ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জয় দিয়ে শুরু চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের

প্রকাশিত: ১১:৫৭, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯

জয় দিয়ে শুরু চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ মাঠে গড়িয়েছে বুধবার। প্রায় খাঁ খাঁ গ্যালারি নিয়ে বেলা ১টা ৩০ মিনিটে মুখোমুখি হয় সিলেট থান্ডার ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি সংবলিত বিপিএল লোগো খোদাই করা বিশেষ স্বর্ণের কয়েনে টস হয়। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী ম্যাচে সিলেটকে ৫ উইকেটে হারিয়ে শুভ সূচনা করেছে চট্টগ্রাম। টস হেরে আগে ব্যাট করে মোহাম্মদ মিঠুনের ব্যাটিং তা-বে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৬২ রান তোলে সিলেট। জবাবে খেলতে নেমে ১৯ ওভারেই ৫ উইকেট হারিয়ে ইমরুল কায়েস ও চ্যাডউইক ওয়ালটনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ১৬৩ রান তুলে জয় ছিনিয়ে নেয় চট্টগ্রাম। সিলেটের ইনিংস শেষ হওয়ার পর গ্যালারিতেও দর্শক উপস্থিতি বেড়েছে। তবে প্রথম ম্যাচেই প্রযুক্তির ব্যবহার ছিল ত্রুটিপূর্ণ। স্পাইডারক্যাম স্টেডিয়ামের এক প্রান্তে ঝুলে ছিল অকেজো হয়ে। তাই ড্রোন দিয়েই কাজ চালিয়েছে বিপিএল কর্তৃপক্ষ। ম্যাচশেষে দক্ষিণ-পশ্চিম গ্যালারির ওপরে বসানো জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখা যায় ‘চট্টগ্রাম চ্যালেন উইন বাই ৫ উইকেটস’ যা হওয়া প্রয়োজন ছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। এ বিষয়গুলো এড়িয়ে যায়নি দর্শকদেরও, তারাও আক্ষেপ জানিয়েছেন। আগেই জানা গিয়েছিল অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে ছাড়াই এবার বঙ্গবন্ধু বিপিএলে যাত্রা শুরু করতে হবে চট্টগ্রামকে। তার পরিবর্তে ইমরুলের নেতৃত্ব দেয়ার কথা থাকলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের রায়াদ এমরিটের কাঁধেই সেই দায়িত্ব চেপেছে। আর সিলেট নেমেছিল বিপিএলে প্রথমবার অধিনায়কত্ব পাওয়া মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের নেতৃত্বে। টস জিতে চট্টগ্রাম অধিনায়ক এমরিট সিলেটকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠান। তাদের শুরুটাই হয়েছে বাজে রকমের। ক্যারিবিয়ান তারকা জনসন চার্লসের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামা রনি তালুকদার ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই রুবেল হোসেনের বলে সাজঘরে ফেরত যান মাত্র ৫ রান করে। তবে মিঠুনকে নিয়ে এরপর চার্লস ঝড় তোলেন। পঞ্চম ওভারে এমরিটকে টানা চারটি বাউন্ডারিও হাঁকান। তিনি আর মিঠুন পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ৪৮ রান তুলে দেন দলীয় স্কোরবোর্ডে। ৪৬ রানের জুটি ভাঙ্গে সপ্তম ওভারে। ২৩ বলে ৭ চারে ৩৫ রান করে নাসুম আহমেদের বাঁহাতি স্পিনে বোল্ড হন চার্লস। দুই ওভার পরেই আবার জীবন মেন্ডিসকে (৪) শিকার করেন এমরিট। হঠাৎ করেই কিছুটা বিপদ ঘনিয়ে আসে সিলেটের ওপর। কিন্তু ১৯ বলে ১৫ রান করা ধীরস্থির মিঠুন হঠাৎই ফুসে