ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী ১৫ দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ॥ স্বাস্থ্যমন্ত্রী

করোনা ছড়িয়েছে ১৫ জেলায়, আরও তিন মৃত্যু

প্রকাশিত: ১০:৩৪, ৭ এপ্রিল ২০২০

করোনা ছড়িয়েছে ১৫ জেলায়, আরও তিন মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে আরও তিনজন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে এবং নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩৫ জন। এ নিয়ে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা ১২ এবং মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১২৩ জনে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতেই ৬৪ জন। সারাদেশে ১৫ জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন মোট ৩৩ জন। দেশে করোনায় মৃতের হার ১০ শতাংশ এবং সুস্থ হওয়ার হার ২৭ শতাংশ। বর্তমানে করোনা সন্দেহে আইসোলেশনে রয়েছে ১০৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৬৮টি। সোমবার দুপুরে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত সার্বিক পরিস্থিতি জানাতে স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত নিয়মিত অনলাইন সংবাদ সম্মেলেন এ তথ্য জানান জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ, অধিদফতরের পরিচালক(এমআইএস) ডাঃ হাবিবুর রহমান। অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা নতুন শনাক্তের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ এবং ৫ জন নারী। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৪১-৫০ বছর বয়সী ১১ জন এবং ২১-৩০ বছর বয়সী আছেন ৬ জন। সারাদেশ শনাক্ত ১২৩ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ ঢাকা শহরে ৬৪ জন। এছাড়া নারায়ণগঞ্জে ২৩ জন এবং এরপরে মাদারীপুরে করোনায় শনাক্তের সংখ্যা বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের ১২ জন শনাক্ত হয়েছে। তিনি আরও জানান, এক সপ্তাহ আগেই দুদক পরিচালকের করোনা শনাক্ত করা হয়। এরপর তার সংস্পর্শে যারা এসেছিলেন তাদের কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়। বাকি দু’জনকে হাসপাতালে আনার পর মারা যান। অধ্যাপক ডাঃ সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, নারায়ণগঞ্জে ক্লাস্টার হিসেবে চিহ্নিত করেছি, সেখানে বেশকিছু কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে ওখান থেকে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে না পড়ে। পরবর্তীতে রয়েছে মাদারীপুরের এলাকা। নারায়ণগঞ্জের যে দু’জন মারা গিয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গেই তাদের কন্টাক্ট ট্রেসিং করেছে আইইডিসিআর। এ পর্যন্ত তাদের কন্টাক্টে যতজন পাওয়া গিয়েছে তাদের সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, পুরো নারায়ণগঞ্জকে হটস্পট হিসেবে আইডেন্টিফাই করে সেখানে কোয়ারেন্টাইন কার্যক্রমকে আরও বেশি শক্তিশালী করার জন্য আমরা বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। ওখানে প্রশাসন আমাদের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। রোগী যখন চিহ্নিত হয় তখন থেকেই আমরা কোয়ারেন্টাইন কার্যক্রম শুরু করি। রোগী জীবিত না মৃত সেটা কিন্তু বিবেচনার বিষয় নয়। কারণ কোয়ারেন্টাইন করা হয় যাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে। ক্লাস্টার এলাকার বিষয়ে ফ্লোরা বলেন, যদি কোথাও একই জায়গায় কম দূরত্বের মধ্যে একাধিক রোগী থাকে তখনই আমরা সেটাকে ক্লাস্টার হিসেবে চিহ্নিত করে তদন্ত করে থাকি। মোট আক্রান্তের মধ্যে ৬৪ জনই ঢাকা মহানগরীর- স্বাস্থ্য অধিদফতর ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, সারাদেশে ১২৩ জন ব্যক্তি শরীরে করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৪ জনই ঢাকা মহানগরীর। এর পরের অবস্থানে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ। সেখানে শনাক্তের সংখ্যা ২৩ জন। আর সারাদেশে ১৫ জেলার করোনা রোগী পাওয়া গেছ। সোমবার কোভিড-১৯ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, এখন পর্যন্ত মোট নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ৪০১১। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৬৮ নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ জনে শনাক্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, ১২৩ জনের মধ্যে এই মুহূর্তে আইইডিসিআর’র কাছে তথ্য আছে ১২১ জনে। এর মধ্যে ঢাকায় ৬৪, নারায়ণগঞ্জে ২৩, মাদারীপুরে ১১, চট্টগ্রামে ২, কুমিল্লায় ১, গাইবান্ধায় ৫, চুয়াডাঙ্গায় ১, গাজীপুরে ১, জামালপুর ৩, শরীয়তপুরে ১, কক্সবাজারে ১, নরসিংদীতে ১, মৌলভীবাজারে ১, সিলেটে ১, রংপুরে ১ এবং ঢাকার মহানগরীর বাইরে চার উপজেলায় ৪ জন করোনায় আক্রান্ত। সবমিলিয়ে এখন বাংলাদেশে ১৫টি জেলায় করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। তবে যে জায়গায় একাধিক রোগী আছে সেটাকে ক্লাস্টার বলা হয়। ঢাকা মহানগরীর, গাইবান্ধা, নারায়ণগঞ্জ ও মাদারীপুর এই এলাকাকে ক্লাস্টার বলা হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দেয়া করোনা বিষয়ে শনাক্ত এবং মৃত্যু সম্পর্কিত তথ্যের সঙ্গে আইইডিসিআরের দেয়া তথ্যের মিল না থাকায় ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সে মুহূর্তে যে তথ্য দিয়েছিলেন তখন তা ঠিক ছিল। ওখানে একটি প্রোগ্রাম চলছিল। আমিও ছিলাম। তথ্যটি মন্ত্রীকে আমি দিয়েছি। এক-দেড় ঘণ্টা আগে সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী আমি মন্ত্রীকে এই তথ্য দিয়েছিলাম। মিটিংয়ে বক্তৃতার সময় আইইডিসিআরে ফোন দিয়ে জানতে চাওয়া হয়। সে সময় একটি নামের বানানের ভুল থাকার কারণেই এই ধরনের ভুলটা হয়। পরে যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে জানা যায়, এই দুইটা নামই এক ব্যক্তির ছিল। এখন যে তথ্যটা আমরা দিয়েছি, এটা যাচাই-বাছাই শেষে দেয়া হয়েছে। এটাই সঠিক। আগের তথ্যটাও আইইডিসিআর দিয়েছিল এবং এই তথ্যটাও আইইডিসিআর দিয়েছে। এতে বিভ্রান্তি হওয়ার কিছুই নেই। আমাদের এই বক্তব্যের পরে সব বিভ্রান্তি অবসান ঘটবে বলে মনে করি। