ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মাহবুব রহমান

আজ হতে শতবর্ষ আগে...

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ৯ জানুয়ারি ২০২০

আজ হতে শতবর্ষ আগে...

আজ হতে শতবর্ষ আগে, কেমন ছিল উপমহাদেশের রাজনীতি, বাংলা ও বাঙালীর জীবন সংগ্রামের সেই দিনগুলো? ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকে অগ্রাহ্য করার দৃঢ অঙ্গীকারগুলো যখন বাংলার মানুষকে উজ্জীবিত করতে শুরু করেছিল, যখন ঔপনিবেশিক শৃঙ্খলমুক্তির জয়গান এ অঞ্চলকে দৃঢ়চিত্ত সংগ্রামের অবয়ব দিতে শুরু করেছিল, যা সূচিত হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের কলমে ধ্বনিত ‘আমারা সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি.... আহবানের মধ্যে দিয়ে। আজ হতে শতবর্ষ আগে, ১৯২০ সালে- শৃঙ্খলিত বাংলার মাতৃক্রোড়ে জন্মেছিলেন বাংলার শহ¯্র কালের শ্রেষ্ঠ সন্তান, মাতৃভূমের শৃঙ্খলমুক্তির অবিনশ্বর কণ্ঠস্বর, মানবিক জগত নির্মাণের শ্রেষ্ঠতম পথদ্রষ্ট্রা, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সকল রাজনৈতিক কৌলিন্যকে ম্লান করে দিয়ে যিনি বাংলার মানবিক জাগরণের মহা ¯্রষ্টার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে, স্বীয় স্বপ্নে গড়ে তুলেছিলেন স্বাধীন-সার্বভৌম ‘বাংলাদেশ’। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। তিনি আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই মহান নেতা। শতবর্ষ পূর্বে, বঙ্গবন্ধুর জন্মক্ষণে, সে বছরটিতে অর্থাৎ ১৯২০ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনে শৃঙ্খলিত উপমহাদেশের তথা বাংলার সামাজিক- রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাৎপর্যময় ও ঘটনাবহুল পরিবর্তনগুলো বিশেষভাবে লক্ষণীয় ছিল। ১৯২০ সাল, যে বছর ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সে বছর উপমহাদেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। ওই বছর ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্ব পদে আরোহণ করেন মহাত্মা গান্ধী। তাঁর নির্দেশে শুরু হয়েছিল গণবিক্ষোভ, বিলেতি কাপড়, বিদ্যালয়, আদালতসহ সকল প্রতিনিধিত্বসূচক সকল প্রতিষ্ঠান বয়কোট। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষে গণঅংশগ্রহণের রাজনীতিতে গান্ধী পরিবর্তন ঘটালে, শুরু হয় প্রথম সর্বভারতীয় সত্যাগ্রহ আন্দোলন। ভারতীয়দের বিনাবিচারে বন্দী করার ব্রিটিশ পদক্ষেপকে মহাত্মা গান্ধী ‘দানবীয়তা’ বলে আখ্যায়িত করে ঘোষণা করলেন তাঁর অহিংস আন্দোলন। যখন ব্রিটিশ শাসকদের চক্রান্তে তুরস্কের খলিফার ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল ভারতীয় সম্প্রদায়, তাদের সমর্থন নিয়েই গান্ধী কংগ্রেসের শীর্ষ পদের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ১৯২০ সালের ডিসেম্বরে কলকাতার বার্ষিক অধিবেশনে ঘোষিত হলো জাতীয় কংগ্রেসের চূড়ান্ত লক্ষ্য-স্বরাজ। যেখানে সত্যগ্রহ ধারণার সঙ্গে অহিংসার নেতিবাচক ধারণা মিলিয়ে সম্পূর্ণ এক নতুন ধরনের ব্রিটিশ বিরোধিতার পথ তৈরি করলেন মহাত্মা গান্ধী। সে বছর দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের নেতৃত্বে বাংলার বিপ্লবীদের সঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছিল। ১৯২০ সালে কলকাতা কংগ্রেস অধিবেশনের ডাকে সাড়া দিয়ে শিক্ষকতার চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে সার্বক্ষণিক রাজনীতিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন চট্টগ্রামের মাস্টার দা সূর্যসেন-চারুবিকাশ দত্ত প্রমুখ তরুণ নেতৃত্ব। সকলেরই লক্ষ্য ছিল মাতৃভূমির স্বাধীনতা। যে স্বাধীনতার স্বপ্ন বুকে লালন করে ক্যামব্রিজের ছাত্র আইসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাংলায় ফেরার প্রহর গুনছিলেন নেতাজী সুভাষ বসু। তখনও স্বরাজ তথা স্বাধীনতার বাণী নিয়ে বাংলার পথে-প্রান্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, আর ঘরে ঘরে জন্ম নিচ্ছিল ক্ষুদিরাম। একই বছর অর্থাৎ ১৯২০ সালে বাংলা কাব্যাঙ্গনে আগমন হলো কাজী নজরুলের। ইতোমধ্যে ১ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকায়’ মুদ্রিত হয়েছিল কাজী নজরুলের প্রথম কবিতা ‘মুক্তি’ । ১৯২০ সালের মার্চে ‘৪৯ বেঙ্গলী রেজিমেন্ট’ ভেঙ্গে গেলে সৈনিক কাজী নজরুল ফিরে এলেন কলকাতায়। মনোনিবেশ করলেন সাহিত্য সৃষ্টিতে। বাংলা ও বাঙালীর সংস্কৃতিক জাগরণের সূচনা হলো নজরুলের কলমে। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণকারী শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শিক্ষার্জন ঘটে গোপালগঞ্জের মিশনারি স্কুলে। এদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের পুরোধা ব্যক্তিত্ব যে শেখ মুজিব, তা নির্ণয়ে এ দেশকে ২৩ বছরের বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার কুচক্রিদের শৃঙ্খল ভেঙে বেরিয়ে এলে, ততদিনে তিনি শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবে পরিণত হলেন। তিনি সংগ্রামের ¯্রষ্টা বলেই সৃষ্টি করেছেন বাঙালী জাতির অভ্যুদয়। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। ঢাকা থেকে
×