ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে গ্রুপিং রাজনীতির অবসানই লক্ষ্য

রেজাউলের মনোনয়নে অধিকাংশ নেতাকর্মী আনন্দিত

প্রকাশিত: ১০:২৬, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  রেজাউলের মনোনয়নে  অধিকাংশ নেতাকর্মী আনন্দিত

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র পদে রেজাউল করিম চৌধুরীর মনোনয়ন লাভের মধ্য দিয়ে অবসান হয়েছে সকল জল্পনা-কল্পনার। প্রার্থিতায় নাটকীয় পরিবর্তন আসতে পারে, এমন ধারণা ছিল রাজনৈতিক মহলে। কিন্তু এতটা চমক হবে তা অনেকের ভাবনাতেই ছিল না। মেয়র পদে এমন একজনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, যার কথা দলের তৃণমূলে আলোচনায় থাকলেও তা জোরাল ছিল না। তবে কেন্দ্রের এ সিদ্ধান্তে অধিকাংশ নেতাকর্মীই খুশি হয়েছেন। বিষয়টিকে তারা দেখছেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে গ্রুপিং রাজনীতির অবসানের প্রক্রিয়া হিসেবে। মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকে আলোচনায় এটিই প্রাধান্য পেয়েছে। এদিকে, মনোনয়ন না পেলেও দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। বলেছেন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন তিনি। এদিকে, নির্বাচন কমিশন রবিবার বৈঠক করে চসিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে চসিক নির্বাচন। এ নির্বাচন ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) পদ্ধতিতে করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। চসিক নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নকে সামনে রেখে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগে এক ধরনের টান টান অবস্থা ছিল। বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনসহ ১৯ নেতা দলীয় ফরম সংগ্রহ করেন। শনিবার রাতেই মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়ে যায়। এতে সকলকে অবাক করে দিয়ে নৌকার টিকেট পান রেজাউল করিম চৌধুরী। শুরুতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হলেও মাত্র কয়েকঘণ্টার মধ্যেই পরিস্থিতি মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীর পক্ষেই চলে আসে। সকাল থেকেই তৃণমূলের নেতাকর্মীর স্রোত বইতে থাকে মহানগরীর বহদ্দারহাট অভিমুখে। মনোনয়ন পাওয়ায় রেজাউল করিম চৌধুরীকে অভিনন্দিত ও ভালবাসায় সিক্ত করা হয়। চসিকের এই মনোনয়ন ভবিষ্যতে চট্টগ্রামের আওয়ামী রাজনীতিতে গ্রুপিংয়ের অবসান ঘটাবে বলে মনে করছে সাধারণ সমর্থক। তারা মনে করছেন, শুধু মেয়র পদে প্রার্থিতার ক্ষেত্রেই নয়, এই চমকের ধারাবাহিকতা হতে পারে সুদূরপ্রসারী। মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ এরমধ্যে শেষ হয়েছে। নির্বাচনের পরই কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠিত হবে নতুন কমিটি। সেই কমিটিও যে বিতর্কের উর্ধে হবে, তার পরিষ্কার সিগন্যাল মেয়র পদে এই মনোনয়ন। রেজাউল করিম চৌধুরী চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি বহদ্দারহাট এলাকার বনেদী ‘বহদ্দার’ পরিবারের সন্তান। ওই পরিবারের নামেই জায়গার নামকরণ। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজনীতি করছেন। স্কুল জীবনেই তার রাজনীতির হাতেখড়ি। চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতিও। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন আওয়ামী লীগের এ নেতা। তার লেখা চারটি গ্রন্থ রয়েছে। যেগুলো হচ্ছে, ‘জামায়াত-শিবিরের হিংস্রতা ও ধর্মীয় রাজনীতি’, ‘কালো টাকা নির্ভর রুগ্ন রাজনীতি থেকে মুক্ত হতে হবে’, ‘ছাত্রলীগ ষাটের দশকে চট্টগ্রাম’ এবং ‘স্বদেশের রাজনীতি ও ঘরের শত্রু বিভীষণ।’ দীর্ঘদিন পর এই মূল্যায়নে মূলত রাজনীতিরই জয় হয়েছে বলে অভিমত বোদ্ধা মহলের। মনোনয়ন পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আমি পঞ্চাশ বছরের অধিক সময় ধরে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে আছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সন্তান হিসেবে কাজ করেছি কোন কিছু পাওয়ার আশা না করেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে আমার শেষ বয়সে মূল্যায়ন করে একটা সুযোগ দিয়েছেন। আমি নেত্রীর সেই আস্থা রাখার প্রতি সম্মান দিতে চাই। মেয়র নির্বাচিত হলে তিনি একটি পরিকল্পিত নগরী গড়ে তুলবেন বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। নেত্রীর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন নাছির আবারও মনোনয়ন লাভের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি জয়ী হয়েছিলেন ‘হাতী’ প্রতীকে। এবার নির্বাচন হবে দলীয় প্রতীকে। মনোনয়ন না পাওয়ায় তার নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করা হলো না। তবে বলেছেন, নেত্রীর সিদ্ধান্ত শিরোধার্য। আ জ ম নাছির উদ্দিন সাংবাদিকদের কাছে তার প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, রেজাউল করিম চৌধুরী একজন সজ্জন ব্যক্তি ও যোগ্য প্রার্থী। নেত্রী যেহেতু তাকেই মনোনয়ন দিয়েছেন সেহেতু বিজয় সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধে উঠে দলীয় নেতাকর্মীরা মাঠে নামবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে নৌকার প্রার্থীকে জিতিয়ে আনা। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চট্টগ্রামের মেয়র পদটি উপহার দিতে চাই। মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে অভিনন্দন জানিয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেন।
×