ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গ্রন্থমেলা প্রতিদিন

পাঠকপ্রিয় হওয়া কিছু কাব্যগ্রন্থের কথা

প্রকাশিত: ১০:২০, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

পাঠকপ্রিয় হওয়া  কিছু কাব্যগ্রন্থের কথা

মনোয়ার হোসেন ॥ বেদনাকে বলেছি কেঁদো না। এটি অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আসা হেলাল হাফিজের কাব্যগ্রন্থের শিরোনাম। এবারের মেলায় পাঠকপ্রিয় হয়েছে এই কাব্যগ্রন্থটি। রবিবার ফাগুনের দুপুরে বইমেলায় দিব্যপ্রকাশ থেকে বইটি সংগ্রহ করছিলেন বেসরকারী চাকরিজীবী আসলাম অরণ্য। আলাপচারিতায় এই কবিতাপ্রেমী বলেন, ১৯৮৬ সালে এই নন্দিত কবির ‘যে জ্বলে আগুন জ্বলে’ নামের কাব্যগ্রন্থ পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। তাই দীর্ঘ ৩৪ বছর পর তার দ্বিতীয় মৌলিক কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের খবর পেয়েই ছুটি এসেছি সেটি সংগ্রহ করতে। প্রকাশনা সংস্থাটির বিপণন কর্মী জানান, ইতোমধ্যে কাব্যগ্রন্থটির ১ হাজার কপির প্রথম সংস্করণ বিক্রি হয়ে গেছে। দ্বিতীয় সংস্করণও এখন শেষের পথে। রবিবার ছিল গ্রন্থমেলার ১৫তম দিন। বাংলা একাডেমির তথ্যানুযায়ী, এদিন পর্যন্ত প্রকাশিত নতুন বইয়ের তালিকায় কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৬৮৪টি। তবে এই বিপুলসংখ্যক কাব্যগ্রন্থের মধ্যে পাঠককে আকৃষ্ট করা বইয়ের সংখ্যা সামান্য। পাঠকপ্রিয় হওয়া কিছু কবিতার বই এবং কবির কথা মেলে ধরা হলো এই প্রতিবেদনে। এবার মেলায় এসেছে প্রখ্যাত কবি মহাদেব সাহার কাব্যগ্রন্থ ‘মাটির মাধুর্য’। মাওলা বাদার্স থেকে আসা বইটি নজর কেড়েছে পাঠকের। অনন্যা থেকে এসেছে এই কবির আরেক বই ‘চোখ বুজে পাহাড় দেখেছি’। কবিতা লেখা কী খুব সহজ-এমন প্রশ্নের জবাবে এই কবি জনকণ্ঠকে বলেন, আমি মনে করি কবিতা লেখা হচ্ছে কঠিনতম শিল্পসৃষ্টির মতো কাজ। কবিতা লিখতে হলে একজন কবিকে যেতে হয় সাধনার ভেতর দিয়ে। ধ্যান করার মতো চোখ বুজে কবিতা অন্বেষণ করতে হয়। আর কবিতা লেখাটা বড় কথা নয়, কবিতায় থেকে যাওয়াটাই বড় কথা। নবীন কবিদের সাধুবাদ জানাই। তবে তারা যেন কবিতা লেখার ক্ষেত্রে সাধনার পথটিকে অনুসরণ করে। অন্যপ্রকাশ থেকে বেরিয়েছে খ্যাতিমান কথাশিল্পী নাসরীন জাহানের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘মদের গ্লাসে নাচে বরফের ওম’। বইটি টানছে পাঠককে। কথা প্রসঙ্গে এই কবি বলেন, মেলায় প্রকাশিত ৬ শতাধিক কাব্যগ্রন্থের মধ্যে খুঁজলে পাওয়া যাবে সামান্য কিছু কবিতা। অনেকে নিজের পয়সা খরচ করেও কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করে। গ্রন্থমেলার জন্য তারা সারাবছর অপেক্ষা করে। কারণ, এই সময় মিডিয়া কাভারেজ পাওয়া যায়। সেই মোহে কবিতা হলো কী হলো নাÑসেটার চেয়ে বড় বিষয় হয়ে যায় কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করে কবি হয়ে যাওয়া। এবার মেলায় প্রথমা প্রকাশ করেছে হাবীবুল্লাহ সিরাজীর কাব্যগ্রন্থ ‘জমিনে ফারাক’। বাংলাপ্রকাশ থেকে আসা এই কবির ‘প্রেম ও প্রকৃতির কবিতা’ও চলছে ভাল। সরলপ্রকাশ থেকে বের হয়েছে আল মাহমুদের মহাকাব্য ‘এ গল্পের শেষ নেই শুরুও ছিল না’। পৃথিবীর নানা ভাষার কবিদের কবিতার অনুবাদ করেছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। বাতিঘর থেকে এসেছে এই কবির ‘অনুবাদিত কবিতাসমূহ’। প্রকাশনা সংস্থা বায়ান্ন থেকে এসেছে পাঠকপ্রিয় হওয়া মারজুক রাসেলের কাব্যগ্রন্থ ‘শরীর বণ্টনবিষয়ক চুক্তিনামা স্বাক্ষর’। মারুফ রায়হানের নির্বাচিত কবিতা প্রকাশ করেছে ধ্রুবপদ। জার্নিম্যান বুকস থেকে এসেছে ‘গুলজারের কবিতা’। গ্রন্থটির ভাষান্তর করেছেন সাবেরা তাবাসসুম। প্রথমা থেকে বেরিয়েছে পিয়াস মজিদের ‘বসন্ত, কোকিলের কর্তব্য’। সময় থেকে এসেছে আমিনুর রহমান সুলতানের ‘সাতই মার্চের তর্জন’। সৈয়দ শামসুল হকের ‘নুন পূর্ণিমা’ প্রকাশ করেছে বেঙ্গল পাবলিকেশন্স। উৎস থেকে এসেছে মিলু শামসের ‘দীর্ঘায়িত দুঃখগুলো’। সময় থেকে এসেছে আসাদ মান্নানের ‘শত কবিতায় বঙ্গবন্ধু’ এবং নূহ-উল-আলম লেনিনের ‘পোড়া মাঠে চৈত্রের ফসল’। ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ থেকে বেরিয়েছে হানিফ রুবেলের কাব্যগ্রন্থ ‘দাসক্ষত’। কথাপ্রকাশ এনেছে গিরিশ গৈরিকের কাব্যগ্রন্থ ‘মেডিটেশন গুচ্ছ’। অন্যপ্রকাশ থেকে বেরিয়েছে নওশাদ জামিলের কাব্যগ্রন্থ ‘প্রার্থনার মতো একা’। আলতাফ শাহনেওয়াজের ‘সামান্য দেখার অন্ধকার’ প্রকাশ করেছে প্রথমা। কামরুজ্জামান কামুর ‘আমাকে এবার পিছমোড়া করো’ প্রকাশ করেছে প্রথমা। সাদাত হোসাইনের ‘তোমাকে দেখার অসুখ’ প্রকাশ করেছে অন্যধারা। হক ফারুক আহমেদের ‘মেঘ দরিয়ার মাঝি’ বের করেছে অন্যপ্রকাশ। শহীদুল্লাহ সিকদারের গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন প্রকাশিত হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপ-উপাচার্য ডাঃ মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদার রচিত দুটি গ্রন্থ। শব্দকোষ প্রকাশনী থেকে আসা বই দুটির শিরোনাম ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাকে ধারণ করে শেখ হাসিনার পথচলা’ এবং ‘চর্ম ও যৌন রোগের চিকিৎসা’। রবিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গ্রন্থমেলার গ্রন্থ উন্মোচন মঞ্চে বই দুটির মোড়ক উন্মোচিত হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কনক কান্তি বড়ুয়া এবং স্বাধীনতা চিকিৎক পরিষদের সভাপতি ডাঃ ইকবাল আর্সলান। বইটি প্রসঙ্গে কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাকে ধারণ করে শেখ হাসিনার পথ চলা’ বইটিতে সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে হাজার বছরের বাঙালীর বঞ্চনার ইতিহাস, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয়, বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ, সংগ্রামের গৌরব গাঁথা পথচলা যেখানে অজুত লক্ষ বাঙালীর নিবেদন এক হয়ে কাজ করেছে। অনুভূতি প্রকাশে শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পূর্বকাল এবং স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আমার পেশাগত জীবনের পাশাপাশি দেশের এবং সমাজের জন্য কাজ করার প্রতি আমাকে দায়বদ্ধ করেছে। সেই দায় থেকেই জাতির জনকের স্বপ্নকে ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করছেন আমি তাঁর এই মহৎ কর্মের সঙ্গে থাকতে চাই। সেই সঙ্গী হওয়ার প্রয়াস থেকে বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনাকে নিয়ে বই লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছি। এছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞানের বইটি উৎসুক রোগীদের কিছু প্রশ্নের উত্তর জোগাবে বলে বিশ্বাস করি। নতুন বইয়ের তথ্য বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, রবিবার মেলার ১৫তম দিনে নতুন বই এসেছে ১৪৬টি। এরমধ্যে বাংলা একাডেমি এনেছে পিয়াস মজিদের বঙ্গবন্ধু বিষয়ক গ্রন্থ ‘মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলা একাডেমি’। অনন্যা এনেছে ইমদাদুল হক মিলনের ‘কয়েকজন মেয়ে’, অধ্যাপক আবু সাইয়িদের ‘তোমার আলোকে রহিব জাগিয়া’ ও মাহবুব রেজার ‘নামিল আঁধার’। পাঠক সমাবেশ এনেছে সৈয়দ শামসুল হকের ‘জলেশ্বরী: উপন্যাস সংগ্রহ (২য় খন্ড)। ঐতিহ্য এনেছে আব্দুল হাইয়ের ‘বিশ্বাসের বাতায়ন’। চিত্রা প্রকাশনী এনেছে শিহাব সরকারের ‘আমার পূর্বজরা’। পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স এনেছে মিনার মনসুরের ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শত্রু-মিত্র’ ও স্বকৃত নোমানের ‘বানিয়াশান্তার মেয়ে’। বিদ্যা প্রকাশ এনেছে মফিদুল হকের ‘ব্যক্তিত্ব ও বাঙালী সমাজ’। অনুপম প্রকাশনী এনেছে ড. বিশ্বজিৎ রায়ের ‘রাধারমণের অপ্রকাশিত গান’ ও ভবেশ রায়ের ‘নলেজপিডিয়া-৩’। আবিষ্কার এনেছে আবু আককাস আহমেদের ‘হূমায়ুন আহমেদ চেতনার আকাশ’ উল্লেখযোগ্য।
×