ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সর্বোচ্চ খরচ পড়বে ৪০ লাখ টাকা

ইব্রাহিম কার্ডিয়াকে শুরু হলো নিয়মিত লিভার প্রতিস্থাপন

প্রকাশিত: ১০:৪১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 ইব্রাহিম কার্ডিয়াকে শুরু হলো নিয়মিত লিভার প্রতিস্থাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে নিয়মিত লিভার প্রতিস্থাপন শুরু করল ডায়াবেটিক সমিতির অন্যতম প্রতিষ্ঠান ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ছেলে শরীফুল ইসলামের লিভারের অংশ তার মা জাহানারা খাতুনের দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। এর মাধ্যমেই শুরু হলো নিয়মিত লিভার প্রতিস্থাপন কার্যক্রম। ৩০ সদস্যের একটি চিকিৎসক দলের নেতৃত্বে আছেন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী। ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রত্যেক রোগীকে লিভার প্রতিস্থাপন করাতে ৭৫ লাখ টাকা দরকার পড়লেও ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল নেবে সর্বোচ্চ ৪০ লাখ টাকা। আর ভারতে তা কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। প্রতিস্থাপন কার্যক্রম চালাতে স্থাপন করা হয়েছে মজবুত অবকাঠামো এবং গড়ে তোলা হয়েছে প্রশিক্ষিত স্থায়ী চিকিৎসক টিম। বর্তমানে লিভার প্রতিস্থাপন ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল এ্যান্ড ইনস্টিটিউটের তত্ত্বাবধানে অরগ্যান ট্রান্সপ্ল্যান্ট ইউনিট হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এটি বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির একটি প্রকল্প। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এ্যাটর্নি জেনারেল এ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম, ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব মোঃ সাইফ উদ্দিন, বারডেম জেনারেল হাসপাতালের মহাপরিচালক অধ্যাপক জাফর আহমেদ লতিফ, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের সিইও অধ্যাপক এম এ রশীদ, অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্ট ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী। লিভার প্রতিস্থাপন সম্পর্কে বারডেম হাসপাতালের চীফ সার্জন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, বাংলাদেশে নিয়মিতভাবে লিভার প্রতিস্থাপন কার্যক্রম শুরু করতে পেরে খুব ভাল লাগছে। লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য দক্ষ জনবল এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়। ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ এ কে আজাদ খানের আন্তরিকতা ও অবদানে একটি স্থায়ী লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট ইউনিট গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। ইউনিটটি পূর্ণাঙ্গভাবে গড়ে তুলতে সরকার ১০ কোটি টাকা, ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের মালিক ৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা এবং বারডেম ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল দিয়েছে ১৫ কোটি টাকা। প্রতি মাসে দু’জন বা তার বেশি রোগীর লিভার প্রতিস্থাপন করানো সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা ২০১০ সালের ৩ জুন প্রথম সফল লিভার প্রতিস্থাপন করি। পরবর্তীতে ২০১১ সালের ৬ আগস্ট দ্বিতীয়বারের মতো লিভার প্রতিস্থাপনেও সফল হয়েছি। ওই দু’টি প্রতিস্থাপন কার্যক্রমে বিভিন্ন জায়গা থেকে যন্ত্রপাতি ও জনবল ভাড়া করতে হয়েছে। এসব কারণে এটা নিয়মিত করা যায়নি। বর্তমানে সেই সমস্যা দূর হয়ে গেছে। গড়ে উঠেছে একটি মজবুত লিভার প্রতিস্থাপন ইউনিট। এখন থেকে আমরা নিয়মিত লিভার প্রতিস্থাপন করব। লিভারদাতা ও গ্রহীতার বিষয়ে অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, লিভার রোগের শেষ চিকিৎসা হিসেবে লিভার প্রতিস্থাপন বর্তমান বিশ্বে একটি যুগান্তকারী চিকিৎসা পদ্ধতি। যার সুফল পেয়ে পৃথিবীতে লাখ লাখ লিভার ফেইলিউরে আক্রান্ত মানুষ নতুন জীবন পেয়ে থাকেন। দাতার অবশিষ্ট লিভার তার দেহে পুনরায় বর্ধিত হতে থাকে। এটি মাত্র ৬ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে তার পূর্বের সম্পূর্ণ কর্মক্ষমতা ফিরে পায়। আর প্রতিস্থাপিত লিভার গ্রহীতার দেহে অনুরূপভাবে দ্রুত বর্ধিত হতে থাকে। দেহের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি সুস্থ লিভারের মতোই শরীরের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করে থাকে। ডাঃ আলী বলেন, লিভার প্রতিস্থাপনে সব থেকে বড় বাধা ডোনার। রোগীরা ডোনার ম্যানেজ করতেই হিমশিম খান। লিভারের রোগীদের আত্মীয়রা ডোনার হিসেবে এগিয়ে আসলে এ কাজ আরও সহজ হবে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সফলভাবে আমরা তৃতীয় রোগী হিসেবে জাহানারা খাতুনের লিভার প্রতিস্থাপন সম্পন্ন করি এবং আমরা সফল হই। জাহানারা খাতুনকে লিভারের একটি অংশ দান করেছেন তার ছেলে এ্যাডভোকেট শরিফুল ইসলাম। লিভারদাতা ও গ্রহীতা দুজনেই সুস্থ আছেন।
×