ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিয়ম না মানায় শাস্তি, সাঁতারু অজ্ঞান, কোচের পদত্যাগ!

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ২১ অক্টোবর ২০১৯

নিয়ম না মানায় শাস্তি, সাঁতারু অজ্ঞান, কোচের পদত্যাগ!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ নিয়ম না মানলে বা অন্যায় করলে স্বাভাবিকভাবেই এর শাস্তি আছে। কিন্তু সেই শাস্তির মাত্রা যদি হয়ে যায় অনেকগুণ বেশি কিংবা বাড়াবাড়ি রকমের বেশি, তাহলে সেটা অবশ্যই নিন্দনীয় এবং মেনে নেয়া কঠিন। বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশনে ঘটেছে এমনই এক বাড়াবাড়ির ঘটনা, ঘটেছে তুলকালাম কাণ্ড। এক জুনিয়র সাঁতারুকে শাস্তি দিতে গিয়ে সীমা লক্সঘন করে ফেলেছেন কয়েক কোচ ও কর্মকর্তা। আর তাদের এই বাড়াবাড়ি দেখে রাগে-ক্ষোভে পদত্যাগ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় সাঁতার দলের জাপানি হেড কোচ তাকেও ইনোকি। এরকম অপ্রীতিকর ঘটনায় ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে চলে যাওয়ার পর নিজের ফেসবুক ওয়ালে স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছেন আসল কারণ। বহু বছর ধরেই ধরেই নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, বিশৃক্সখলা এবং নারী সাঁতারুদের যৌন হয়রানিসহ নানা ধরনের অপকর্ম হবার সুবাদে ভালই ‘দুর্নাম’ আছে সাঁতার ফেডারেশনের! এবার তার সঙ্গে যোগ হলো আরেকটি। এ নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে চলছে প্রবল সমালোচনা। হয়েছে ক্ষোভের সঞ্চার। আগামী ১-১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত হবে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ক্রীড়া আসর সাউথ এশিয়ান গেমস’ (এসএ গেমস)-এর ত্রয়োদশ আসর। এতে অংশ নেবে বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্রীড়া ডিসিপ্লিনে। এগুলোরই একটি হচ্ছে সাঁতার। এ উপলক্ষ্যে কয়েক মাস ধরেই ঢাকার মিরপুরের সৈয়দ নজরুল ইসলাম সুইমিং কমপ্লেক্সে বাছাই করা সাঁতারুদের নিয়ে চলছিল অনুশীলন ক্যাম্প। ঘটনা ঘটে রবিবার। ইনোকির তত্ত্বাবধানে সিনিয়র জাতীয় দলের অনুশীলন চলছিল। সে সময় জুনিয়র জাতীয় দলও (ট্যালেন্ট হান্ট দল) ছিল সেখানে। এক সময় ইনোকি লক্ষ্য করেন, জুনিয়র জাতীয় দলের কোচ ও কর্মকর্তারা গরমের মধ্যে শারীরিক অনুশীলনের শাস্তি দিচ্ছেন কয়েক সাঁতারুদের। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তারা নিয়ম ভেঙে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেছিল। সবকিছু দেখেশুনে জাপানি কোচ প্রচণ্ড বিস্মিত হন। ঘটনার এখানেই শেষ নয়। শাস্তিপর্ব চলার একপর্যায়ে শরিফা আক্তার মিম নামের এক সাঁতারু জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়েন ফ্লোরে! তাও আবার পাক্কা ১০ মিনিট ভীষণ কড়া রোদের মধ্যে! অথচ কেউ তার কাছেই যাচ্ছিল না। তখন ইনোকি বাকি জুনিয়র কোচদের জিজ্ঞেস করেন, মেয়েটি সুস্থ আছে আছে কি না। তারা হাসতে হাসতে জানান, ও অভিনয় করছে, কিছু হয়নি! ইনোকি তারপরও কোচদের বলেন, মিমের কাছে যেতে। কোচরা প্রথমে যেতে গড়িমসি করেন। অনেক অনুরোধের পর অনিচ্ছার সঙ্গেই ২/৩ মিনিট সময় নষ্ট করে তারা মিমকে ধরাধরি করে ছায়ায় নিয়ে যান। এসময় ইনোকি বারবার বলার পরও এ্যাম্বুলেন্সে খবর দেয়ার প্রয়োজনবোধ করেননি সেই ‘বিচক্ষণ’ জুনিয়র কোচরা! পরে একটি ভ্যানে করে কোন এক অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয় মিমকে। ঘটনার এখানেই সমাপ্তি, এমনটা ভাবলে ভুল করবেন। আরও ক্লাইমেক্স বাকি আছে এখনও! সেদিনই বিকেলে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে অনুশীলন ক্যাম্প ছেড়ে চলে যান ইনোকি। এ ব্যাপারে সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এমবি সাইফ জানান, ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে চলে গেছেন জাপানি কোচ। তিনি বলেন, ‘সাঁতারুরা গোপনে মোবাইল ফোন রাখতো। যে কারণে ওদের শাস্তি দেয়া হয়েছিল। সেটা নিয়েই ইনোকি মূলত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।’ সাইফ আরও বলেন, ‘বিষয়টি ইনোকি খুব বড় করে দেখেছেন। আমরা মোবাইল ফোন রাখতে দিই না। কারণ ওরা রাত জেগে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এজন্য সকালে ওদের অনুশীলনে সমস্যা হয়। এ কারণে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছিলাম সাঁতারুদের। কি শাস্তি দিয়েছে সুনির্দিষ্টভাবে জানি না। যদি অমানবিক শাস্তি দিয়ে থাকে তাহলে এক রকম। যদি রুটিন শাস্তি দিয়ে থাকে তাহলে আরেক রকম। পাঁচ কর্ম দিবসের তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। মিম এখন ক্যাম্পে আছে এবং ভাল আছে।’ এদিকে বিশ্ব সাঁতারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিনার কাছে অভিযোগ জানাবেন বলে নিজের ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাসে লিখেছেন ইনোকি। তদন্ত কমিটি গঠন এবং রিপোর্ট প্রকাশ নিয়ে বাংলাদেশ কি হয়, তা সবাই জানে, কাজেই সাঁতার ফেডারেশন কি করবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
×