ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানীতে পানি সঙ্কট

মোবাইল রিচার্জ পরিষেবা সঙ্কুচিত, ব্যাংকিং স্থবির

প্রকাশিত: ১০:০০, ৩০ মার্চ ২০২০

 মোবাইল রিচার্জ পরিষেবা সঙ্কুচিত, ব্যাংকিং স্থবির

ফিরোজ মান্না ॥ করোনা পরিস্থিতির কারণে জরুরী সেবাগুলোও ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হতে শুরু করেছে। ঢাকা ওয়াসার পানির পাম্প কর্মীর অভাবে অনেক বন্ধ রয়েছে। এ কারণে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পানি সঙ্কট তৈরি হয়েছে। মোবাইল রিচার্জ সেবাও সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। এমন কি বিকাশ, রকেট, নগদসহ মোবাইল ব্যাংকিংও স্থবির হয়ে পাড়েছে। টাকা পাঠানো ও উঠানোও প্রায় বন্ধ। এসব সেবা দাতা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা অনেকেই গ্রামের বাড়ি অথবা হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। বর্তমানে সারাদেশে ৪০ শতাংশ মোবাইল কল ও ৬০ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেড়েছে। এই সেবাতেও চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা। মোবাইল ফোন কোম্পানি হিসাব অনুযায়ী ১০ দিনের ছুটিতে এক কোটির বেশি মানুষ গ্রামে চলে গেছেন। জরুরী সেবার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে মোবাইল অপারেটরদের সহায়তা কামনা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো ২৪ মার্চ নোটিসে বলা হয়েছে, জরুরী পরিষেবাদী যেমন বিদ্যুত, জল, গ্যাস, ফায়ার সার্ভিস, পরিষ্কারের কাজ, টেলিফোন এবং ইন্টারনেট, খাবারের দোকান, ওষুধের দোকান, মোবাইল রিচার্জ ইত্যাদি পরিষেবা ঘোষিত ছুটি বা শাটডাউনের আওতামুক্ত থাকবে। তারা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে-অফিস খোলা রাখতে পারবে। করোনাভাইরাস দ্রুত বিস্তার রোধ করতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি বা বন্ধকালে মোবাইল পরিষেবা যেন নিরবচ্ছিন্নভাবে দেয়া সম্ভব হয় তার জন্য মোবাইল সেবাদাতারা সরকার তথা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সহায়তা চেয়েছে। তবে দেশের অনেক এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবাদাতাদের কর্মীরা নেটওয়ার্ক পরিচালন, রিচার্জ ও বিতরণ এবং গ্রাহকসেবা (কাস্টমার সার্ভিস) দানকালে আইন প্রয়োগাগকারী সংস্থার কাছে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। এমন মোবাইল রিচার্জ এজেন্টগুলো দোকান খোলা রাখতে পারছেন না। পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের উচিত মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোবাইল ফোন ‘লকডাউনের’ আওতার মধ্যে নেই। তাদের কার্যক্রম যাতে কোন প্রকার বিঘœ না ঘটে সে দিকটি নিশ্চিত করা। মোবাইল সেবাদাতারা কোনরকম বাধাবিঘœ ছাড়াই দেশব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন তাদের পরিষেবাগুলো চালিয়ে যেতে পারে এবং তাদের অফিস খুলে রাখতে পারে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জনকণ্ঠকে বলেন, মোবাইল ও ইন্টারনেট একটি জরুরী সার্ভিস। এই সেবা ‘লকডাউনের’ আওতামুক্ত। ঢাকা শহর ছেড়ে এক কোটি ১০ লাখের বেশি মোবাইল ব্যবহারকারী। এর মধ্যে বিদেশ থেকে আসা সাড়ে ৬ লাখ মানুষের মধ্যে ৫ লাখের বেশি মানুষ এখন গ্রামে অবস্থান করছে। মোবাইল অপারেটররা শহরকেন্দ্রিক হওয়ায় অনেক গ্রামে নেটওয়ার্ক প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ তারা গ্রামের দিকে বিটিএস (বেজ স্টেশন) তৈরি করেনি। এই মুহূর্তে গ্রামে ব্যান্ডউইথের পরিমাণ বেশি প্রয়োজন। কিন্তু অপারেটররা সেই সেবা দিতে পারছেন না। টেলিটকের মাধ্যমে গ্রামে সেবা পৌঁছে দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। যখনই কোন প্রাকৃতি দুর্যোগ আসে তখন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান গুলোই সব বড় ভূমিকা রাখে। যারা ব্যবসা করতে এসেছে তারা তেমন দায়বদ্ধ থাকে না। যদিও লাইসেন্স নেয়ার সময় তারাও এ সব শর্তপূরণ করেই লাইসেন্স নিয়েছে। মোবাইল ফোন অপারেটরদের তথ্যের ভিত্তিতে ন্যাশনাল টেলিকম মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) জানিয়েছে, গত ২৩ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস সংবাদ সম্মেলন করে জানান, করোনাভাইরাসের কারণে ২৬ মার্চ থেকে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারী ছুটি ঘোষণা করেন। এই ছুটি ঘোষণার পরপরই মানুষ গ্রামে ছুটতে শুরু করে। বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে ভিড় লেগে যায়। মহাসড়কে যানজটও হয়। করোনা ঠেকাতে