ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মাদারীপুরে মাদ্রাসার শিক্ষকের নির্মম প্রহারে ছাত্রে মৃত্যু, শিক্ষক আটক

প্রকাশিত: ০৯:৫৬, ৬ নভেম্বর ২০১৯

মাদারীপুরে মাদ্রাসার শিক্ষকের নির্মম প্রহারে ছাত্রে মৃত্যু, শিক্ষক আটক

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর ॥ মাদারীপুর সদর উপজেলার গাছবাড়িয়া জামিয়া কারিমিয়া মাদ্রাসার টাকা চুরির অভিযোগে শিক্ষকের নির্মম প্রহারে হাসিফ মাতুব্বর (১০) নামের এক ছাত্রে মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বুধবার সন্ধ্যায় মো. আবুল হাসান খান (৩০) নামে মাদ্রাসার এক শিক্ষককে আটক করেছে পুলিশ। নিহত হাসিফ সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের শ্রীনাথদী এলাকার আনোয়ার মাতুব্বরের ছেলে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের গাছবাড়িয়া জামিয়া কারিমিয়া মাদ্রাসার ২য় শ্রেণীর ছাত্র হাসিফকে ৫‘শ টাকা চুরির অভিযোগে প্রথমে রবিবার মাদ্রাসার শিক্ষক ইউসুফ মোল্লা পা থেকে মাথা পর্যন্ত সমস্ত শরীরে জোড়া বেত দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এরপর হাসিফ মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে তার নিজ বাড়ী চলে গেলে বুধবার সকালে তার বাবা-মা পুনরায় মাদ্রাসায় দিয়ে যায়। সন্ধ্যার দিকে হাসিফকে আবারো নির্মমভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে মাদ্রাসার শিক্ষকরা। এতে হাসিফের শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে কয়েকজন শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে হাসিফের মুখে বিষ (কীটনাশক) ঢেলে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এসময় হাসপাতালে নিয়ে আসা মাদ্রাসার সকল শিক্ষক পালিয়ে যায়। মো. আবুল হাসান খান নামে এক শিক্ষকের কথাবার্তা সন্দেহজনক হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দিলে পুলিশ গিয়ে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। আটককৃত শিক্ষকের বাড়ী রাজৈর উপজেলার মোল্লাকান্দি গ্রামের আঃ মান্নান খানের ছেলে। হাসিফের মামা বাদল বেপারী বলেন, “আমার ভাগ্নিনার সমস্ত শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পাষন্ড মাদ্রাসার শিক্ষকরা আমার ভাগ্নিনাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। আমরা মাদ্রাসার শিক্ষকের ফাঁসির দাবি জানাই।” হাসিফের বাবা আনোয়ার মাতুব্বর কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলেকে মাত্র ৫‘শ টাকা চুরি অভিযোগে নির্মমভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে মাদ্রাসার শিক্ষকরা। আমার ছেলেকে মেরে ফেলে সেটা ধামাচাপা দেয়ার জন্য মুখে বিষ দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসে। আমরা এর কঠিন শাস্তির দাবি জানাই।” মাদ্রাসার শিক্ষক মো. ইউসুফ আলী মোল্লা বলেন, “আমার টেবিলের ওপর টাকা রাখা ছিল। এ টাকা নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে আমি সামান্য মারধর করি। পরে ঐ ছাত্র বাড়ী চলে যায়। সকালে ছাত্রের বাবা-মা মাদ্রাসায় দিয়ে যায়। আমি সারাদিন মাদ্রাসায় ছিলাম না। বিকেলে মারধরের ঘটনা আমি জানিনা।” মাদারীপুর সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. অখিল সরকার বলেন, “আমাদের হাসপাতালে একটি শিশুকে বিষপানের অভিযোগে কিছু লোক ভর্তি করে। হাসপাতালে ভর্তির পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মারা যায়।” শিশুটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ঐ চিকিৎসক বলেন, “লাশের ময়না তদন্তের পরে বলতে পারবো এটা হত্যা না আত্মহত্যা।” মাদারীপুর সদর থানার ওসি সওগাতুল আলম বলেন, “এক মাদ্রাসার ছাত্রকে নির্যাতনের অভিযোগে আমরা এক শিক্ষককে আটক করেছি। মাদ্রাসায় পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি। এখনো কোন অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নিব।”
×