ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তবে মন্ত্রণালয় আশা ছাড়েনি

দক্ষ কর্মীর অভাবে কাতারে জনশক্তি রফতানি বন্ধ

প্রকাশিত: ১০:২১, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  দক্ষ কর্মীর অভাবে কাতারে জনশক্তি রফতানি বন্ধ

ফিরোজ মান্না ॥ দক্ষ কর্মীর অভাবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে জনশক্তি রফতানির বাজারটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। তবে প্রবাসী বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের পরিবারের জন্য ‘ফ্যামিলি রেসিডেন্স ভিসা’ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। কাতারে বৈধভাবে কর্মরতরা চাইলে তাদের পরিবারের সদস্যদের খুব সহজেই দেশটিতে নিয়ে যেতে পারবেন। ভিজিট ভিসায় পরিবারের সদস্যদের কাতার ভ্রমণে নেয়ার অনুমতি ছিল। ভিজিট ভিসার মেয়াদ ছিল ১ মাস। এখন থেকে ফ্যামিলি ভিসার মেয়াদ ৫ বছর করা হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কাতারের শ্রমবাজার নিয়ে দুই দেশের মধ্যে শ্রম সম্পর্ক জোরদার করার জন্য কয়েক দফা উদ্যোগ নিয়েছে। দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর বিষয়ে কাতার কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। কিন্তু এতে কোন ফল হয়নি। তবে মন্ত্রণালয় আশা ছাড়েনি। ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠানের জন্য ১৪টি স্টেডিয়াম ও বেশ কয়েকটি হোটেল মোটেল নির্মাণ কাজের জন্য বাজারটিতে এক সময় বিপুলসংখ্যক কর্মী নিয়োগ পেয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে কাতারের বাজারে কোন কর্মী নিয়োগ হচ্ছে না। বাংলাদেশের কর্মীরা অদক্ষ বলে কাতার কর্তৃপক্ষ অন্য ‘সোর্স কান্ট্রি’ থেকে কর্মী নিয়োগ করছে। যদিও কাতার কর্তৃপক্ষ চান, বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিয়োগ করতে। কিন্তু দেশটি এখন যে ধরনের কর্মীর প্রয়োজন সেই ধরনের দক্ষ কর্মীর যোগান দিতে পারছে না বাংলাদেশ। কাতারে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর দেশটি অর্থনৈতিকভাবে একটা সমস্যায় পড়ে যায়। এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে তাদের বেশ কয়েক বছর সময় লেগেছে। অবরোধ আরোপের ঘটনাটি ঘটে ২০১৬ সালে। এরপর থেকে দেশটিতে কর্মী কমতে শুরু করেছে। অবরোধের চেয়ে বড় কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে, কাতারে নির্মাণাধীন অধিকাংশ প্রকল্প শেষ হওয়ার পথে রয়েছে। এখন নতুন করে তারা অদক্ষ কর্মী না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ২০২২ সালে কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হবে। এ কারণে দেশটিতে ১৪ টি স্টেডিয়ামসহ হোটেল মোটেল নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। বর্তমানে স্থাপনাগুলোর সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ চলছে। এ কাজে দক্ষ কর্মী ছাড়া অন্য কোন কর্মীর প্রয়োজন নেই বলে দেশটির কর্তৃপক্ষ কর্মী নিয়োগ অর্ধেকে নামিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ প্রায় বন্ধ করেই দিয়েছে। যদি দূতাবাসের পক্ষ থেকে কাতার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ আলোচনা করা হচ্ছে, দেশটিতে যাতে বাংলাদেশী কর্মীদের নিয়োগ করা হয়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে দক্ষ কর্মী নিয়োগের বিষয়ে লিখিত প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। জনশক্তি কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাতারে ২০১৭ সালে ৮২ হাজার ১২ জন কর্মীর (নারী পুরুষ মিলে) কর্মসংস্থান হয়েছে। কাতার বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য একটি ভাল বাজার হিসাবে বিএমইটি উল্লেখ করেছে। ২০১৮ সালে সৌদি আরবের পরেই এই বাজারে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক কর্মীর কর্মসংস্থানের টার্গেট নেয়া হয়েছিল। কিন্তু টার্গের তুলনায় অনেক কমসংখ্যক কর্মীর দেশটিতে চাকরি হয়েছে। ২০১৯ সালে বাজারটিতে খুব কমসংখ্যক কর্মী চাকরি নিয়ে গেছেন। সম্প্রতি কাতারে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের তৈরি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে কাতারে কর্মসংস্থান হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার ৩৮২ জন কর্মীর। ২০১৭ সালে কাতারে বাংলাদেশী নারী পুরুষ কর্মী মিলে মোট ৮০ হাজার ১৬৯ কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে ৪০ হাজার ১৮৩ জন কম। এ ঘটনার পেছনে সৌদি আরব কাতারে অবরোধ দেয়ার কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে বলে জানানো হয়েছে। যদিও দূতাবাসের প্রতিবেদনে অবরোধের বিষয়টি প্রাধান্য পায়নি। পেয়েছে-কাতারে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ নিয়ে। দেশটিতে ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার জন্য নির্মাণ কাজের মহাযজ্ঞ শেষ পর্যায়ের কথাটি গুরুত্বের সঙ্গে বলা হয়েছে। নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেলে দেশটিতে খুব বেশি কর্মীর প্রয়োজন নেই। কাতারে যেসব নির্মাণাধীন বৃহৎ প্রকল্প রয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগই এখন শেষের পথে। ফলে এসব প্রকল্পে এত দিন অদক্ষ জনশক্তির চাহিদা থাকলেও এখন শেষ হওয়ার পর এসব প্রকল্পের কারিগরি কাজ ও রক্ষণাবেক্ষণে জন্য দক্ষ জনশক্তির চাহিদা বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি সরবরাহে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে বলে দেশটির কর্তৃপক্ষ মনে করছেন। দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে কাতারে যারা এসেছেন, তাদের ৮০ ভাগই অদক্ষ কর্মী ছিলেন। বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে এখন আর কাতারে অদক্ষ জনশক্তির চাহিদা নেই। দেশটিতে এখন দক্ষ কর্মীর চাহিদা বেড়েছে। দক্ষ কর্মী পাঠাতে পারলে বাজারটি দেশের জন্য এখনও ভাল। কাতারে যে ধরনের দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন সেই ধরনের কর্মী আমাদের দেশে এখনও তৈরি হচ্ছে না। সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায়, কাতার এখন অন্যান্য দেশের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে। এই সুযোগটি নিচ্ছে, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানসহ আরও কয়েকটি দেশ। কাতারে খাদ্য শস্য উৎপাদন হয় না। আমদানিনির্ভর কাতারে বাংলাদেশ এই সুযোগটি নিতে পারে বলে মনে করছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। এ জন্য বাংলাদেশকে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো উচিত বলে মনে করছেন। শুধু কর্মীনির্ভর না হয়ে অন্য দিকেও নজর দেয়া প্রয়োজন।
×