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ॥ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনাভাইরাস বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে তার বিস্তার বৃদ্ধি করছে। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিন আমাদের সবার জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনভাবেই আগামী ১৫ দিন আমরা যেন কেউই অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হই। আর একান্তই যদি জরুরী কাজে বের হতেই হয় তাহলে মুখে মাস্ক ব্যবহার না করে কেউই ঘরের বাইরে বের না হই সে বিষয়ে আমাদের সবারই সচেতন থাকতে হবে। সোমবার দুপুরে মহাখালীতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স এ্যান্ড সার্জন্স (বিসিপিএস) এর অডিটরিয়ামে সরকারী ও বেসরকারী স্বাস্থ্য সংস্থা ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত বিষয়ে জরুরী বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আলী নূর, বিএমএ সভাপতি ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ ইকবাল আর্সলান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডাঃ এম এ আজিজসহ বিভিন্ন অধিদফতরের মহাপরিচালক, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা মোকাবেলায় একটি জাতীয় কমিটির গঠন করা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে আমাকে জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। কিন্তু কখন কারখানা খুলবে, মসজিদ খোলা থাকবে কি না- এসব বিষয়ে জাতীয় কমিটির সঙ্গে আলোচনা হয় না। স্বাস্থ্য বিষয় ছাড়া আমার সঙ্গে কোন কিছু আলোচনা হয় না। আমি সাংবাদিকদের জবাব দিতে পারি না। পোশাক কারখানা খোলা রাখা প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ বিষয়গুলো দেখবে। আমরা যদি ইচ্ছে করে সংক্রমণ বাড়াই, সেটা তো বলতে হবে। আগামীতে যাতে এমনটা না হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, মানিকগঞ্জে একটি মাদ্রাসায় একসঙ্গে ২৮ জন ওঠাবসা করেছিল। তাদের কয়েকজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সব জায়গায় এভাবে ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতালে জায়গা দিতে পারব না। এটা তো রোগ সেটা বুঝতে হবে। রোগ কাউকে ছাড়বে না। বাংলাদেশ মেডিসিন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আহমেদুল কবীর জানান, দেশে সামনে কঠিন সময় আসছে। এখনই পুরো দেশে লকডাউন করা জরুরী। এখনই পুরো দেশ লকডাউন না করা হলে এই ভাইরাস আগামী ১০ দিনে ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে বলে মনে করেন অধ্যাপক আহমেদুল কবীর। এদিকে, ঘরে বসে রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে টেলি মেডিসিন সেবা চালু করেছে ঢাকার শ্যামলীর সরকারী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৬৮টি- সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের তথ্য উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপচিালক(প্রশাসন) অধ্যাপক ডাঃ নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় আইইডিসিআর ল্যাবে ১৩৮টি, আইপিএইচ ১৬৮টি, আইসিডিডিআর’বি ল্যাবে ১০টি, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১২টি, বিএসএমএমইউ ল্যাবে ২৪টি, আইদেশী, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ৮টি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন ল্যাবে ২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। আর ঢাকার বাইরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিকস এ্যান্ড ইনফরমেশন ডিজিজেস ল্যাবে ২৩টি, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে ৩৩টি, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে ৪০টি এবং কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজে ১০টি করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এভাবে গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৪৬৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ পর্যন্ত মোট ৩৬১০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক। এদিকে, ঘরে বসে রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে টেলি মেডিসিন সেবা চালু করেছে ঢাকার শ্যামলীর সরকারী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সোমবার এই সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ডাক্তারদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে অনেকেই হাসপাতালে আসতে পারছে না। তাদের চিকিৎসাসেবা দিতে এই টেলি মেডিসিন সেবা অনেক কাজে আসবে। ঘরে বসেই সেবা পাবে রোগীরা। হাসপাতালটির উপ-পরিচালক আবু রায়হান বলেন, করোনাভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সেবা কার্যক্রম অনেক রোগীর উপকারে আসবে।
×