ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ কেন বারবার ব্যর্থ?

প্রকাশিত: ১২:৪২, ২৬ জানুয়ারি ২০২০

বাংলাদেশ কেন বারবার ব্যর্থ?

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গত বছর নেপালে অনুষ্ঠেয় এসএ গেমস ফুটবলে ভারত-পাকিস্তান ছিল না বিধায় সবাই ধরেই নিয়েছিলেন ওই আসরে হেসেখেলেই স্বর্ণপদক জিতবে বাংলাদেশ অনুর্ধ-২৩ জাতীয় দল। কিন্তু হতাশাজনক খেলে বাংলাদেশ জেতে তাম্রপদক। সেই দুঃখ উপশমের ভাল সুযোগ ছিল সদ্য সমাপ্ত আন্তর্জাতিক ফুটবল আসর বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে। কেননা এক বাংলাদেশ বাদে অংশ নেয়া বাকি ৫টি দলেই সিনিয়র ফুটবলারদের অভাব ছিল। বলা যায় নামেমাত্র জোড়াতালি দিয়ে প্রতিটি দেশই তাদের জাতীয় দল পাঠায়। ফলে বাংলাদেশ দলের ফাইনালে খেলার সুবর্ণ সুযোগ ছিল। কিন্তু এখানেও ব্যর্থ হয় তারা। সেমিতেই শেষ হয়ে যায় তাদের সব স্বপ্ন-আশা। স্বাভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, কেন বাংলাদেশ দলের এই অধঃপতন। এর জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক ফুটবলার ও বর্তমানে ক্লাব কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক। বুরুন্ডির বিপক্ষে সেমির ম্যাচে ফুটবলারদের দায়বদ্ধতার অভাব ছিল বলে মনে করেন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক। যে কারণে ম্যাচ হেরে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে লাল-সবুজবাহিনীর। আরেক সাবেক ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন চুন্নু মনে করেন, ফরোয়ার্ডদের গোল মিসের মহড়ার খেসারত দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ঘরোয়া ফুটবলে বিদেশী স্ট্রাইকারের প্রাধান্য থাকায় দেশীয় স্ট্রাইকাররা ভাল করতে পারছেন না, এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘লীগে যারা সামনে খেলে, তারা সবাই বিদেশী। তাহলে আমাদের স্থানীয় খেলোয়াড়রা কিভাবে গোল করবে?’ এই কথাটাই ফুটবল বিশ্লেষক-সমালোচকরা বলছেন দিনের পর দিন। গণমাধ্যমে এ নিয়ে হয়েছে বিস্তর লেখালেখি। কিন্তু কে শোনে কার কথা। দেশের স্ট্রাইকাররা করতে পারেন না গোল, একের পর এক গোল মিসে, ম্যাচ হেরে মাথা নুইয়ে ছাড়তে হয় মাঠ। সর্বশেষ নজির বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে বুরুন্ডির বিপক্ষের ম্যাচ। ৩-০ গোলে হেরে সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় জামাল ভুঁইয়াদের। অথচ ম্যাচের তথ্য-উপাত্ত বলছে, বুরুন্ডির চেয়ে বল দখল কিংবা গোলের সুযোগ তৈরিতে ঢের এগিয়ে ছিল বাংলাদেশই। প্রতিপক্ষের রক্ষণে বারবার থমকে যাওয়া আরও একবার হারের কারণ, বলছেন বিশ্লেষকরাও। এ প্রসঙ্গে কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘গোল পেতে গেলে সুযোগ কাজে লাগাতে হয়। সুযোগগুলো যে কাউকেই কাজে লাগাতে হবে। সাবেক ফুটবলার চুন্নু বলেন, ‘ফুটবল হলো গোলের খেলা। গোল না করতে পারলে জিতব কিভাবে? ওরা সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। আমরা পারিনি। আমাদের খেলোয়াড়রা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না।’ ঘরের মাঠ কিংবা পরের মাঠ, আন্তর্জাতিক ফুটবলে কেবলই হতাশা সঙ্গী হচ্ছে বাংলাদেশের। এমন সঙ্কট থেকে উত্তরণে বাফুফের যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি ফুটবলারদের মাঝেও দায়বদ্ধতা থাকা খুব জরুরী। অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া বলেন, ‘আমাদের অনেক কিছুই নেই। আমাদের আরও অনেক উন্নতি করতে হবে যদি র‌্যাঙ্কিংয়ে ওপরে উঠতে চাই। বর্তমান কিংবা সাবেক, সবার কণ্ঠেই একই সুর, ফুটবলে একটা জাগরণ প্রয়োজন খুব। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত জিতেছে ৫টি ট্রফি। ১৯৯৯ ও ২০১০ সালে জেতে এসএ গেমস ফুটবল, ২০০৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ, ১৯৮৯ সালে প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ এবং ১৯৯৫ সালে চার জাতি আমন্ত্রণমূলক ফুটবল টুর্নামেন্টের শিরোপা। তার মানে শেষ শিরোপা জিতেছে ২০১০ সালে, ১০ দশ বছর আগে। সর্বশেষ কোন আসরের ফাইনালে উঠেছিল ৫ বছর আগে এই বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপেই। এখন দেখার বিষয়, ষষ্ঠ শিরোপা জেতার জন্য আরও কত বছর অপেক্ষায় থাকতে হয় লাল-সবুজবাহিনীকে। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম আবাহনী আয়োজিত শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাবকাপ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন দলকে দেয়া হয় ৫০ হাজার ডলার আর রানার্সআপ দল পায় ২৫ হাজার ডলার। অথচ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন দলকে দেয়া হয়েছে ৩০ হাজার ডলার এবং রানার্সআপ দল পেয়েছে ২৫ হাজার ডলার।
×