ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নাচ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চাই ॥ সুদেষ্ণা স্বয়ম্প্র্রভা তাথৈ

প্রকাশিত: ০৯:০২, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯

নাচ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চাই ॥ সুদেষ্ণা স্বয়ম্প্র্রভা তাথৈ

নৃত্যশিল্পী সুদেষ্ণা স্বয়ম্প্রভা তাথৈ। শিশুকাল থেকে বেড়ে উঠেছেন সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে। শৈশবে নাচে হাতেখড়ি দেশের বরেণ্য নৃত্য শিক্ষক মা শর্মিলা বন্দোপাধ্যায়ের কাছে। বাবা ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের প্রখ্যাত বাচিক শিল্পী। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মণিপুরী নৃত্যকলায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন, ভাল ফলের স্বীকৃতি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বর্ণপদক পেয়েছেন। দেশের মেধাবী তরুণ নৃত্যশিল্পী, কোরিওগ্রাফার ও নৃত্য-শিক্ষক তাথৈ ছায়ানট মিলনায়তনে আজ শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় নৃত্য পরিবেশন করবেন । পরম্পরা ধ্রুপদী এ নৃত্য সন্ধ্যার আয়োজন করেছে নৃত্যনন্দন। আজকের আয়োজন ও নৃত্য নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়। আজকের আয়োজন নিয়ে বলুন। তাথৈ : আজ আমি মণিপুরী নৃত্য করব। এরমধ্যে একটা ‘লাস্য’ আরেকটা ‘তান্ডব’ নাচ। ‘তান্ডব’ আইটেমটা আমার এখনকার গুরু কলকাতার বিম্বাবতী দেবীর খুব সাম্প্রতিক কম্পোজিশন, আর ‘লাস্য’ আইটেমটা গুরু বিপেন সিংয়ের। বাংলাদেশে মণিপুরী ঘরানাটা ওনারই। আমাদের এখানের বেশিরভার শিল্পী গুরু বিপেন সিংয়ের স্টাইলটাই ফলো করে। ‘লাস্য’ নাচের কৃষ্ণ রূপ বর্ণনাটা করব। প্রথম নাচটা আমি করব। এরপর ভরতনাট্যম পরিবেশন করবেন নৃত্যশিল্পী মারিয়া ফারিহ্ উপমা এবং কত্থক নৃত্য পরিবেশন করবেন শিল্পী মৌমিতা রায় জয়া ও এসএম হাসান ইশতিয়াক ইমরান। এ দুজনই অনেক প্রতিভাবান নৃত্যশিল্পী। নাচের শুরুটা কেমন ছিল? তাথৈ : আমার নাচের শুরু মায়ের (শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়) কাছে। এরপর ছায়ানটে বেলায়েত হোসেন খান ও তামান্না রহমানের কাছে শিখেছি। ভারতীয় দূতাবাসের আয়োজনে কলাবতী দেবীর কাছে মণিপুরী নৃত্য এবং অধ্যাপক সি ভি চন্দ্রশেখরের কাছে ভরতনাট্যম শিখেছি। এ ছাড়া ওড়িশি নৃত্য শিখেছি বেনজির সালামের কাছে। উদয়শংকর কালচারাল সেন্টারে উপমহাদেশের প্রখ্যাত নৃত্যগুরু অমলা শংকরের কাছে নাচ শিখতে পারা আমার জীবনের অনেক বড় পাওয়া। নাচ নিয়ে সম্প্রতি জার্মানি সফর সম্পর্কে বলুন তাথৈ : আমি এ বছরের নবেম্বর মাসটা জুড়ে জার্মানি ঘুরে এলাম নাচ নিয়ে। ওখানের একটা থিয়েটার ড্যান্স কোম্পানির সঙ্গে আমি ইনটেনশিপ করে এসেছি। জার্মান কালচারাল সেন্টার থেকে আমাকে সিলেক্ট করে পাঠানো হয়েছিল। আর্টিস্টিক ইনটেনশিপ করে এসেছি ওদের প্রফেশনাল ড্যান্স কোম্পানির সঙ্গে। এটা আমার জীবনের খুবই স্মরণীয় হয়ে থাকার মতো একটি বিষয়। এত কিছু শিখেছি, জেনেছি এবং দেখেছি যে কিভাবে কাজ করতে হয়। আমেরিকান বা ইউরোপিয়ানদের কাজ দেখে আমরা খুব মুগ্ধ হই। কিন্তু কিভাবে এবং কেমন করে তারা এটা করে, সেটা দেখে আসা আমার জন্য খুবই জরুরী ছিল। তাদের কাজগুলো কেন অসাধারণ হয় এটা বুঝতে পারলাম। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্টুডিওতে বসা, ট্রেনিং এই ব্যাপারটা আমি খুব উপলব্দি করেছি ওখানে গিয়ে। একাডেমিক শিক্ষা সম্পর্কে কিছু বলুন তাথৈ : ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেছি নৃবিজ্ঞানে। পরে ভারত সরকারের আইসিসিআর বৃত্তি নিয়ে রবীন্দ্রভারতী থেকে মণিপুরী নৃত্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে মাস্টার্স করেছি। রবীন্দ্রভারতী থেকে স্বর্ণপদক পাওয়া আমার জন্য বড় প্রাপ্তি। এখন ইচ্ছা আছে নৃত্যকলা বিষয় নিয়েই পিএইচডি করার। নাচ নিয়ে আরও গবেষণা করতে চাই। আরও জানতে চাই। নিজে শিখতে চাই, অন্যদের শেখাতে চাই। নাচের মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ সম্ভব? তাথৈ : এ প্রজন্মের মধ্যে নাচের ব্যাপারে আগ্রহ বেড়েছে। এখন অনেকেই নাচের মাধ্যমে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখছেন। আমি মনে করি, চাকরি যেমন একটা নির্ধারিত সময় মেনে করতে হয়, নাচেও যদি সাত-আট ঘণ্টা সময় দেয়া যায়, তবে নাচের মাধ্যমে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। এখন সবার মধ্যেই অস্থিরতা বেশি। অল্প সময়ে তারকা হতে চায়। তারকা হওয়ার মোহ শিল্পী সত্তাকে ধ্বংস করছে। বর্তমান ব্যস্ততা সম্পর্কে বলুন তাথৈ : ছায়ানটে শিক্ষকতা করছি। এ ছাড়া মায়ের নাচের প্রতিষ্ঠান ‘নৃত্যনন্দন’এ শিক্ষক হিসেবে আছি। পাশাপাশি আমি নিজেও শিখছি। রবীন্দ্রভারতীতে মাস্টার্স করার সময় কলকাতায় নাচ শিখেছি নৃত্যগুরু কলাবতী দেবীর মেয়ে বিম্বাবতী দেবীর কাছে। এখনও ঢাকা থেকে মাঝেমধ্যেই কলকাতায় গিয়ে তার কাছে নাচ শিখছি। চলচ্চিত্রে অভিনয় নিয়ে বলুন তাথৈ : গৌতম ঘোষ পরিচালিত ‘মনের মানুষ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে অসংখ্য মানুষের ভালবাসা পেয়েছি। সামনে এ রকম ভাল গল্পে অভিনয়ের সুযোগ থাকলে অভিনয় করব। কিন্তু নাচ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চাই। আমার মূল জায়গা হলো নাচ। -গৌতম পান্ডে
×