ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্মলেন্দু গুণের কবিতার পান্ডুলিপি নিলামে

প্রকাশিত: ২২:০৯, ৯ মে ২০২০

নির্মলেন্দু গুণের কবিতার পান্ডুলিপি নিলামে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কবি নির্মলেন্দু গুণের ‘তোমার চোখ এতো লাল কেন’ কবিতার পা-ুলিপি বিক্রি হলো ৯৯ হাজার টাকায়। করেনাদুর্গত মানুষের সাহায্যার্থে টাকাটি ব্যায় হবে। কবি নির্মলেন্দু গুণ জনকণ্ঠকে বলেন, আমিতো করোনায় দুর্গত মানুষের সাহায্যের জন্য নিজেও একটা তহবিল করছিলাম। সেই তহবিলে অনেকেই টাকা দিয়েছিল। এক লাখ পঁচিশ হাজার টাকা পাইছিলাম। সেই টাকা আমার কাশবন, কবিতাকুঞ্জ এর আসপাশের লোক, আমার নিজের এলাকায় প্রায় দুইশ পরিবারকে সাহায্য করেছি। আমার পান্ডুলিপি নিলামের ব্যাপারটা আমার মাথায় আসে নাই। দুটি সংগঠন ওরা আমার মেয়ের মাধ্যমে আমার কাছথেকে একটা পান্ডুলিপি চাইল। আমার হাতের লেখা একটা কবিতার পান্ডুলিপি তারা নিলামে তুলবে। তারা মনে করল যে এরথেকে টাকা সংগ্রহ করা সম্ভব। কিন্তু আমার মাথার মধ্যে এটা আসে নাই। ওরা আরও অনেকের কাছথেকে টাকা নিয়েছে। আমার ‘তোমার চোখ এতো লাল কেন’ কবিতাটা ওদেরকে দিলাম। আমি খুশি হয়েছি যে আমার একটা কবিতার পা-ুলিপি টাকায় বিক্রি হলো এবং এই টাকাটা করোনা দুর্গত মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হবে জেনে। এ ব্যাপারে নির্মলেন্দু গুণ তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, করোনাদুর্গত মানুষদের সাহায্য করার উদ্দেশ্যে একটি মানবিক ত্রাণ সংগঠন অন লাইনে নিলামে বিক্রি করার জন্য আমার কাছে আমার একটি হস্তলিখিত কবিতার পান্ডুলিপি চেয়েছিলো। প্রথমে আমি রাজী হইনি। ভেবেছিলাম যদি আমার কষ্ট করে কাগজের ওপর কলম দিয়ে লেখা কবিতাটি বিক্রি না হয়, কেউ যদি কবিতাটি কিনতে আগ্রহী না হয়? তবে তো আমার জন্য তা খুবই লজ্জার বিষয় হবে। আমি মেয়েকে বললাম, আমার কবিতা তো সাকিবের ব্যাট নয়। ঐ সংগঠনের পক্ষ নিয়ে আমার কন্যা আমাকে বললো, তুমি দাও। বিক্রি না হলে না হবে। এখন তুমি যদি না দাও, তো নিলামে বিক্রি করে ফান্ড তৈরি করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণকারীরা ভাববে, তুমি ঐ সংগঠনের সঙ্গে সহযোগিতা করলে না। হ্যাঁ, তা ভাবতে পারে। এই ভেবে আমি অনেক কষ্ট করে মোটা কাগজের ওপর একটু মোটা শিসের কলম দিয়ে আমার একটি মাঝারি আকৃতির জনপ্রিয় কবিতা লিখে-কবিতাটির ছবি তুলে আমার মেয়ের কাছে পাঠিয়ে দিলাম। আমার মেয়ে দ্রুতই আমার হস্তলিখিত ঐ কবিতার পান্ডুলিপির একটি ফটো-কপি উদ্যোক্তাদের কাছে ইমেইলে পাঠিয়ে দিলো। ফেসবুকের চেয়ে ইমেইলে ছবির রেজুলুশান ভালো হয়। ঐ দিনই সমাজের বিভিন্ন সেলিব্রেটির কাছ থেকে পাওয়া সামগ্রীসমূহ নিলামে তোলার শেষ দিন ছিলো। রাত বারোটার দিকে আমার কন্যা আমাকে ফোন করে বললো, বাবা, তোমার কবিতাটির জন্য তুমি কতো টাকা আশা করেছিলে? আমি বললাম, এক লাখ টাকা। তাই? তুমি তো দেখছি খুবই দূরদর্শী। তোমার আশা তো প্রায়ই পূর্ণ হয়েছে। আমি বললাম, তবে প্রায়ই বলছো কেন? এক লাখ হয়নি? মেয়ে বললো, না, তোমার কবিতাটি বিক্রি হয়েছে ৯৯ হাজার টাকায়। আমি খুব প্রাণ খুলে হাসলাম। বুঝলাম, যিনি কবিতাটি কিনেছেন, তাঁর হয়তো শূণ্য সংখ্যাটি নিয়ে এলার্জি আছে। তাই ১ লাখের পরিবর্তে তিনি আমার কবিতাটির দাম হাঁকিয়েছেন ৯৯ হাজার টাকা। আমি জানতে চাইলাম-তোমার উদ্যোক্তা বন্ধুরা কি খুশি? মেয়ে বললো, হ্যাঁ, ওরা খুব খুশিমনেই আমাকে এই খবরটা দিলো। বাংলা কবিতার নিলাম কি এটাই প্রথম। পেয়েম ভিন কী বলে? জানাযায়, অকশন ফর এ্যাকশন ও প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নিলামের এ পান্ডুলিপিটি কিনেছেন গুলশানের এক গৃহিনী মিসেস সায়মা মাসরুর।
×