ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শহর বন্দর গ্রামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি

করোনায় অপরাধীরাও রাস্তায় নামার সাহস পাচ্ছে না

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ৭ এপ্রিল ২০২০

করোনায় অপরাধীরাও রাস্তায় নামার সাহস পাচ্ছে না

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের অপরাধ জগতেও প্রভাব ফেলেছে করোনাভাইরাস। অপরাধ সংঘটনের হার প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে বলে পুলিশের দাবি। শুধু রাজধানী ঢাকা বা শহরেই নয়, সারাদেশের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রামে-গঞ্জেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির সুবাতাস বইছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জনসমাগম ঠেকাতে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাস্তায় যেমন মানুষের পদচারণা কমে গেছে তেমনই অপরাধীরাও রাস্তায় নামার সাহস পাচ্ছে না। রাজধানী ঢাকা তো প্রায় ফাঁকা। এমনকি শহর-বন্দর তো বটেই, গ্রামে-গঞ্জে, হাট-বাজারের চিত্রও একই। করোনাভাইরাসের প্রভাবে অপরাধ জগতের অপরাধ না থাকায় শান্তি ও স্বস্তির নিঃশ^াস বয়ে এনেছে জনজীবনে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের ৬৪০ থানাসহ রাজধানী ঢাকার ৫০ থানার প্রতিদিনের অপরাধের চিত্র রেকর্ড করা হয়। প্রতিদিন গড়ে মামলা রেকর্ড করা হয়ে আসছে ৪ শতাধিক। কিন্তু করোনাভাইরাস ছড়ানোর পর থেকে এখন পর্যন্ত থানায় মামলা বা জিডি রেকর্ড করার সংখ্যা একেবারেই নগণ্য বা হাতে গোনা। তবে মাঝে মধ্যে মাদক বা বিচ্ছিন্ন দু’একটি অপরাধের ঘটনা ছাড়া অপরাধ সংঘটনের হার প্রায় শূন্যের কোটায়। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন ব্যস্ত সময় পার করছে করোনাভাইরাসের সময়ে যাতে মানুষজন ঘরের বাইরে না আসে সেটার দায়িত্ব পালনে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের ৬৪০টি থানায় প্রতি বছর গড়ে এক লাখ ৪০ হাজার অপরাধের ঘটনা রেকর্ড করা হয়ে থাকে। তাতে প্রতিদিনে গড়ে প্রায় চার শ’টি অপরাধের ঘটনা রেকর্ড হতো। আর এই অপরাধের ঘটনা সাধারণত গ্রামাঞ্চলের থেকে শহরে বেশি হতো। কিন্তু করোনা ভইরাসের কারণে গত মাস থেকে তা মারাত্মক হারে হ্রাস পেয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন থানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই একটি থানায় ছোটখাটো অভিযোগ পড়েছে। তাছাড়া বড় কোন ঘটনার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এখন মানুষেরা নিজের বাসায় অবস্থান করছেন। তাদের চলাফেরাও নিয়ন্ত্রিত, সে কারণে হয়তো অপরাধ কম হচ্ছে। অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমান সময়ে থানায় অভিযোগ আসার হার কমে গেছে। কারণ করোনার কারণে দেশে গণজমায়েত, সভা-সমাবেশ বন্ধ। চলছে না গণপরিবহনও। এমনকি সুপার মার্কেট ও বিনোদন কেন্দ্রের মতো প্রচুর জনসমাগমের সম্ভাব্য স্থানগুলোও বন্ধ রয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পকেটমার, ছিনতাইকারী ও মলম-পার্টির সদস্যরা বিভিন্নভাবে সক্রিয় রয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, বড় কোন উৎসব যেমন ঈদ, পূজার সময় রাজধানী ঢাকা ফাঁকা হলে চুরি বা ছিনতাইয়ের সুযোগ খুঁজে অপরাধীরা। ফাঁকা বাসা বাড়িতে চুরি ডাকাতি নিয়ে আতঙ্কে থাকেন সবাই। তখন ফাঁকা রাস্তায় বেড়ে যায় ছিনতাই, ডাকাতিসহ অপরাধের ঘটনাও। বড় রাস্তা থেকে অলিগলি, সবখানে সেনাবাহিনী, পুলিশ সদস্যদের টহলে নিরাপত্তা নিয়ে স্বস্তিতে সবাই। বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে অপরাধ ঠেকাতে কাজ করছেন জনপ্রতিনিধিরা। এতে অপরাধের ঘটনায় মানুষজন এখন আর উদ্বিগ্ন নয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একজন কর্মকর্তা বলেন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ঘটনা যাতে না বাড়ে সেদিক খেয়াল রেখে পুলিশ ও জনগণের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি করোনা মোকাবেলায় সকলকে সচেতন করা হচ্ছে। রাতে বিভিন্ন এলাকায় টহল দেয়া হচ্ছে। করোনা সংক্রমণের কারণে অপরাধ শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। কেননা অপরাধীরা যেমন রাস্তায় বের হচ্ছে না তেমনই মানুষজন ঘরে অবস্থান করছেন, এতে অপরাধ কমে এসেছে। পর্যাপ্ত পুলিশী নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ চেকপোস্ট রয়েছে। অপরাধ দমনের চেয়ে এই মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর মুখ্য উদ্দেশ্য করোনা পরিস্থিতি। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলেছেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। ঠিক তেমনই এখন আবার করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশের মানুষ এখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এই ধরনের সিরিয়াস ইস্যুতে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলে কোথাও কেউ কোন প্রকার অপরাধ করার সুযোগ পায় না। আর অপরাধ করার মতো যে সব ইস্যু থাকে তার সবই এখন অনুপস্থিত। তবে এখন দেশে যারা অভাবী রয়েছেন তাদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। চাহিদার চেয়ে বেশিই সহযোগিতা পাচ্ছেন। এখন অপরাধীদের অপরাধ করার মতো জায়গা নেই। যখন অপরাধীরাও এই সহযোগিতা পাবে, তখন অপরাধের ঘটনা ঘটবে না। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ হয়তো একদিন কমে আসবে তখন দরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের জমানো টাকা শেষ হয়ে আসলে তারা পথে নামবেন। কাজ না পেয়ে অনেকে অপরাধে জড়ানোর শঙ্কাও থাকছে। করোনাভাইরাস আতঙ্কের এই সময়ে অনেক মানুষ যদি বেকার হয়ে পড়ে, তাহলে ভাইরাস আতঙ্ক শেষ হওয়ার পর অপরাধ পুনরায় বৃদ্ধি পাবে। দরিদ্র মানুষের জমানো টাকাগুলো যখন শেষ হবে, তখন তারা আয় রোজগারের জন্য বেপরোয়া হয়ে পড়বেন। আর তখনই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাওয়ার আশঙ্কা আছে বলে অপরাধ বিশেষজ্ঞদের দাবি।
×