ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ণের থাবা ফসলি জমিতে

প্রকাশিত: ১১:৫৪, ১৬ জানুয়ারি ২০২০

অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ণের থাবা ফসলি জমিতে

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ গত এক যুগে বগুড়ায় ফসলি ভূমি কমেছে প্রায় ৪৫ হাজার হেক্টর। এই পরিমাণ ভূমির উৎপাদন কমেছে অন্তত চার লাখ টন। অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ণের থাবা, নগরীতে ডেভেলপারের আধিপত্য, একসঙ্গে থাকা পরিবার ভেঙ্গে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি গড়ে ওঠা, ভিন জেলার অধিবাসীদের বগুড়ায় অভিবাসী হওয়ার চাপ পড়েছে ফসলি ভূমির ওপর। বগুড়া উত্তরাঞ্চলের মধ্যবর্তী নগরী হওয়ায় এই এলাকার ভূমির দাম অন্য এলাকার চেয়ে বেশি। রাজধানী ঢাকা থেকে বগুড়া হয়ে উত্তরাঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছয় লেনের মহাসড়কের কাজ চলমান থাকায় বগুড়া নগরী ‘কি পয়েন্টে’ পরিণত হয়েছে। বগুড়ায় আবাসন গড়তে বাইরের জেলার লোকজনের আগ্রহ বেড়েছে। প্রায় ৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বগুড়া পৌর এলাকা ছাড়াও কাছাকাছি চারদিকে ভূমি কেনাবেচা হচ্ছে। বগুড়ার ভূমির দাম বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। চাকরি বা নানা কারণে যারা বাইরের জেলা থেকে বগুড়ায় আসেন তাদের বড় একটি অংশই শেষ পর্যন্ত বগুড়ার অভিবাসী হয়ে যান। প্রথমে তারা ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তারপর বসতবাড়ি গড়ার জন্য জায়গা কেনেন। একটা পর্যায়ে বাড়ি নির্মাণ করেন। কেউ ইনস্টলমেন্টে ফ্লাট বাড়ি কেনেন। বগুড়া নগরীতে হালে ডেভেলপারের সংখ্যা বেড়েছে। যারা নগরীর ভেতরে বিভিন্ন পাড়া ও মহল্লা ছাড়াও শহরতলি এলাকা এবং পৌর এলাকার বাইরে ভূমি কিনে বহুতল ফ্লাট বাড়ি নির্মাণ করছে। একই সঙ্গে নগরী ও আশপাশে সরকারী, বেসরকারী ভবন, দেশীয় ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ভবন, শপিংমল, উন্নতমানের হোটেল রেস্টুরেন্ট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ নানা ধরনের স্থাপনা গড়ে উঠছে। সামজিক অবস্থানে একসঙ্গে বাস করা পরিবারগুলো ভেঙ্গে খ-িত হয়ে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি বেড়ে যাচ্ছে। অধিক মানুষের বাসস্থান গড়তে ব্যবহার হচ্ছে ফসলি জমি। সম্প্রসারিত হচ্ছে নগরায়ণ প্রক্রিয়া। বগুড়ার উপজেলাগুলো একইভাবে ফসলি ভূমিতে আবাসন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারী-বেসরকারী স্থাপনা গড়ে উঠছে। বিশেষ করে পূর্বের গাবতলি, উত্তরে শিবগঞ্জ, পশ্চিমের কাহালু, দক্ষিণের শাজাহানপুর ও শেরপুর উপজেলায় এই প্রবণতা বেশি। এই পাঁচ উপজেলার সঙ্গে পাকা সড়কে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল। পনেরো মিনিট থেকে আধা ঘণ্টার মধ্যে যান্ত্রিক যানবাহনে (বাস, মিনিবাস, অটোরিক্সা, ব্যাটারিচালিত টোটো) বগুড়া নগরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। সকাল থেকে মধ্য রাতঅবধি যানবাহন চলাচল করে। যাদের গাড়ি আছে তারা উপশহরে বাসের আমেজ পান। বগুড়া নগরীও উন্নত নগরীতে পরিণত হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার মতো শপিংমল, কেন্দ্রীয়ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ বহুতল শপিং কমপ্লেক্স, বড় কোম্পানি ও বহুজাতিক কোম্পানির কাস্টমার কেয়ার সেন্টার, অত্যাধুনিক মার্কেট, ফোর ও ফাইভ স্টার মানের হোটেলসহ উন্নত অবকাঠামো গড়ে উঠছে। সর্বোপরি বগুড়া মহাস্থানগড় দেশের সবচেয়ে প্রাচীন নগরী হওয়ায় বগুড়া পর্যটক নগরীতে পরিণত হয়েছে। এক সূত্র জানায়, এক যুগ আগে বগুড়ায় ফসলি ভূমির পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টর। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার হেক্টরে। এর বাইরে যে ৫৩ হাজার হেক্টর অনাবাদি ভূমি ও ভিটে ছিল সেখানেও স্থাপনা নির্মিত হচ্ছে। বগুড়ার ভূমি তিন ফসলি। ফসল বহুমুখীকরণের আওতায় তিন ফসল ছাড়াও কখনও বাড়তি ফসল উৎপাদিত হয়। কৃষি বিভাগ জানায়, ফসলি ভূমি কমেছে ঠিকই তবে উৎপাদনের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না। বর্তমানে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে এবং সকল ফসলের উচ্চ ফলনশীল জাত আসায় কম ভূমিতে অধিক পরিমাণ ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। বর্তমানে বগুড়ায় খাদ্যশস্য উদ্বৃত্তের পরিমাণ প্রায় ৬ লাখ মেট্রিক টন। চাহিদা মিটিয়ে খাদ্য রফতানি শুরু হয়েছে।
×