প্রতিটি সফল মানুষের ব্যর্থতার গল্প আছে। একবারে কেউ সফল হননি। সফল উদ্যোক্তা, রাজনীতিবিদ, শিল্পী, লেখক, বিজ্ঞানী- যার কথাই বলা যাক, সবাইকে ব্যর্থতার কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে সফল হতে হয়েছে। আবার এই সাফল্য পাওয়ার পরও অনেকে আবার ব্যর্থ হয়েছেন। আবারও তাঁরা উঠে দাঁড়িয়েছেন, এবং আবার সফল হয়েছেন। এসব সফল মানুষের সবার মধ্যেই একটা আশ্চর্য মানসিক শক্তি আর আত্মবিশ্বাস আছে। যত বড় ব্যর্থতার মুখেই তাঁরা পড়েন না কেন- কখনই কাজ করা বন্ধ করেন না। কখনওই তাঁরা বিশ্বাস হারান না। তাঁদের এসব ব্যর্থতার গল্প থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। জার্নিমেকার জবস্ সিলেট ভিওিক জব পোর্টাল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে ২০১৫। কয়েকজন স্বপ্নবাজ তরুণ গড়ে তুলেন এই প্রতিষ্ঠান। জার্নিমেকার ট্রেনিং এবং ডেভেলাপমেন্ট-এ কাজ শুরু“করে ২০১৩ সালে। জার্নিমেকারের জার্নিটা অন্যান্য গল্প থেকে সামান্য একটু ভিন্ন সব সাফল্য খোঁজা গল্পের মাঝখানে গল্পটা শুরু“হয়েছিল নিজেদের ব্যর্থতার কারণ খুঁজতে গিয়ে। প্রতীম পুরকায়স্ত, শাহ মোঃ আলী হায়দার বিপ্লবের হাত দিয়ে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানটি আজ শত শত চাকরিপ্রার্থীর কাছে তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সিঁড়ি। কথা হচ্ছিল শাহ মোঃ আলী হায়দার বিপ্লব সঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের এই জার্নিমেকার জবস্ শুরু“হয়েছিল খুবই ক্ষুদ্র এক পরিসর থেকে, আমাদের চারপাশের চাকরি সম্পর্কিত বড় কিছু সমস্যা সমাধানের সামান্য প্রচেষ্টা হিসেবে। কোন রকম একটা ওয়েবসাইট আর তাতে সামান্য কিছু চাকরি। মাত্র চার পাঁচটা প্রতিষ্ঠান আর চাকরিপ্রার্থীর সিভি এ্যাকাউন্ট নিয়ে শুরু করা আমাদের ওয়েবসাইটটিতে এখন বারো হাজারেরও বেশি চাকরিপ্রার্থীর এ্যাকাউন্ট আছে। আজকের চাকরির বাজারে নিজের যোগ্যতা দিয়ে একটা চাকরি জুটিয়ে নেয়া কিংবা সেই জায়গায় নিজের অবস্থানটা শক্ত করা বা খুব অল্পের জন্যে একটা বড় চাকরি হাতছাড়া হয়ে যাওয়াটা ভাগ্য বলে ধরে নেয়া স্বাভাবিক। তবে এই ব্যাপারটাকে শুধু ভাগ্য বলে বসে থাকতে চাননি জার্নিমেকারের স্বপ্ন দ্রোষ্টারা, নিজের ঘাটতিটা ঠিক কোথায় সেটা খুঁজে বের করতে চেয়েছিলেন। এবং এই কাজ করতে গিয়ে তারা প্রথমেই খেয়াল করলেন নিজের ওপর বিশ্বাসের অভাব থাকে প্রায় সব তরুণ-তরুণীদের। এই সমস্যাটা সমাজের আরও হাজারো চাকরিপ্রার্থী তরুণেরও। কিন্তু সিলেটের মতো ছোট জায়গায় এতকিছু নিয়ে ভাবার মানুষের কমতি ছিল। সেইজন্য তখন তারা সিদ্ধান্ত নেই যে আমরা নিজেরাই এমন কিছু একটা করব, যাতে করে চাকরিপ্রার্থীদের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হয়। শুরু হয় জার্নিমেকার ট্রেনিং এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে আমাদের প্রথম পথচলার। সালটা ২০১৩, খুব ছোট্ট একটা পরিসর থেকে তরুণ সমাজের মেধায় শাণ দেয়ার চেষ্টায় আমরা শুরু“করি ট্রেনিং। আমাদের তখনকার চেষ্টা ছিল যোগ্য চাকরিপ্রার্থীকে তার যোগ্যতা প্রদর্শনের উপায়টা দেখিয়ে দেয়া। সেই ধারাবাহিকতায় এখন পর্যন্ত ১৫০ টিরও বেশি ট্রেনিং পরিচালনা করেছেন যা বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে সাজানো এবং চাকরিপ্রার্থীদের জন্য অনেক প্রয়োজনীয়। প্রতীম পুরকায়স্থ বলেন, চাকরিপ্রার্থীদের এই সাহায্য করতে করতে এক পর্যায়ে আমরা চাকরিদাতাদের সঙ্গেও কাজ করার সিদ্ধান্ত নেই এবং জার্নিমেকার বিজনেস কনসালটেন্সির মাধ্যমে আমরা দ্বিতীয় ধাপে যাত্রা শুরু“করি। ‘জার্নিমেকার বিজনেস কনসালটেন্সি’তে কাজ করতে গিয়ে আমরা যে নতুন একটা ব্যাপার উপলব্ধি করি তা হলো চাকরি পাওয়ার জন্য যুবসমাজ যেমন হিমশিম খাচ্ছে তেমনি বড় ব্যবসায়ীরা চাকরি দিতে গিয়ে যোগ্য প্রার্থী খুঁজে পেতেও হয়ে পড়ছেন দ্বিধান্বিত। এই সমস্যা সমাধানে খুবই ক্ষুদ্র প্রয়াস হিসেবে আমরা ২০১৫ সালে জার্নিমেকার জবস নামের সিলেটভিত্তিক জব সাইট শুরু করি। শুরু হয় নতুন পথ চলা। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের ওয়েবসাইটে নিজের এ্যাকাউন্ট খোলা বা চাকরি পাওয়ার জন্যে চাকরিপ্রার্থীকে গুনতে হয় না কোন অঙ্কের টাকাই। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চাকরিপ্রার্থীদের আমরা এই সেবা দিয়ে থাকি। সুমিত কর্মকার, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ বলেন- বর্তমান সময়ে জার্নিমেকার নিয়ে আমরা বর্তমানে কাজ করছি ৪৫০টিরও বেশি চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। আমাদের ওয়েবসাইটে জমা পড়া সব সিভি থেকে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের কর্তারা বেছে নিতে পারেন যোগ্যতা অনুযায়ী পছন্দসই কর্মীকে। অনেকসময় চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের কষ্ট লাঘব করতে আমরাও যোগ্য চাকরিপ্রার্থীর তালিকা করে কর্মী বেছে নিতে সাহায্য করে থাকি। পথচলাটা অল্প দিনের হলেও এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার প্রাপ্তি হিসেবে ২০১৭ সালে অর্জনের খাতায় এসে যুক্ত হয় ইধহমষধফবংয ঝঃধৎঃঁঢ় অধিৎফ. ২০১৮ সালে এসে আমরা ঝঃধৎঃঁঢ় ইধহমষধফবংয আইডিয়া প্রোজেক্টে অন্তর্ভুক্তও হই। ভাগ্য বদলে দেয়ার আমাদের ছোট এক চিন্তা থেকে শুরু হওয়া জার্নিমেকার এখন এতটাও ছোট নেই। ৬ জন কর্মকর্তা এবং ১০ জন ক্যাম্পাস এ্যাম্বেসেডর নিয়ে জার্নিমেকার এখন ১৬ জনের পরিবার। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চাকরিদাতা এবং চাকরিপ্রার্থীদের সুবিধা চিন্তা করে ২০১৮ সালের ২২ নবেম্বর জার্নিমেকার চালু করেছে জার্নিমেকার জবসের মোবাইল এ্যাপ। এই মোবাইল এ্যাপের সাহায্যে খুব সহজে এবং দ্রুততার সঙ্গে চাকরিদাতা এবং চাকরিপ্রার্থী নিজেদের কাজ সম্পাদন করতে পারবেন।
শীর্ষ সংবাদ: