ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মতি লাল দেব রায়

জরুরী ভিত্তিতে দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে রেললাইন ঠিক করা হোক

প্রকাশিত: ০৯:২৭, ১৭ নভেম্বর ২০১৯

জরুরী ভিত্তিতে দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে রেললাইন ঠিক করা হোক

দেশের ভেতরে যাতায়াতকারী একমাত্র নিরাপদ যানবাহন হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ের আন্তঃনগর ট্রেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট রেললাইনগুলো দেখলে যে কোন ব্যক্তি ধারণা করতে পারবেন যে, এগুলো পরিত্যক্ত রেললাইন। খুবই দুর্বল লাইন, দুই ধারে নেই কোন পাথর, ভেতরেও নেই পাথর। লাইনের দুইদিকে ঘাস উঠে গেছে, দুর্বল, জাগায় জাগায় বিপজ্জনক রেল ক্রসিং। নিয়মিত এই রেল ক্রসিং-এ দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ কোন সমাধান দিতে পারছে না। দীর্ঘদিন যাবত এ ব্যাপারে লেখালেখি হচ্ছে। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নীরব ভূমিকা অনেক প্রশ্ন জন্ম দিচ্ছে। রেলের হাজার কোটি টাকার বিল্ডিং তৈরির প্রকল্প বাদ দিয়ে সারাদেশে বিপজ্জনক রেললাইনগুলোকে মজবুত ও শক্ত করে নতুন করে অবিলম্বে তৈরি করার জরুরী পদক্ষেপ নেয়ার জোরালো দাবি উঠেছে দেশের সর্বস্তরের মানুষের পক্ষ থেকে। রেল গাড়ি নির্বিঘেœ চলার জন্য এবং জনসাধারণকে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে হলে অবিলম্বে রেল ক্রসিং-এ নতুন গেট তৈরি করতে হবে এবং প্রতিটি গেটে একজন নিয়মিত গেটকিপার নিয়োগ দিতে হবে। এছাড়া কোন বিকল্প নেই। যখন রেললাইনের মেরামতের কথা ওঠে তখনই রেলওয়ের কর্মকর্তাগণ পুরনো রেললাইন মেরামতের কথা পাশ কাটিয়ে শুধু রেললাইনকে মিটার গজ থেকে উন্নীত করে ব্রডগেজ লাইন তৈরি করা হবে বলে বড় বড় কথা বলেন। প্রতি বছর রেললাইন মেরামত করার জন্য লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকে। কিন্তু এই টাকা কোথায় কিভাবে ব্যবহার হয় কেউ জানে না। রেলওয়ে প্রশাসন বলতে কোন কিছুর উপস্থিতি আছে কিনা রেলওয়ের বেহাল চিত্র দেখলেই তা বোঝা যায়। কেউ কারও কথা শোনে না। অনেক রেওলয়েতে যারা লাইনম্যান আছেন তারা কাজ করেন না; কিন্তু বেতন নেন। অনেক স্টেশন মাস্টার অনুপস্থিত থাকেন; কিন্তু সময়মতো বেতন নেন। স্টেশনে ক্লিনার আছে; কিন্তু ক্লিন করে না, বেতন নেয়। অনেক স্টেশন আছে, মাস্টার নেই, বিশ্রামাগার আছে, বাথরুম নেই, বাথরুম আছে পানি নেই। সকল ট্রেনে হকারদের বাজার চলে, দেখার কেউ নেই। চলন্ত ট্রেনের দরজা খোলা থাকে, দেখার কেউ নেই। রেলওয়ে পুলিশ আছে। স্টেশনে পকেটমার ঘোরে, প্যাসেঞ্জার ট্রেনে বাথরুমে লাকড়ি বহন করে বিনা টিকেটের যাত্রীরা। ট্রেনের ছাদে যাত্রী, দুই বগির মধ্যবর্তী ফাঁকে যাত্রী বসে, স্টেশনে মই এনে ট্রেনে লাগিয়ে যাত্রী ছাদে ওঠে। কিশোরগঞ্জগামী ট্রেনের বগিতে বৃষ্টির দিনে ছাতা টাঙ্গিয়ে যাত্রীদের বসতে হয়। ট্রেনের ইঞ্জিনে যাত্রী বহন করেন ড্রাইভার। প্রতিটি বগিতে একজন রেলওয়ে কর্মী থাকে। এরা খালি বগিতে বসে আড্ডা দেয়। এই হলো রেলের নমুনা। সম্পূর্ণ অরাজক পরিস্থিতিতে চলছে রেল গাড়ি। যে কোন একটি রেল স্টেশনে গিয়ে একটু সময় অবস্থান করলে দেখতে পাবেন সব কিছু এবং বুঝতে পারবেন এখানে কি হয়। রেলওয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে রেললাইন, রেল ক্রসিং। প্রতিনিয়ত যদি দুর্ঘটনা ঘটে মানুষ মারা যায় তাহলে বিদেশ থেকে বগি এনে, বিল্ডিং তৈরি করে কোন লাভ নেই। সবার আগে দেশের সাধারণ মানুষকে বিপদ থেকে বাঁচাতে চাইলে রেললাইন আগে ঠিক করুন। রেলওয়ের ইঞ্জিনিয়ারদের বিশ্বাস করবেন না। তাদের অনিয়ম, দুর্নীতির কারণে এবং তাদের পুরনো ঘাপলা ধরা পড়বে এই ভয়ে পুরনো লাইন মেরামত করতে তারা আগ্রহী নন। শুধু নতুন ব্রডগেজ লাইনের কথা বলেন। রেলওয়েতে যত ইঞ্জিনিয়ার আছেন তারা আসলে তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যান। তারা হয় অদক্ষ, নয় কাজ করেন না। বিষয়গুলো একটু খতিয়ে দেখার সময় এখনই। ব্রিটিশ আমলের তৈরি রেললাইন আর কতদিন চলবে? সেসব অবিলম্বে নতুন করে তৈরি করা দরকার। পুরনো সকল রেলওয়ে ব্রিজ নতুন করে তৈরি করে মানুষের যাত্রা নিরাপদ করার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রেলমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আর যদি না করতে পারেন তা হলে ১২ নবেম্বর ২০১৯ তারিখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবাতে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় নিহত ১৬ জন এবং অসংখ্য আহত যাত্রীর দায়ভার নিয়ে রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ করাই উত্তম হবে। একই সঙ্গে দায় নিতে হবে উল্লাপাড়ায় সংঘটিত রংপুর এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনের লাইনচ্যুতিসহ একাধিক বগিতে অগ্নিকা-ের ঘটনারও। লেখক : আমেরিকা প্রবাসী
×