মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আকস্মিক আফগানিস্তান সফর করেছেন। আফগানিস্তানে অবস্থানরত মার্কিন সৈন্যদের সঙ্গে থ্যাঙ্কস গিভিং ডে পালনের জন্য ট্রাম্প বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে আটটায় ব্যাপক গোপনীয়তার মধ্যে কাবুল পৌঁছান। মোট সাড়ে তিন ঘণ্টা আফগানিস্তান অবস্থান করেন ট্রাম্প। দেশটির বাগরাম বিমান ঘাঁটিতে পৌঁছে তিনি মার্কিন সৈন্যদের সঙ্গে খানিকটা সময় কাটান, সৈন্যদের মাঝে নিজ হাতে খাবার পরিবেশন করেন ও তাদের সঙ্গে সেলফি তোলেন। এরপর আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন সৈন্যদের উদ্দেশে বক্তৃতা করেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বক্তৃতায় বলেন, আফগান তালেবানরা ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি সমঝোতার আসতে চায়। একই সঙ্গে আফগানিস্তানের মাটি থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়টিও উল্লেখ করেন। ছবিতে ট্রাম্পকে মার্কিন সৈন্যদের মাঝে হাসিমুখে খাবারের থালা হাতে এগিয়ে যেতে দেখা যায়। ট্রাম্প পরিবেশিত খাবারের তালিকায় ছিল টার্কির মাংস, ভুট্টার আটা দিয়ে তৈরি রুটি ও সেদ্ধ আলুর তরকারি। এদিকে ট্রাম্পের আফগানিস্তান সফরের পরদিন শুক্রবার তালেবান বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় রাজি। খবর বিবিসি, এএফপি ও ওয়াশিংটন পোস্ট অনলাইনের।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর মার্কিন সৈন্যরা আফগানিস্তান থেকে তালেবান জঙ্গীদের উৎখাতে হামলা চালায়। এরপর দীর্ঘ ১৮ বছর তারা আফগানিস্তানে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দফা আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর এখনও দেশটিতে প্রায় ১৩ হাজার মার্কিন সৈন্য অবস্থান করছে। সংখ্যা কমিয়ে আট হাজার ছয়শতে নামিয়ে আনার কথা বলেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর আফগানিস্তানে এটিই ট্রাম্পের প্রথম সফর। তালেবানদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু ও দু’পক্ষের মধ্যে বন্দী বিনিময়ের দিন কয়েক পর থ্যাংকস গিভিং ডেতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট দক্ষিণ এশিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত এ দেশটি সফর করলেন। ট্রাম্পের ‘দীর্ঘ নীরবতা’ নিয়ে যেন কোন ধরনের সন্দেহ না জাগে, সেজন্য আফগান সফরের সময়ও নিয়মিত বিরতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের টুইটার এ্যাকাউন্ট থেকে একের পর এক পোস্ট দেয়ার ব্যবস্থা করে পেন্টাগন। আফগানিস্তানের মার্কিন সৈন্যদের সঙ্গে রাতের ভোজ সেরে মধ্যরাতের আগেই কাবুল ত্যাগ করেন ট্রাম্প। বেশ ক’জন উপদেষ্টাকে সঙ্গে নিয়ে আফগানিস্তান নামা প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানান মার্কিন জয়েন্ট চীফস চেয়ারম্যান মার্ক মিলে। সৈন্যদের উদ্দেশে দেয়া বক্তৃতায় ট্রাম্প আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা আরও কমিয়ে আনা হবে বলেও ঘোষণা দেন। ট্রাম্প বলেন, ‘চুক্তি কিংবা পূর্ণাঙ্গ বিজয় অর্জিত হওয়া পর্যন্ত আমরা থাকছি।’ তারা (তালেবান) খুব করে একটি চুক্তি করতে চাইছে। আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি তার বক্তৃতায় আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে তাদের ধন্যবাদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আফগান নিরাপত্তা বাহিনী এখন দেশের নেতৃত্ব নেবে। তালেবানরা গত সপ্তাহে কাতারের দোহাতে মার্কিন প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফের শান্তি আলোচনা শুরুর কথা নিশ্চিত করেছিল।
আগের আলোচনাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র শান্তিচুক্তির পথে অগ্রসর হওয়ার লক্ষ্যে আফগানিস্তানে যুদ্ধবিরতির ওপর জোর দিলেও তালেবানরা তাতে সাড়া দেয়নি। বৃহস্পতিবার বাগরাম বিমানঘাঁটিতে দেয়া বক্তৃতায় ট্রাম্প প্রসঙ্গটির অবতারণা করেন।
তিনি বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। বলেছি, যুদ্ধবিরতি হোক। তারা সে সময় যুদ্ধবিরতি চায়নি, এখন চাইছে। আমার ধারণা, বিষয়টি এখন এভাবেই কার্যকর হবে। শান্তি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই আফগান সরকারকে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলেও, তালেবানরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দফারফার আগে কাবুল প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে নারাজ। ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর টুইটারে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি বলেছেন, দুই পক্ষই (যুক্তরাষ্ট্র ও আফগান সরকার) মনে করে, তালেবানরা যদি শান্তি চুক্তিতে পৌঁছাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়, তাহলে তাদের অবশ্যই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়া উচিত।
মার্কিন সৈন্যদের ভূয়সী প্রশংসা করে ট্রাম্প বলেন, আপনারা বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন ও অন্যতম দীর্ঘ লড়াই মোকাবেলা করছেন। তাই আমি আপনাদের সম্মানে থ্যাঙ্কস গিভিং ডিনার পরিবেশন করতে এসেছি। টার্কির মাংস মুখে তুলে ট্রাম্প বলেন, আমি এত সুস্বাদু মাংস আর খাইনি। খাওয়া শেষে ট্রাম্প বলেন, আমি আশা করছি আপনারা সবাই একটি নৈশভোজ উপভোগ করেছেন। ট্রাম্পের আফগানিস্তান সফরের পরদিন তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা ওয়াশিংটনের সঙ্গে ফের শান্তি আলোচনা শুরু করতে রাজি। শুক্রবার তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ফের আলোচনার টেবিলে বসতে চাই। অবশ্য চলতি বছরের শুরুতে এই আলোচনা ভেস্তে গিয়েছিল। জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, আমাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালেবানের শান্তি আলোচনা যে জায়গায় থেমে গিয়েছিল আমরা ঠিক সেখান থেকেই আবার শুরু করতে চাই। তালেবানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র কমান্ডার বলেন, ট্রাম্পের আফগানিস্তান সফর একটি ভাল উদ্যোগ।
