ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এ মাসে ঝড় ও বজ্রপাতের আশঙ্কা

করোনা ভীতির মধ্যে চোখ রাঙ্গাচ্ছে কালবৈশাখী

প্রকাশিত: ০৯:৪৬, ৮ এপ্রিল ২০২০

করোনা ভীতির মধ্যে চোখ রাঙ্গাচ্ছে কালবৈশাখী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা সংক্রমণের কারণে একটি ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে। এর মধ্যেই এবার চোখ রাঙ্গাচ্ছে কাল বৈশাখী। শুরু হয়েছে এপ্রিল মাস। আর কয়েকদিন পর শুরু হচ্ছে বাংলা নববর্ষ বৈশাখ। আর এই মাসেই একাধিক কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে এপ্রিল জুড়ে কালবৈশাখীর শঙ্কা থাকবে। সঙ্গে বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি। এছাড়া এই মাসে তাপমাত্র বেড়ে গিয়ে তীব্র দাবদাহের সৃষ্টি করতে পারে। সাগরে নিম্নচাপ ও বজ্রঝড় এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বন্যা হতে পারে এই এপ্রিলেই। ইতোমধ্যে গত মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে দেশের ওপর দিয়ে বইছে মৃদু তাপপ্রবাহ। দেশের কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসের ওপরে উঠে যাচ্ছে। আবহাওয়া অফিসের দেয়া তথ্য মতে ১০ এপ্রিলের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি, বজ্রঝড় ও শিলাবৃষ্টি হতে পারে। তখন তাপমাত্রা একটু কমে যেতে পারে। তবে বৈশাখের শুরুতে তাপমাত্রা আবারও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। এপ্রিলের সাগরে নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে শিলাবৃষ্টি ঝড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে বেশ কিছু জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা উঠে যাচ্ছে ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসের ওপরে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে- রাঙ্গামাটি, সিলেট, রাজশাহী ও পাবনা অঞ্চলসহ ঢাকা ও খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে এবং বিস্তার লাভ করতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতরের জ্যেষ্ঠ আহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, ১০ তারিখ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হবে। এরপর বৈশাখের শুরুর পর তাপমাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে। আবহাওয়াবিদরা জানান, আবহমান কাল থেকেই বৈশাখের শুরুতে তাপমাত্রা রুক্ষ আচরণ শুরু করে। এই সময় মূলত দেখা দেয় কালবৈশাখী ঝড়। একটানা চলে মে মাস পর্যন্ত। সম্প্রতি সময়ে এই কালবৈশাখীর সঙ্গে শুরু হয়েছে ভয়াবহ বজ্রপাত। এর পরিমাণ এত বেড়ে গেছে যে দুর্যোগ মন্ত্রণাল থেকে গত ২০১৬ সাল থেকে বজ্রপাত প্রাকৃতিক তালিকায় স্থান দিয়েছে। তারা বলেন, কালবৈশাখী ঝড় এবং বজ্রপাত দেশে নতুন নয়। এই সময়ে কালবৈশাখী এবং বজ্রপাতের জন্য যে মেঘ সবচেয়ে বেশি দায়ী তা হলো ‘কিউমুলো নিমবাস মেঘ। চৈত্র ও বৈশাখ মাসে এই মেঘ থেকেই সাধারণত কালবৈশাখী ও বজ্রপাতের সৃষ্টি হয়। এ সময় উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশে হঠাৎ এই ধরনের মেঘ জমে মুহূর্তের মধ্যে চারদিকে ছড়িয়ে যায়। এই সময় আকাশে এ ধরনের মেঘ জমলে কালবৈশাখী ও বজ্রপাতের আশঙ্কা শতভাগ বেড়ে যায়। বর্তমানে বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে বাংলাদেশে চৈত্র-বৈশাখ মাসে কিউমুলো নিমবাস মেঘ বেশি জমছে। তারা বলেন, ষড়ঋতুর এই দেশে বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাস ঝড় বাদলের সময় হিসেবে পরিচিত। এ সময়ে আকাশে মেঘ জমলেই কালবৈশাখী বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। সঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত বেশি হয়ে থাকে। মেঘ সৃষ্টি হলে বজ্রপাতের ঘটনা প্রকৃতির একটি স্বাভাবিক নিয়ম। হয়ত পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে এ নিয়ম চলে আসছে। আবহাওয়াবিদদের মতে বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে গ্রীষ্মকাল সময়টাতে বজ্রপাতের মাত্রা অনেক বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু সম্প্রতিক বছরগুলোতে এই বজ্রপাত বিধ্বংসীরূপ নিয়েছে। ঋতু বৈচিত্র্যের ধরন অনুযায়ী চৈত্র বৈশাখ মাসে এ দেশে সবচেয়ে বেশি কালবৈশাখী এবং বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে থাকে। প্রতিবছর প্রায় ২শ’র বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে বজ্রপাতের কারণে। এবার এর প্রবণতা বাড়তে পারে। ফলে এখন থেকে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। আকাশে কালবৈশাখী মেঘ জমলে নিরাপদে চলে যেতে হবে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে সারাদেশে কালবৈখাশীর আবহাওয়া বিরাজ করছে। ফলে এই এপ্রিলে তীব্র তাপপ্রবাহ, বজ্রঝড়, নি¤œচাপ এবং আকস্মিক বন্যারও আভাস দিয়েছে তারা। এপ্রিলের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এপ্রিলে পশ্চিমাঞ্চলে ১টি তীব্র তাপপ্রবাহ (৪০ ডিগ্রীর বেশি তাপমাত্রা) এবং অন্যত্র ১ থেকে ২টি মৃদু (৩৬-৩৮ ডিগ্রী তাপমাত্রা)/মাঝারি (৩৮-৪০ ডিগ্রী তাপমাত্রা) তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। বর্তমানে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি নি¤œচাপ সৃষ্টি হতে পারে। যার মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এ মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে দুই থেকে তিনদিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ মাঝারি/তীব্র কালবৈশাখী ঝড় এবং দেশের অন্যত্র চার থেকে ছয়দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ হাল্কা/মাঝারি ধরনের কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় বজ্রঝড় দেখা দিচ্ছে। অন্যদিকে এপ্রিলে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন ভারতীয় অংশে ভারি বৃষ্টিপাতজনিত কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কতিপয় স্থানে আকস্মিক বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও আবহাওয়া পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে।
×