ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিদেশ ফেরতদের এখনও কোয়ারেন্টাইনে আনা সম্ভব হয়নি

করোনায় আরও একজনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ১১:৩৯, ২৫ মার্চ ২০২০

করোনায় আরও একজনের মৃত্যু

নিখিল মানখিন ॥ দেশে আরও এক করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে এবং নতুন করে আরও সাতজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৪০ জনে এবং মৃতের সংখ্যা ৪। দেশে মৃত্যুর হার ১০ শতাংশ। সকল বিদেশ ফেরতকে এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে আনা সম্ভব হয়নি। সরকারী বেসরকারী অনেক হাসপাতাল, ক্লিনিক ও থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিরুদ্ধে সর্দি-কাশি ও জ্বরের কথা শুনলেই রোগী ফিরিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার বিকেলে কক্সবাজারে চিকিৎসাধীন আইইডিসিআর দ্বারা শনাক্তকৃত আরেক করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। হটলাইনে প্রতি সেকেন্ডে একটি করোনা সংক্রান্ত কল আসছে। করোনায় প্রতিনিয়ত পাল্টে যাচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রার দৃশ্যপট। গত ২৪ ঘণ্টায় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসমূহে ২৮৩ জন, সমুদ্রবন্দর সমূহে ২৪৬ জন, স্থলবন্দরসমূহে ২৭৭৯ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। করোনা আক্রান্ত সন্দেহে আইসোলেশনে রয়েছে ৪০ জন। আগামী ৪ঠা এপ্রিল পর্যন্ত দেড় সপ্তাহ করোনা প্রতিরোধে বাংলাদেশের জন্য ‘ঝুঁকিপূর্ণ সময়’ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, পহেলা মার্চ থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত দেশে এসেও কোয়ারেন্টাইনের বাইরে থাকা এবং তাদের সংস্পর্শে যাওয়া লোকজনকে মাথায় রেখেই নিশ্চিদ্র করোনা প্রতিরোধ কার্যক্রম গড়ে তুলছে সরকার। এ সকল বিদেশ ফেরত লোকজন করোনার বাহক হলে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুযায়ী আগামী দেড় সপ্তাহের মধ্যেই দেশের করোনা পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসবে। বাউফল ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে এখানে ২৫ বছরের এক যুবককে মঙ্গলবার রাত ১০টায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। যুবকের বাড়ি নাজিরপুর ইউনিয়নের নিমদি গ্রামে। তিনি ৬ দিন আগে ঢাকা থেকে বাড়ি আসেন। এরপর তিনি গায়ে জ্বর, কাশি ও মাথা ব্যথায় আক্রান্ত হন। সোমবার সকালে ওই অবস্থায় তিনি দাশপাড়ায় তার শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে যান। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে মঙ্গলবার সকালে তাকে বাউফল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসক ডাঃ আক্তারুজ্জামান জানান, যুবক হাসপাতালে আসার পর তাকে দেখে করোনা আক্রান্ত বলে মনে হয়েছে। তখন তার গায়ে ১০৩ জ্বর ছিল। সঙ্গে কাশি আর প্রচ- মাথাব্যথা। করোনায় প্রতিনিয়ত পাল্টে যাচ্ছে দেশের দৃশ্যপট করোনাভাইরাসের ভয়ানক থাবায় পড়েছে বিশ্ব। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর দিন দিন এ ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯ এবং মারা গেছেন চারজন। করোনা প্রতিরোধে সরকারী নির্দেশনার পাশাপাশি মানুষের জীবনযাত্রা ও অভ্যাসেও বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। করোনার বিস্তার রোধে এরই মধ্যে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে সভা-সমাবেশ ও গণজমায়েতের ওপর। চারটি দেশ ও অঞ্চল ছাড়া সব দেশ থেকেই যাত্রী আসা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আইইডিসিআর’র ব্রিফিং করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার অনলাইন লাইভ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে সরকারের রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। দেশের সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, সর্বশেষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে যিনি মারা গেছেন তিনি দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এবং তার বয়স ৭০ বছরের বেশি। আর নতুন আক্রান্তদের একজনের ভ্রমণের ইতিহাস আছে। তিনি সৌদি আরব থেকে ওমরাহ করে এসেছেন। একজন অন্য রোগে আক্রান্ত হয়ে আগে থেকেই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। বাকি চারজন আগে আক্রান্ত হয়েছেন এমন কারও সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছেন। ডাঃ ফ্লোরা আরও বলেন, করোনা সন্দেহে এ পর্যন্ত আইইডিসিআরে ৭১২ জনের নমুনা পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৯২ জনের পরীক্ষা হয়েছে। এর মাঝে নতুন করে ছয়জনের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে; যার মধ্যে একজন মারা গেছেন। করোনা সন্দেহে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৪০ জনকে । প্রাতিষ্ঠানিক কোয়োরেন্টাইনে রয়েছেন ৪৬ জন। হটলাইনে