ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবস

বিশ্বের নগরগুলোকে সকলের জন্য বাসযোগ্য করাই লক্ষ্য

প্রকাশিত: ১০:০৭, ৯ নভেম্বর ২০১৯

 বিশ্বের নগরগুলোকে সকলের জন্য বাসযোগ্য করাই লক্ষ্য

ফিরোজ মান্না ॥ বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবস আজ শনিবার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালনের জন্য নানা কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। এবার ‘জেলা ও উপজেলা শহরের জন্য পরিকল্পনা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। পরিকল্পিত নগরায়ণ নিশ্চিত করা না গেলে ভবিষ্যত প্রজন্ম চরম ভোগান্তিতে পড়বে। ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ সালে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বর্তমান প্রজন্মের শ্রেষ্ঠ উপহার। এই প্ল্যান আগামী প্রজন্মকে ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে পারে। দিবসটি উদ্যাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) দিনব্যাপী কর্মসূচী বাস্তবায়ন করবে। বাংলাদেশের টেকসই ও পরিকল্পিত নগরায়ণ নিশ্চিত করার প্রত্যয় নিয়ে বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবস পালন করছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স। বিশ্বের নগরসমূহকে সকলের জন্য বাসযোগ্য করার জন্য বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবস পালন করা হয়। এ বছর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) উদ্যোগে এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও ব্র্যাক আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের সহযোগিতায় বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবস পালন করা হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্বাচন করা হয়েছে ‘জেলা ও উপজেলা শহরের জন্য পরিকল্পনা’। বিআইপি জানিয়েছে, এবার তারা তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় দেশের নগর, অঞ্চল ও গ্রামীণ পরিকল্পনাবিদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল গ্রামীণ পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে পরিকল্পনা সম্পর্কিত উদ্ভাবনী ধারণা, নগর পরিকল্পনা ডিজাইন, পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট প্রামাণ্যচিত্র, স্নাতক পর্যায়ের থিসিস, বিতর্ক, পোস্টার এবং আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা এবং বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণী, র‌্যালি, সেমিনারসহ আরও নানা আয়োজন থাকবে। আবাসন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ভূমি ও পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা, পয়ঃনিষ্কাশন প্রভৃতি সমস্যার উদ্ভাবনী সমাধান উপস্থাপিত হবে। এছাড়াও দিবসটিকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে জাতীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ পর্যন্ত একটি প্ল্যানিং ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার সকালে বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবসের বর্ণাঢ্য র‌্যালিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব সমন্বিত উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স মনে করে, দেশের প্রবাহমান উন্নয়নকে মহাপরিকল্পনা ও ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিকল্পিত ও টেকসই করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে দেশের সকল পর্যায়ের নগর ও শহরসমূহের ভৌত পরিকল্পনা অনুযায়ী উন্নয়ন ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার। এজন্য যে সকল পরিকল্পনা ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে তার দ্রুত গেজেট প্রকাশ করা দরকার এবং যে সব শহরের মহাপরিকল্পনা এখনও প্রস্তুত করা হয়নি। এই মহাপরিকল্পনা দ্রুত সম্পন্ন করে গেজেট আকারে প্রকাশ করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে মহাপরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নগর ও গ্রামীণ স্থানীয় সরকারসমূহকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করা প্রয়োজন এবং পরিকল্পনার আওতায় প্রকল্প প্রস্তাবনাসমূহের বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি ও আর্থিক সংস্থান সৃষ্টি করা দরকার। বিআইপি মনে করে, মহাপরিকল্পনাভিত্তিক পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পরিকল্পনা পেশাসহ অন্যান্য কারিগরি পেশার সম্প্রসারণ এবং শক্তিশালীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ লক্ষ্যে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। স্থানভিত্তিক মহাপরিকল্পনা প্রস্তুত ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি অতি জরুরী। এ জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে পরিকল্পনার কর্মকা-কে শক্তিশালী করার দাবি করেন তিনি। নগর উন্নয়ন অধিদফতরকে পরিকল্পনা কর্মকা-ে সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এর জনবল কাঠামোর সম্প্রসারণ প্রয়োজন। পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান আরও বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় পরিকল্পনা অনুশীলনের গুরুত্ব ও সম্প্রসারণ ছাড়া দেশে পরিকল্পিত উন্নয়ন ব্যবস্থা টেকসই করা সম্ভব নয়। চূড়ান্ত বিবেচনায় ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন এবং মধ্যম ও উন্নত আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে আঞ্চলিক ও স্থানীয় পর্যায়ের মহাপরিকল্পনাসমূহের বাস্তবায়নে পরিকল্পনা পেশায় যথাযথ গুরুত্বারোপ করতে হবে। বিশ্বের উন্নত দেশসমূহের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় নগর পরিকল্পনার চিত্র। পরিকল্পনা পেশাকে সত্যিকার অর্থে কার্যকর করার জন্য শক্তিশালী জাতীয় নীতি ও আইন প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন বলে মনে করেন তিনি। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হবে। আর যদি এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করা হয়, তাহলে লক্ষ্যে পৌঁছানো খুবই দুরূহ হবে। যে জাতির ১০০ বছরের পরিকল্পনা থাকে, সে জাতির উন্নতি কেউ আটকে রাখতে পারবে না। এ কথা সত্যি যে, ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ সালে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বর্তমান প্রজন্মের শ্রেষ্ঠ উপহার। এই পরিকল্পনা ভবিষ্যত প্রজন্মকে চরম ভোগান্তি থেকে রক্ষা করবে। তাছাড়া ভবিষ্যত পরিকল্পনা না থাকলে জাতি হিসেবে বিশ্বের কাছে অনেক পেছনে পড়ে থাকতে হবে।
×