ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দিল্লীর ঘটনা জাতীয় লজ্জার ॥ মনমোহন

প্রকাশিত: ১০:৪৫, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  দিল্লীর ঘটনা জাতীয় লজ্জার ॥ মনমোহন

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে (সিএএ) কেন্দ্র করে ভারতের দিল্লীতে চলমান সংঘর্ষে মুসলিমদের লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেছে আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক মার্কিন কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ)। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত সফরে থাকার সময়ই এ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লেও তিনি কোন কথা বলেননি। উল্টো ধর্মীয় স্বাধীনতার ব্যাপারে ভারতের প্রশংসা করে গেছেন। কিন্তু তিনি দেশে ফিরতেই দিল্লীর বিরুদ্ধে সরব হলো তার দেশের এ কমিশন। তবে মার্কিন সংস্থার এ অভিযোগকে খারিজ করে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য’ করা থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানায়। খবর আনন্দবাজার, এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া,সিএনএন ও ওয়ান ইন্ডিয়ার। গত সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরে আসার পর দিল্লীতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী ও সমর্থকদের সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ৩৫ জন নিহত হয়েছেন। ইউএসসিআইআরএফের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফর শেষ হতেই প্রাণঘাতী দাঙ্গায় সহিংস হয়ে উঠেছে উত্তর-পূর্ব দিল্লী। মুসলিমদের লক্ষ্য করে উন্মত্ত জনতা হামলা চালাচ্ছে বলে জানতে পেরেছি আমরা। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা জানতে পেরেছি দাঙ্গায় বেশ কিছু মসজিদ জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এলাকা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন বহু মুসলিম। গতবছর ডিসেম্বর থেকে দেশজুড়ে সিএএ বিরোধী আন্দোলন চলাকালে এ অশান্তির শুরু হয়েছে। ইউএসসিআইআরএফের কমিশনার অনুরিমা ভার্গব বলেন, দিল্লীজুড়ে যে নৃশংস এবং লাগামছাড়া হিংসা বেড়ে চলেছে, তা চলতে দেয়া যায় না। সব নাগরিককে নিরাপত্তা দিতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেয়া উচিত ভারত সরকারের। অথচ তার বদলে খবর আসছে, মুসলিমদের ওপর হিংসাত্মক হামলা রুখতে কোন ভূমিকাই নেয়নি দিল্লী পুলিশ। নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। যে মুহূর্তে ভারতে বেছে বেছে মুসলিমদের হামলার লক্ষ্য করা হচ্ছে, তাদের অধিকার ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, ঠিক সেই সময় এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগের। ইউএসসিআইআরএফের চেয়ারপার্সন টোনি পারকিন্স বলেন, দিল্লীতে যে সহিংসতা চলছে, যেভাবে মুসলিমদের ওপর হামলা এবং তাদের বাড়ি, দোকান এবং ধর্মীয় স্থান জ্বালিয়ে দেয়ার খবর আসছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগের। বার বার সতর্কবার্তা পাঠায় গোয়েন্দারা, আমলে নেয়নি দিল্লী পুলিশ সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে (সিএএ) কেন্দ্র করে দিল্লীতে চলমান সংঘর্ষের আগেই দিল্লীর পুলিশকে এ বিষয়ে বার বার সতর্ক করেছিল গোয়েন্দারা। সহিংসতার সম্ভাবনায় সতর্কবার্তায় দিল্লীর পুলিশকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বলা হয়। কিন্তু পুলিশ সেসব সকর্তবার্তা আমলে নেয়নি। বৃহস্পতিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে এমন তথ্যই প্রকাশ করা হয়। খবরে বলা হয়, ভারতীয় স্পেশাল ব্রাঞ্চ ও গোয়েন্দা বিভাগ বেতারবার্তার মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব দিল্লী প্রশাসন ও পুলিশকে সতর্কবার্তা পাঠায়। দিল্লীতে মসজিদে আগুন দেয় পুলিশÑওয়াশিংটন পোস্ট দিল্লীতে কমপক্ষে তিনটি মসজিদে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। অপরদিকে বহু বাড়ি-ঘর এবং দোকান-পাটেও হামলা ও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে, দিল্লীর সহিংসতায় দুর্বৃত্তদের সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সহিংসতা বন্ধের চেষ্টা না করে উন্মত্ত জনতার সঙ্গে যোগ দিয়ে জয়শ্রী রাম বলে স্লোগান দিচ্ছিল পুলিশ। একই সঙ্গে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়েছে তারা। কয়েকদিন ধরে এই দাঙ্গা পরিস্থিতি চললেও এ নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অবশেষে বুধবার তিনি এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়ে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। লোকজনকে শান্তি ও ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী মোদি। দিল্লীর ঘটনা জাতীয় লজ্জার বিষয়-মনমোহন সিং ভারতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে (সিএএ) কেন্দ্র করে দিল্লীতে সংঘটিত হিন্দুত্ববাদী তাণ্ডবকে ‘জাতীয় লজ্জা’র বিষয় আখ্যা দিয়েছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিং। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, দিল্লীতে সহিংসতা মোকাবেলায় বিজেপি সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। টানা পাঁচ দিন ধরে দিল্লীতে চলছে হিন্দুত্ববাদীদের তাণ্ডব। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় এই সহিংসতা। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত এতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ জনে। বুধবার গভীর রাতে উত্তর-পূর্ব দিল্লীর ভজনপুর, মৌজপুর কারায়াল নগরে নতুন করে সহিংসতা হয়েছে। এদিন কংগ্রেসের অন্তর্বর্তী সভাপতি সোনিয়া গান্ধী বলেন, দেশের নাগরিকের জীবন, স্বাধীনতা এবং সম্পত্তি রক্ষায় সুনিশ্চিত করতে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। দিল্লীতে দাঙ্গা বন্ধে ব্যর্থতার কারণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর পদত্যাগ দাবি করেন তিনি।
×