সঙ্গনিরোধের যে পরিকল্পনা, তা মুখ থুবড়ে পড়ে। হিতে বিপরিত হয়েছে। ছুটি ঘোষণার বিষয়টি ছিল নিজ বাসাতে অবস্থান করা। কিন্তু মানুষ লম্বা ছুটি পেয়ে গ্রামের বাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় বেড়াতে গিয়েছেন পরিবার পারিজন নিয়ে। এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, করোনা প্রতিরোধে ছুটি ঘোষণা বুমেরাং হয়ে দেখা দিয়েছে। শহরাঞ্চলের চেয়ে এখন গ্রামাঞ্চলে করোনা ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ও সংক্রমণশীল লোকজন সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। বিদেশ ফেরত মানুষজন স্বস্থ্যবিধি না মেনে চলায় করোনার বিস্তার আরও ভয়ঙ্কর হতে পারে। এনটিএমসির জানিয়েছে, এক কোটি ফোন গ্রাহক গ্রামের বাড়ি চলে গিয়ে থাকলে তাদের সঙ্গে পরিবার পরিজনসহ লোক সংখ্যা আরও বেশি হবে। বিপুলসংখ্যক মানুষের মধ্যে কারও যদি করোনাভাইরাস থেকে থাকে, তাহলে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। এদিকে সারাদেশে কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে পুলিশ ও তিন হাজারের বেশি সেনাসদস্য মাঠে নেমেছে। তাদের সঙ্গে আছে নৌ ও বিমানবাহিনী। এ সময় দায়িত্বশীল আচরণ করার জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী সব পুলিশ কর্মকর্তার কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর খাদ্য সহায়তা প্রদান অন্যদিকে করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী মানবিক সহায়তা হিসেবে বিমান বাহিনীর সব ঘাঁটি ও পাশর্^বর্তী এলাকায় নিম্ন আয়ের জনগণকে চাল, ডাল, পেয়াজ, সাবান, ফলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিতরণ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ায় দেশে এই ভাইরাসের ঝুঁকি বিবেচনায় সরকার সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করেছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাতীয় যেকোন ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের নির্দেশনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে সহায়তা প্রদান করে আসছে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ কর্তৃক করোনাভাইরাস প্রতিরোধকল্পে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদানের লক্ষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর পাশাপাশি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীও জরুরী বিমান পরিবহন এবং মেডিক্যাল ইভাকোয়েশন (এমইডিইভিএসি) সহায়তা প্রদান করছে। এরই ধারাবাহিকতায়, করোনাভাইরাসের কারণে দেশের এই অবস্থাতেও রাঙ্গামাটির সাজেক ইউনিয়নের শেয়ালদহে হামে আক্রান্ত ৫ শিশুকে উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারের মাধ্যমে তাদেরকে চট্টগ্রামে আনা হয়। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পরিচালকের পক্ষে সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ রেজা উল-করিম শাম্মী জানান, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী করোনাভাইরাস প্রতিরোধকল্পে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রকাশিত নীতিমালা অনুসরণ করে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরই অংশ হিসেবে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রত্যেকটি ঘাঁটিতে ‘করোনা সমন্বয় ও মনিটরিং সেল’ স্থাপন করা হয়েছে। চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের লক্ষে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে। যারা যেকোন প্রয়োজনে সশস্ত্র বাহিনীর মেডিক্যাল টিমের সঙ্গে সমন্বিতভাবে সেবা প্রদান করবে। ইতোমধ্যে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রভোস্ট পেশার বিমান সেনারা ঢাকার হাজী ক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইনে রাখা বিদেশ হতে আগত যাত্রীদের নিরাপত্তা বিধান করছেন। মাঠপর্যায়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্যগণকে বিভিন্ন জায়গায় মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও, বিমানবাহিনী তাদের নিজস্ব এলাকায় জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ, বিমানবাহিনী সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টাইন ও চিকিৎসা বহরগুলোতে আইসোলেশন ওয়ার্ড নিশ্চিতকরণসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। তদপরি, বিমানবাহিনী কর্তৃপক্ষ তাদের সদস্যদের সতর্কতা অবলম্বন, তাদের করণীয় ও বর্জনীয়সহ সব দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে।
×