ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নূর-ই-জান্নাত নুশা

মাতৃভাষার ঋণ

প্রকাশিত: ০৯:২২, ৩০ জানুয়ারি ২০২০

মাতৃভাষার ঋণ

ব্যাকরণ অনুযায়ী সাধু ভাষার কথ্য প্রয়োগ অনুমোদিত না হলেও এখন সাধু ভাষায় কথা বলাটাই মনে হচ্ছে শ্রেয়। কেননা সবাই আজকাল বাংলা ভাষার কথ্য রূপ যা বানিয়েছে তা শুনলে নিজের মাতৃভাষাই অচেনা লাগে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কথাগুলো বিকৃত বাংলা ও ইংরেজী শব্দের ‘খিচুড়ি’। ভাষা শহীদেরা ভাগ্যিস বেঁচে নেই, নইলে নিশ্চয়ই কষ্ট পেতেন। যে ভাষার জন্য তাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছেন পরবর্তী প্রজন্ম সে ভাষার কি হাল করেছে! অথচ পৃথিবীর আর কোন জাতিরই মাতৃভাষার জন্য জীবন দেয়ার নজির নেই যা আমাদের আছে। এমনকি ভারতীয় বাঙালীরাও আমাদের ভাষা আন্দোলনের জন্য গর্ববোধ করে। ভাষার বিবর্তন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু আমরা ইদানীং মাতৃভাষাকে যে ‘বাংলিশ’ রূপ দিয়েছি তাকে কোনভাবেই বিবর্তন বলা যায় না। আমার মনে হয় আমরা নিজের মাতৃভাষার গভীরে যেতে পারছি না। বাংলা ভাষার যে ধ্বনিব্যঞ্জনা, যে শ্রুতিমাধুর্য তার সঙ্গে আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি মিশে আছে। এখানেই এর স্বকীয়তা। কিন্তু আমরা যদি সেই ভাষার গভীরে না প্রবেশ করি তবে কখনই এর স্বকীয়তা বজায় থাকবে না। বর্তমানে বিভিন্ন বিদেশী ভাষা শেখার ব্যাপক প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নিঃসন্দেহ এটি একটি ভাল বিষয়। কিন্তু অন্যের মাতৃভাষা শেখার ব্যাপারে আমরা যতটা যতœশীল নিজের মাতৃভাষার ক্ষেত্রে কি ততটাই? অথচ মজার বিষয় হচ্ছে মাতৃভাষা ঠিকভাবে না শিখলে অন্য ভাষাও ভালভাবে রপ্ত হয় না। ভাষা হচ্ছে যে কোন জাতির বাহন, তাদের পরিচয়ের অংশ। যে কারণে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো তাদের ভাষার ব্যাপারে খুব সচেতন। যেমন জাপানে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যকীয় হচ্ছে জাপানী ভাষা শেখা। আমরা বাঙালী, বাংলা আমাদের মায়ের মুখের ভাষা। আমরা যদি নিজেদের খামখেয়ালিপনায় সেই ভাষাকে কদর্য রূপ দিই তা হলে মায়ের ভাষাকে অশ্রদ্ধা করা হয়। প্রমিত উচ্চারণ যেমন দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে তেমনি আঞ্চলিক উপভাষাগুলোও একইভাবে অবহেলিত। আমাদের পূর্বসূরিরা জীবন দিয়ে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছেন। তাঁদের কাছে আমাদের রক্তের ঋণ রয়েছে। আর আমরা সেই ঋণের দায় এড়াতে পারি না। মাতৃভাষার শুদ্ধ ব্যবহারের মাধ্যমেই সেই ঋণ কিছুটা হলেও শোধ হতে পারে। উত্তরসূরি হিসেবে এটুকু কি আমরা করতে পারি না? বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×