প্রতি সেকেন্ডে একটি করোনা সংক্রান্ত কল আসছেÑ স্বাস্থ্য অধিদফতর মঙ্গলবার পাঠানো স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক(প্রশাসন) অধ্যাপক ডাঃ নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় স্বাস্থ্য বাতায়নে ৪২ হাজার ৫৭৮টি, ৩৩৩ নম্বরে ২৮৪৩টি ও আইইডিসিআর’র নম্বরে ২৭৩০টি অর্থাৎ মোট ৪৮ হাজার ১৫১টি করোনা সংক্রান্ত কল এসেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসমূহে ২৮৩ জন,সমুদ্রবন্দর সমূহে ২৪৬ জন, স্থলবন্দরসমূহে ২৭৭৯ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। সর্দি-কাশি ও জ্বরের কথা শুনলেই রোগী ফিরিয়ে দিচ্ছেন করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শে আশ্বস্ত হতে পারছে না সাধারণ মানুষ। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, সাধারণ সর্দি-কাশি ও জ্বরের কথা শুনলেই চিকিৎসাসেবা প্রদান তো দূরের কথা, মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অনেক চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী। তাদের অভিযোগ, অনেক হাসপাতালে পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) না থাকায় ডাক্তার এবং অন্য স্টাফরাও জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি রোগীদের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছেন। একজন চিকিৎসক ও কয়েকজন নার্স করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় এবং মৃত করোনা রোগীকে চিকিৎসা প্রদানের কারণে কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স কোয়ারেন্টাইনে থাকায় আতঙ্কের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। সোমবার বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) যৌথ সংবাদ সম্মেলন ডেকে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য চিকিৎসাকর্মীদের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। তারা বলেন, আমরা অবগত আছি যে, করোনাভাইরাসে জাতি আজ দিশেহারা, আতঙ্কগ্রস্ত। স্বাস্থ্যকর্মীদেরও পরিবার পরিজন, আতœীয়-স্বজন সবই রয়েছে। অন্যান্য সাধারণ পরিবারের থেকেও স্বাস্থ্যকর্মীদের পরিবারবর্গ তাদের পরিবারের অর্ন্তগত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে অধিক উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত কেননা প্রতিটি স্বাস্থ্যকর্মীই এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসছেন এবং নিজে সংক্রমিত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। আমরা পেশায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী, আমাদের অভিভাবকগণ নিশ্চিত ঝুঁকি জেনেও প্রতিনিয়ত আমাদের এই পেশায় কাজ করার উৎসাহ জুগিয়ে যাচ্ছেন। রোগীরা আমাদের সম্পদ, সেই সম্পদ আগলে রাখার দায়িত্ব আমাদের। রোগীরা ভাল না থাকলে, বেঁচে না থাকলে সমাজে বা পেশায় আমাদের উপস্থিতিও ম্লান হয়ে যাবে। আমরা সংশ্লিষ্ট সবার কাছে স্বাস্থ্য সেবা কর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষার বিষয়ে বিশেষ নজর দেবার আহ্বান জানান বিএমএ এবং স্বাচিপ নেতৃবৃন্দ। কিন্তু এই আহ্বানের কথা অবগত হলেও অপর্যাপ্ত চিকিৎসা সুরক্ষা উপকরণের কথা তুলে ধরছেন অনেক চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য চিকিৎসাকর্মীরা। আইইডিসিআর দ্বারা শনাক্তকৃত আরেক করোনা রোগীর মৃত্যু কক্সবাজারে স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার থেকে জানান, আইইডিসিআর দ্বারা শনাক্তকৃত আরেক করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে কক্সবাজারে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আইইডিসিআর’ এর দৈনিক প্রেস ব্রিফিংয়ের পর মঙ্গলবার বিকেলে এক মহিলা করোনা রোগীর মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের ১০ চিকিৎসকসহ মোট ২১ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। সেখানে ৮ জন নার্স ও ৩ জন ক্লিনার রয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করে জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার মোহাম্মদ শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী বলেন, এর আগে মুসলিমা খাতুন (৭০) নামে এক মহিলার করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। তিনি চকরিয়া খুটাখালী দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা মরহুম রশিদ আহমদের স্ত্রী। সৌদি আরব ফেরত কক্সবাজারে প্রথম করোনাভাইরাস জীবাণু আক্রান্ত রোগী মুসলিমা খাতুনের পরিবারের সবাইকে হোম কোয়ারেন্টাইরে রাখা হয়েছে। জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানিয়েছেন, মোসলিমা খাতুনের রোগের লক্ষণে করোনাভাইরাস মনে হওয়ায় তার শরীরের স্যাম্পল পরীক্ষার জন্য ঢাকার আইইডিসিআর এর ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল। মঙ্গলবার দুপুরে তার রিপোর্ট পাঠানো হয়। সেখানে তার রিপোর্টে করোনাভাইরাস জীবাণু পজিটিভ পাওয়া যায়।
×