ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাঙ্গুর তীরে বাদাম চাষ ॥ দাম নিয়ে শঙ্কায় কৃষক

প্রকাশিত: ০৩:১৫, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

সাঙ্গুর তীরে বাদাম চাষ ॥  দাম নিয়ে শঙ্কায় কৃষক

নিজস্ব সংবাদদাতা,বান্দরবান,২৩ ফেব্রুয়ারি ॥ বান্দরবানের থানচি উপজেলা থেকে উৎপত্তি হয়ে চট্টগ্রাম দিয়ে বয়ে চলা নদী- সাঙ্গু। নদীটির আরেক নাম শঙ্খ। নদীটির দু’পারে এখন যতদূর চোখ যায়-শুধুই বাদামের চাষ। নদীতীরের পলিমাটি এমনিতেই বাদামচাষের উপযোগী। আর এ বছর কৃষি বিভাগ থেকে বাদামচাষীদের নানা রকম প্রণোদনা দেয়ায়, এখানে এবার রেকর্ড পরিমাণ বাদামের চাষ হয়েছে। হয়েছে বাম্পার ফলনও। তবুও, গুদামজাতের সুবিধা না থাকায় ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ বছর সরকার বাদামচাষীদেরকে বীজ, সার, কীটনাশকসহ নানা উপকরণ সহায়তা দিয়েছে। তাই গত বছরের চেয়ে বাদামের চাষ বেড়েছে। তবে, বাদাম জমি থেকে তোলার সঙ্গে সঙ্গে বাজারজাত না করে- শুকিয়ে গুদামজাত করতে পারলে ভালো হয়। কিন্তু বান্দরবানে গুদামজাতকরণের কোনো ব্যবস্থা নেই। অন্যদিকে, বাজারে বিদ্যমান সিন্ডিকেট এবং কৃষকদের নিজস্ব ছাউনি না থাকায়- খুব দ্রুত ও কম মূল্যে বাদাম বিক্রি করে দিতে হয়। ফলে ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষক। কৃষক মংনু অং বলেন, ‘বাজারে শেড না থাকায় মণ প্রতি পাঁচ হাজার টাকার বাদাম বিক্রি করতে হচ্ছে তিন হাজার টাকায়। একটি বাজার শেডের ব্যবস্থা করলে কৃষকরা লাভবান হবেন। আমরা ফসলের যথার্থ মূল্য পাব। ’ বান্দরবান সদর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক বলেন, গত বছর যে জমিগুলোতে তামাক চাষ হয়েছিলো, সেগুলো এ বছর বাদাম দিয়ে ভরে গেছে। আমাদের চীনা বাদামের বেশিরভাগই সাঙ্গু নদীর তীরে হয়। বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে এবার আমাদের বাদামের বীজ বুনতে দেরি হয়েছে, তাই এখনো বাদাম তোলা যায়নি। তবে প্রতি বছরই তামাকের বিকল্প ফসল হিসেবে আগের চেয়ে বেশি জমিতে উচ্চফলনশীল জাতের বাদাম চাষ করা হচ্ছে। ফলে বাদামের চাষ ও উৎপাদন বাড়ছে।’ বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৯৭১ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছিলো, যার মধ্যে ৯০০ হেক্টর শুধু সাঙ্গু নদীর তীরেই। ফলন হয়েছিলো দুই হাজার ২১ মেট্রিক টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চাষ হয়েছে ৯৯৯ হেক্টর জমিতে, যার মধ্যে ৯২০ হেক্টর জমি সাঙ্গু নদীর তীরে। আর ফলন হয়েছিলো দুই হাজার ১০০ মেট্রিক টন। চলতি অর্থবছরে চাষ হয়েছে এক হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে। এবার ফলনের লক্ষ্যমাত্রা দুই হাজার ৩০০ মেট্রিক টন। তামাকের চাষ কমছে জানিয়ে মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘তামাকের বদলে এখন প্রচুর পরিমাণে সীম, ফুলকপি, বাধাকপি, টমেটো, আলু হয়েছে। সরকারি প্রণোদনার সাথে সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হলে, সামনে এটি আরো বাড়বে।’ কৃষকদেরকে বাজারজাতকরণে সহায়তা দেয়ার বিষয়ে এই কৃষিকর্মকর্তা বলেন, ‘এবার রাজস্ব খাতের আওতায় এবং সরকারী প্রণোদনার আওতায় আমরা অনেক সহায়তা দিয়েছি। এমনকি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে চাষ পরিচালনার জন্যও সহায়তা দেয়া হয়েছে। তবে আমাদের এখানে সরকারিভাবে কোনো সংরক্ষণাগার নাই। কৃষক পর্যায়ে সংরক্ষণ করা হয়। এখানে একটা হিমাগার আছে, কিন্তু বাদাম তো হিমাগারে রাখা যায় না।’ কৃষকের ক্ষমতায়নে সরকারের এসব প্রণোদনা নি:সন্দেহে সহায়ক। তবে, যতদিন পর্যন্ত কৃষক গুদামজাতের সুযোগ না পাবে এবং বাজার ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা থাকবে; ততদিন কৃষকের কাছে এর সুফল পৌঁছাবে না। তাই, সরকারের এখন এদিকে নজর দেয়া উচিত।
×