ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আগামী প্রজন্ম গড়ার মহতী উদ্যোগ

প্রকাশিত: ১১:০৬, ১৫ মার্চ ২০২০

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আগামী প্রজন্ম গড়ার মহতী উদ্যোগ

হারেজুজ্জামান হারেজ ॥ মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করার মাধ্যমে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ এনে দিয়েছে লাখো মুক্তিযোদ্ধা। সেই মুক্তিযোদ্ধাদের ‘অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে অভিহিত করা এবং ভাতা প্রদান ছাড়া জীবিত অবস্থায় সারাদেশে তাদের দ্বারা পরিচালিত করার দৃশ্যমান কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়নি। সার মাধ্যমে গড়ে উঠতে পারে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আগামী প্রজন্ম। অথচ মৃত্যুজনিত কারণে প্রতিদিন কমছে মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা। এমন ভাবনা থেকেই মুক্তিযোদ্ধা দ্বারা পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করার যুগান্তকারী পরিকল্পনা করেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ‘বহুভাষী সাঁটলিপি একাডেমি’ (নট্রামস) প্রতিষ্ঠার কারিগর বগুড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর আব্দুল মান্নানের উদ্যোক্তা। বিগত ২০১৪ সালের দিকে এই পরিকল্পনা উপস্থাপনা করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে। পরিকল্পনার কারণ হিসেবে বলা হয়, সারাদেশে সেনা, বিজিবি, পুলিশ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এমনকি স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির দ্বারা পরিচালিত স্কুল-কলেজ নানা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সে কারণে মুক্তিযোদ্ধা দ্বারা পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়া প্রয়োজন। অনেক চুলচেরা যাচাই-বাছাইয়ের পর ‘মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল এ্যান্ড কলেজ’ প্রতিষ্ঠা বা স্থাপনের অনুমোদন মেলে ২০১৭ সালে। প্রথমে বগুড়া জেলার ১২ উপজেলাকে নিয়ে পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। বগুড়া জেলার ১২ উপজেলায় ‘মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল এ্যান্ড কলেজ’ নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। বর্তমানে স্কুল পর্যায়ে শিক্ষাদান কার্যক্রম চলছে। অচিরেই কলেজ পর্যায়ের কার্যক্রম শুরু করার তৎপরতা চলছে বলে জানিয়েছেন বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল এ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হক খন্দকার ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবির উদ্দিন খান। তারা বলেন, আমরা যা ধারণা করেছিলাম তার চেয়ে অনেক ভাল অবস্থা শুরুতেই। অনেকটা নামেই বাজিমাতের মতো। মুক্তিযোদ্ধা নাম এবং অভিজ্ঞ তরুণ শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের কথা জানতে পেরে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানোর ব্যাপক আগ্রহী। যা নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সাধারণত হয় না। জানা গেছে, বগুড়ার ১২ উপজেলায় গ্রহণ করা পাইলট প্রকল্প সফল হবার কারণে এবার খোদ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয়ের জেলা গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল এ্যান্ড কলেজ। আগামীতে সারাদেশের সব উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা দ্বারা পরিচালিত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে যুগান্তকারী এই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হয়ে লাভ করবে মুক্তিযুদ্ধের মতো আরেক অমরত্বগাঁথা। পাশাপাশি কর্মসংস্থান হবে শিক্ষিত লাখো বেকারের। শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের অগ্রাধিকার দেয়ার নীতিমালা মেনে চলা হচ্ছে। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে তৈরি হবে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক চেতনাধারী আগামী প্রজন্ম। আদমদীঘিসহ বগুড়ার ১২ উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩ বছর ধরে সফলভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বেতন-ভাতাদির কোন কূল-কিনারা না হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন শত শত শিক্ষক-কর্মচারী। তারা আশায় বুক বেঁধেছেন যে, মুজিববর্ষের মধ্যেই মানবতার মা বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতাদি প্রদানের সুব্যবস্থা করবেন।
×