ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা

প্রকাশিত: ১১:০৪, ৩০ জানুয়ারি ২০২০

দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শেষ সময়ের প্রচার চলছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের। শীত আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও দমাতে পারছে না প্রার্থীদের। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই প্রচার চালান ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থীরা। তীব্র শীত আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে আধুনিক, সচল উন্নত ঢাকা গড়তে নৌকায় ভোট চান তারা। প্রার্থীদের আন্তরিকতা আর উন্নয়নের বার্তায় ভোটাররাও সাড়া দিচ্ছেন বেশ। মঙ্গলবার ১৮তম দিনে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় নির্বাচনী প্রচার ও গণসংযোগে অংশ নেন আওয়ামী লীগ মনোনীত দুই মেয়র প্রার্থী। এ সময় ভোটারদের নগর নিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন তারা। উন্নয়ননকে এগিয়ে নিতে একটি আধুনিক ঢাকা গড়তে নৌকা মার্কায় ভোট চান তারা। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি উন্নয়নের মার্কা হিসেবে নৌকায় ভোট দিতে বলেন। বুধবার দুপুরে মহাখালীর শেখ ফজলে রাব্বী পার্কের সামনে থেকে প্রচার শুরু করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মোঃ আতিকুল ইসলাম। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই প্রার্থীসহ সমর্থকরা হাজির হয় পার্কের সামনে। পার্কের সামনে সংক্ষিপ্ত পথসভায় আতিক বলেন, ৯ মাস মেয়রের দায়িত্বে থেকে অনুশীলন করেছি। সেই অনুশীলনকে কাজে লাগিয়ে আগামীতে ইনশাআল্লাহ একটি সুস্থ, সচল, আধুনিক ঢাকা আমরা গড়ব। আমরা মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করব। নৌকায় ভোট দিলে আমরা একটি সুন্দর ঢাকা গড়তে পারব। নির্বাচনী প্রচারে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামের জন্য দলীয় কর্মীদের মতোই কাজ করে যাচ্ছেন তার আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের সদস্যরা। আতিকুল ইসলাম বলেন, উনারা আমার রক্তের ভাইবোন আর ভোটার ও কর্মী সমর্থকরা আপনারা হচ্ছেন আমার আত্মার ভাইবোন। এই রক্তের ভাইবোন আর আত্মার ভাইবোন এক হয়ে এগিয়ে এসেছে, জয় সুনিশ্চিত। এ সময় তার বড় ভাই সাবেক বিচারপতি মোঃ তাফাজ্জাল ইসলাম, সহধর্মিণী ডাঃ শায়লা সাগুফতা ইসলাম, একমাত্র কন্যা বুশরা আফরিন, বোন ও বোনের ছেলে-মেয়েসহ পুরো পরিবার উপস্থিত ছিলেন এই প্রচারের পথ সভায়। আতিক বলেন, আজ আমি আমার পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছি। এখানে আমার বড় ভাই, বোন, ভাগনে, ভাগনি, নাতি-নাতনিসহ আমার স্ত্রী-মেয়ে সকলেই এসেছে। আপনাদের কাছে ভোট চাইতে। এরা আমার রক্তের ভাইবোন, আর আপনারা হচ্ছেন আমার আত্মার ভাইবোন। আতিকুল ইসলাম বলেন, এই ভাইবোনদের ভালবাসায় আমি এগিয়ে যাই। আমার রক্তের ভাইবোন আর আত্মার ভাইবোন যেভাবে এক হয়ে এগিয়ে এসেছে জয় সুনিশ্চিত। আমরা ১১ ভাইবোন, আমাদের পরিবারেই ৩-৪ হাজার ভোট আছে। এই পরিবার আমাকে দিয়েছে গার্মেন্টসের দায়িত্ব। এই পরিবার এখন আমার পাশে আছে। আপনারা আত্মার-ভাইবোনও আছেন। আপনাদের ভালবাসায় বিজয় সুনিশ্চিত ইনশাআল্লাহ। ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা দেখে-শুনে ভোট দেবেন। গত ৯ মাসের কঠিন অনুশীলন করেছি, সেই অনুশীলনকে কাজে লাগিয়ে আমি সুস্থ, সচল আধুনিক ঢাকা গড়ব। আর বিজয়ী হলে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখব। নৌকা দিয়েছে স্বাধীনতা, নৌকা দেবে আধুনিক ঢাকা। সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ায় কর্মী সমর্থকরা ছাতা মাথায় নিয়ে ফজলে রাব্বী পার্কে অবস্থান নেয়। এরপর আতিকুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা একে একে সভামঞ্চের দিকে আসেন। তারা কেউ ছাতা কেউ পোস্টার মাথার ওপর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। পথসভা শেষে সেখান থেকে নিকেতনের দিকে যান আতিকুল ইসলাম ও তার বহর। আতিকের প্রচার সভায় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মারামারি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলামের উপস্থিতিতেই মারামারিতে জড়ায় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা। বুধবার বেলা ১২টার দিকে গুলশানের শহীদ ফজলে রাব্বি পার্কের ভেতরে আতিকের নির্বাচনী প্রচার সভার সময় এ ঘটনা ঘটে। পার্কের ভেতরে আতিকুল ইসলামের সঙ্গে বসেছিলেন ২০ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও গত মেয়াদের কাউন্সিলর মোঃ নাসির। ওই ওয়ার্ডে দলের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া মোঃ জাহিদুর রহমান দুলাল তখন কর্মী সমর্থকদের নিয়ে সেখানে যান। এরপরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মোঃ নাছিরের কর্মী-সমর্থক ও জাহিদুর রহমানের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এ সময় গাছের নিচে তৈরি মঞ্চে কথা বলছিলেন মেয়র পদপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম। তাপস এদিকে, তীব্র শীত আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আসেন শেখ ফজলে নূর তাপস। এ সময় তিনি পাঁচটি রূপরেখায় ঢাকাকে সচল উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা দেন। পরে তিনি বৃৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে অংশ নেন এবং গণসংযোগে বের হন। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস বলেছেন, ঢাকাবাসীর চাহিদা কিন্তু বেশি নয়। চার পাঁচটা মৌলিক সমস্যা সমাধান করলে ঢাকাবাসী সন্তুষ্ট। নির্বাচিত হলে এসব সমস্যার সমাধানের জন্য ৯০ দিনের মধ্যে মহাপল্পনা করব। এ সময় তাপস বলেন, ঢাকা শহরে যারা বসবাস করি, আমরা দেশের যেপ্রান্ত থেকে আসি না কেন, সবাই ঢাকাকে ভালবাসি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকা অবস্থাতেই ঢাকাকে উন্নত করার এটা একটা সুযোগ, এরপরে আর সুযোগ আসবে কিনা জানি না। তাই এখনই সুযোগ, এই সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্যই আমি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী হয়েছি। বিশ্বাস করি, সততা-নিষ্ঠা-একাগ্রতা নিয়ে ২৪ ঘণ্টা যদি আমি কাজ করি, তাহলে পরিবর্তন আনতে পারব। সেবাগুলো ঢাকাবাসীর কাছে পৌঁছে দিতে পারব। যদি নির্বাচিত হতে পারি, ইনশাআল্লাহ তিন বছরের মধ্যে ঢাকাকে পরিবর্তন করতে পারব। তাপস আরও বলেন, জাতীয় প্রেসক্লাব শুধু সাংবাদিকদের স্থান নয়, সবার মতপ্রকাশের স্থান। আমি যদি নির্বাচিত হতে পারি, তাহলে সাংবাদিকদের যেকোন সমস্যা ও তাদের মতামত আমি গ্রহণ করব এবং পাশে থাকব। কারণ আমি বিশ্বাস করি, সাংবাদিকদের মতামত থেকে ঢাকাবাসীর চাহিদা উপলব্ধি করা যায়। মতবিনিময় সভায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, সিনিয়র সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমানসহ অন্য সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন ব্যারিস্টার তাপস। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে উন্নত রাজধানীর প্রতিশ্রুতি দেন নৌকার পক্ষে ভোট চান। ভোটাররাও হাসিমুখে কথা বলেন। গণসংযোগকালে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের দলীয় নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
×