ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নুসরাত হত্যা মামলার রায় ২৪ অক্টোবর

প্রকাশিত: ০৭:১২, ১৯ অক্টোবর ২০১৯

নুসরাত হত্যা মামলার রায় ২৪ অক্টোবর

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফেনী ॥ সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির স্মৃতি এখনো খুঁজে বেড়ান তার পরিবার, স্বজন ও শিক্ষক-সহপাঠিরা। কিছুতেই ভুলতে পারছেন না নুসরাতকে। হত্যাকান্ডের ৬ মাস পার হলেও নুসরাত নেই এমনটি ভাবতে পারছেন না কেউই। সোমবার সকালে নুসরাতের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, শুনসান নিরবতা। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার মেয়ের কাথা স্বরণ করেন কান্না করছেন। নুসরাতের রুমে টেবিলে সাজানো বই-পত্র ও কাপড় চোপড়। কথা হয় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাথে। তিনি জানায়, বোন নুসরাত ছাড়া আমাদের পরিবার শুন্য। আমাদের ঘরে অনেক সম্পদ না থাকলেও আমাদের বোন সে ঘর আলোকিত করে রাখতো। তার মা এখনো বোনের (নুসরাত) জন্য কেদে কেদে বুক ভাসান। বাবা একেএম মূসার বোবা কান্না থেকে বুকটা ফেটে যায় বলে উল্লেখ করেন তিনি। মাদ্রাসায় গিয়ে তার কোন সহপাঠিকে পাওয়া যায়নি। সেখানে উপস্থিত শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের ছিলো নুসরাত জাহান রাফি। ছোট ভাইয়ের সাথে প্রায় মাদরাসায় আসা যাওয়া করতো । আচার-ব্যবহারে কোন ধরণের ত্রুটি পাওয়া যেতনা বলেও জানান তারা। নুসরাতের খুব কাছের বন্ধু নিশাত, ফূর্তি, সাথী ও তামান্না। নিশাত ও ফূর্তির সাথে নুসরাতের অনেক স্মৃতি। নুসরাত তার সব কিছুই শেয়ার করতেন তাদের সাথে। অধ্যক্ষের হাতে যৌননিপীড়নের পর নিশাত ফূর্তি সাথে থাকলেও সাথী-তামান্না ছিলো না। তাদের চিঠির মাধ্যতে অধ্যক্ষের কুকর্মের কথা জানিয়েছে নুসরাত। মুঠোফোনে নিশাত-ফূতি জানান, আমাদের খুব কাছের বান্ধবি নুসরাত। তার সাথে অনেক স্মৃতি যা এখনো অমলিন। নুসরাত শিক্ষা দিয়ে গেছেন কিভাবে প্রতিবাদ করতে হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন অসংখ্য নুসরাত নিপীড়নের শিকার হয়েছে। এখনো অসংখ্য সিরাজ স্কুল-মাদ্রাসায় ঘাপতি মেরে বসে আছে। নুসরাতের খুনিদের বিচারের মাধ্যমে নুসরাতরা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে। মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মো. হোসাইন বলেন, নুসরাতকে এর আগে দেখেছি কিনা মনে পড়ছে না। তবে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে তাকে দেখতে যাই। এমন একটি নিষ্পাপ মেয়ের উপর কিভাবে এমন নৃশংসতা চালিয়েছে ভাবতেই শিউরে উঠি। নুসরাত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করেন তিনি। আলোচিত এ মামলা এ পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও পিবিআই। এদের মধ্যে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও মাদ্রাসার সহ-সভাপতি রুহুল আমিন, পৌর কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, শিক্ষক আবছার উদ্দিন, সহপাঠি আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষের শ্যালিকার মেয়ে উম্মে সুলতানা পপি, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহমেদ, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, মো. শামীম, কামরুন নাহার মনি, আবদুর রহিম ওরফে শরিফ, ইফতেখার হোসেন রানা, এমরান হোসেন মামুন, মহিউদ্দিন শাকিল, হাফেজ আবদুল কাদের । এ মামলায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১২ জন আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ফৌজদারী কার্য্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন- নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়ের দায়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল মাদ্রাাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগিরা তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা ৫ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ১০ এপ্রিল রাতে মারা যায় নুসরাত জাহান রাফি।এ ঘটনা তার বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামালা দায়ের করেন।
×