ওঠেন, তিনি ইনিংসের ১১তম ওভারে মুক্তার আলীকে ছক্কা হাঁকিয়ে খোলস থেকে বেরিয়ে আসেন। ইনিংসের ১৩তম ওভারে তা-ব চালান নাসুমের ওপর। আগের ৩ ওভারে মাত্র ১০ রান দিয়ে ১ উইকেট নেয়া নাসুমকে ওই ওভারে ৩ ছক্কা হাঁকিয়ে সবমিলিয়ে ২৪ রান তুলে নেন মিঠুন। অধিনায়ক মোসাদ্দেক সুস্থির থেকে তাকে শুধু সঙ্গ দিয়ে গেছেন। ৩০ বলে মিঠুন অর্ধশতক ছুঁয়ে ফেলেন ১৪তম ওভারে নাসির হোসেনকে ছক্কা হাঁকিয়ে। টি২০ ক্যারিয়ারে এটি তার নবম ফিফটি। ৫ ছক্কায় এবারের আসরে প্রথম অর্ধশতকের মালিক হন মিঠুন। চতুর্থ উইকেটে মিঠুন-মোসাদ্দেকের মাত্র ৬৪ বলে ৯৬ রানের ঝড়োগতির জুটিতে বড় সংগ্রহে পৌঁছে সিলেট। মোসাদ্দেক ৩৫ বলে ১ চার, ১ ছক্কায় ২৯ রানে আউট হলেও মিঠুন শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন। তিনি ৪৮ বলে ৪ চার, ৫ ছক্কায় ক্যারিয়ারসেরা ৮৪ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। নির্ধারিত ২০ ওভারে মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে ১৬২ রান তোলে সিলেট। জবাব দিতে নেমে এলোমেলো শুরু ছিল চট্টগ্রামের। একবার জীবন ফিরে পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি দীর্ঘদিন পর ওপেনিংয়ে নামা জুনায়েদ সিদ্দিকী। দলীয় ২০ রানে তিনি ফিরে গেছেন মাত্র ৪ রান করে। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু জুনায়েদকে ফেরানোর পরের বলেই আবার নাসির হোসেনকে (০) শিকার করেন। আরেক ওপেনার আভিস্কা ফার্নান্দো অবশ্য দ্রুত ব্যাট চালাতে শুরু করেন। কিন্তু তিনিও পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে (ষষ্ঠ) শেষ বলে সাজঘরে ফেরেন ২৬ বলে ৩ চার, ৩ ছক্কায় ৩৩ রান করে। ক্যারিবীয় পেসার ক্রিসমার সান্তোকি তাকে তুলে নেন দলীয় ৪২ রানে। জিম্বাবুইয়ান রিক্রুট রায়ান বার্লও (৯ বলে ৩) হতাশ করেন। দলীয় ৬৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়েই পড়ে চট্টগ্রাম। কিন্তু এরপর ইমরুল ও ওয়ালটন দুর্দান্ত এক জুটি গড়ে দলকে অভীষ্ট লক্ষ্যের কাছে নিয়ে যান। ইমরুল মাত্র ২৯ বলে ক্যারিয়ারের নবম ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন। তিনি ওয়ালটনের সঙ্গে মাত্র ৫৩ বলে ৮৬ রানের জুটি গড়ে ১৮তম ওভারের চতুর্থ বলে সাজঘরে ফেরেন, তখন চট্টগ্রাম জয় থেকে মাত্র ১৩ রান দূরে। মাত্র ৩৮ বলে ২ চার, ৫ ছক্কায় ৬১ রান করেন ইমরুল। ১ ওভার হাতে রেখেই বাকি রান তুলে ফেলে চট্টগ্রাম। ওয়ালটন ৩০ বলে ৩ চার, ২ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ৪৯ রানে। নাজমুল অপু ২ উইকেট নেন ২৩ রান দিয়ে। ৫ উইকেটের জয়ে বঙ্গবন্ধু বিপিএলে দারুণ সূচনা করে চট্টগ্রাম। স্কোর ॥ সিলেট থান্ডার ইনিংস- ১৬২/৪; ২০ ওভার (মিঠুন ৮৪*, চার্লস ৩৫, মোসাদ্দেক ২৯; রুবেল ২/২৭)। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ইনিংস- ১৬৩/৫; ১৯ ওভার (ইমরুল ৬১, ওয়ালটন ৪৯*, আভিস্কা ৩৩; অপু ২/২৩)। ফল ॥ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ৫ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ ইমরুল কায়েস (চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স)।
×