণ হাদিস বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, মহানবী (স) শাবান মাসের সমাপনী দিবসে আমাদের নসিহত করেন এবং বলতেন, তোমাদের মাথার ওপর এমন এক মর্যাদাশালী মোবারক মাস ছায়াপাত করেছে যার মাঝে রয়েছে ‘লাইলাতুল কদর’ মানে একটি রাত-যা হাজার মাস হতেও উত্তম। আজ দিনের অবসানে আমাদের সামনে সে মহিমান্বিত রজনী। হযরত ইবনে আবী হাতিম সূত্র পরস্পরায় হযরত মুজাহিদ (রহ) থেকে উদ্ধৃত করেন যে, একবার নবী-ই-দোজাহান (স) সাহাবাদের কাছে বনি ইসরাঈলের এক দরবেশের কথা বলেন। উক্ত দরবেশ একাধারে এক হাজার মাস পর্যন্ত আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রস্তুত ছিলেন। -এ ঘটনা শুনে উপস্থিত মুসলমানরা বিস্ময় প্রকাশ করেন। এমনিভাবে হযরত জরীর ও হযরত মুজাহিদ (রহ)’র উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বনি ইসরাঈল যুগে জনৈক দরবেশ হাজার মাস ধরে সারাটা রাত ইবাদত বন্দেগি করতেন আর পুরোদিন লড়তেন শত্রুদের মোকাবেলায়। হযরত ইবনে আবী হাতিমের অপর এক বর্ণনামতে: বনি ইসরাঈলের মধ্যে ৪ জন ইবাদত গুজার ব্যক্তি ছিলেন। তারা প্রত্যেকে ৮০ বছর যাবত আল্লাহর ইবাদতে সর্বক্ষণ মশগুল থাকতেন। উক্ত ৪ জন আবিদ হলেন হযরত আইয়্যুব, জাকারিয়া, হিজকিল ও ইউশা বিন নুন। এ ঘটনা শোনার পর উপস্থিত সাহাবাগণ বিস্মিত হয়ে পড়েন। ঠিক তখনই হযরত জিবরাঈল (আ) এসে আরজ করেনÑ হে নবীকূল সম্রাট মুহম্মদ (স)! আপনার উম্মতরা বনি ইসরাঈলের আবিদদের ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, কিন্তু মহান প্রভু আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা সেটা অপেক্ষা উত্তম বস্তু আপনাকে দান করেছেন। তখন সুরা কদর নাজিল হয়। হযরত আবু হুরায়রা (রা) হুজুর (স.)’র উদ্ধৃতি দিয়ে আরও বলেন- যে ব্যক্তি পূর্ণ ইমান ও আত্মশুদ্ধির মনোভাব নিয়ে এ রাতে ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকেন আল্লাহ তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন। (তাফসীর ইবনে কাসীর পৃ: ৫১৩)। বলাবাহুল্য, আল্লাহর অফুরন্ত রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের বারিধারায় সিক্ত এ মহান রজনীতে যখন তামাম সৃষ্টিকূল করুণাময় আল্লাহর দয়া ও মেহেরবানিতে অবগাহন করে, তখনও এক শ্রেণীর মানুষের ভাগ্য থাকে অপ্রশস্ত বঞ্চিত তারা দুনিয়া ও আখিরাতের পাথেয় অর্জনে। ওসব দুর্ভাগা লোকদের তালিকায় রয়েছে বে-রোজাদার, গণক, ঈর্ষাপরায়ন, দাবা-পাশার খেলোয়াড়, অন্যায়ভাবে শুল্ক আদায়কারী, পরোক্ষ নিন্দাকারী, কৃপন, না হক হত্যাকারী, গায়ক, বাদক, রেখা টেনে অথবা ফলনামা দেখে ভাগ্য ও ভবিষ্যত নির্নীতকারী, মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান, পর-স্ত্রীগামী, গর্বসহকারে পায়ের গিরার নিচে কাপড় পড়নেওয়ালা, শত্রু“ভাবাপন্ন লোক, অত্যাচারী শাসক ও তাদের হোমরা চোমরা, ধোঁকাবাজ ব্যবসায়ী এ ধরনের আরও যারা মারাত্মক গুনাহের কাজে লিপ্ত। অবশ্য তওবাসহকারে এসব ঘৃণিত পথ ও অভ্যাস থেকে বাকি জীবন সরে দাঁড়াবার ও পরিত্যাগ করার প্রশ্রিুতিবদ্ধ হয়ে আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে ক্ষমা প্রার্থনাপূর্বক কান্নাকাটি ও মোনাজাত করলে দয়াময় আল্লাহ তাদের প্রতি দয়াপরবশ হন। বর্ণিত আছে হযরত আয়েশা (রা) আরজ করলেন হে আল্লাহর রাসুল (স) কদর রজনীতে কিভাবে দোয়া করব? প্রতিউত্তরে হযরত রাসুলুল্লাহ (স) এভাবে দোয়ার প্রশিক্ষণ দিলেন (আরবি আলাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন- তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফুআন্নী-হে মহান আল্লাহ! নিশ্চই আপনি ক্ষমাশীল আপনি ক্ষমা করাকে পছন্দ করেন, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ আমাদের এখানে একটা জিনিস লক্ষণীয় যে, আল্লাহর নবী (স) হযরত আয়েশা (রা) কে কত সুন্দর মোনাজাত শিক্ষা দিয়েছেন। সম্পত্তি নয়, টাকা-পয়সা নয়, শুধু ক্ষমা চাই। কারণ আখিরাতের ব্যাপার এতো জটিল ও কঠিন যে, সেখানে ক্ষমা ব্যতীত কোন গতি নেই। যদি আল্লাহর আদালতে ক্ষমা না মিলে এবং আযাবে গ্রেফতার হতে হয় তবে দুনিয়ার সকল উপকরণ, ধন-দৌলত এবং ভোগ-বিলাসিতা কোন কাজে আসবে না। আল্লাহ পাক আমাদের এ মহামূল্যবান রজনীতে পূর্ণ গাম্ভীর্যসহকারে ইবাদত-বন্দেগি করার তৌফিক দিন।
×