ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন ফ্রান্স গড়ার স্বপ্নে যিনি বিভোর

প্রকাশিত: ০৬:২০, ৯ অক্টোবর ২০১৯

 নতুন ফ্রান্স গড়ার স্বপ্নে  যিনি বিভোর

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ক্ষমতায় আসার প্রায় আড়াই বছর চলছে। তার মধ্যে গত ১২টি মাস তাকে কঠিন সময় পার করতে হয়েছে। দেশজুড়ে ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনের নামে তার নিজের ও তার সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের বিশেষ করে খুব সমাজের রুদ্ররোষের বহির্প্রকাশ ঘটেছে। এক বছর পর তারই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ম্যাক্রোঁ বলেন এক অর্থে এ আন্দোলন তার জন্য খুবই ভাল ছিল। কারণ ওই আন্দোলন তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে তার কি হওয়া উচিত। প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে বিরাজমান এক রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়ে ২০১৭ সালের মে মাসে ম্যাক্রোঁ ক্ষমতায় আসেন। এসেই তিনি সংস্কারের ভূমিকা নিয়ে ফ্রান্সের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাগুলোকে দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসরুদ্ধ করে রাখা নিয়মকানুন ভেঙ্গে দেন। অতি ধনীদের ওপর আরোপিত সম্পদ কর বাতিল করেন। শ্রম বিধি শিথিল করে কোম্পানিগুলোর পক্ষে শ্রমিক নিয়োগ ও ছাঁটাই করা সহজতর করেন। একই সময় তিনি বিশ্বের অন্যতম নেতার ভূমিকায় আবির্ভূত হন। ৪৩ বছর বয়স্ক এই প্রেসিডেন্ট প্রতিটি আন্তর্জাতিক সঙ্কটের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছেন। জার্মান চ্যান্সেলর মার্কেলের দুর্বলতা, ব্রেক্সিটমুখী যুক্তরাজ্যের নির্লিপ্ততা এবং পাশ্চাত্যের নেতার ভূমিকা থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের পিছু হটার ফলে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণে তিনি এগিয়ে এসেছেন। টাইম সাময়িকী ২০১৭ সালে তাকে ইউরোপের পরবর্তী নেতা অভিধায় ভূষিত করেছিল। গত বছর ম্যাক্রোঁর এক দুর্যোগপূর্ণ সময় গেছে। বিশ্ব মঞ্চে যখন তার সদম্ভ পদচারণা চলছিল, যখন তিনি ফ্রান্সকে রূপান্তরে সুদূরপ্রসারী সংস্কারের স্বপ্ন দেখছিলেন তখন জনগণের একটা বড় অংশ অসন্তোষ ও অস্থিরতায় তাড়িত হয়। তাকে ধনিক শ্রেণীর প্রেসিডেন্ট আখ্যায়িত করা হয়। এরপর পরিবেশ রক্ষার কার্যক্রমে অর্থায়নের জন্য তিনি জ্বালানি কর বৃদ্ধির ঘোষণা দিলে তুলকালাম কা- শুরু হয়ে যায়। দেশের নানা স্থানে জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। শুরু হয় ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলন। বিক্ষোভকারী পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, ব্যারিকেড দেয়, হাজার হাজার আহত হয়। এমন অবস্থা চলতে থাকে মাসের পর মাস। গত বছরের ডিসেম্বর ম্যাক্রোঁর জনপ্রিয়তায় ধস নামে। প্রায় ২৩ শতাংশে নেমে আসে। ম্যাক্রোঁ জ্বালানি কর থেকে সরে আসেন সামাজিক কল্যাণ খাতে বাড়তি ১১শ’ কোটি ডলার বরাদ্দ করেন। তবে তাঁর উচ্চাভিলাষী সংস্কার কর্মসূচীতে অবিচল থাকেন। বিক্ষোভ আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি দেশব্যাপী জনসংযোগ সফরে বের হন। তিনি বুঝতে পারেন যে গড় ফরাসী মানুষ থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। এই সফরের মধ্য দিয়ে তিনি হারানো ভাবমূর্তি অনেকটাই পুনরুদ্ধার করেন। ম্যাক্রোঁর জনপ্রিয়তা এখন ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ। অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে প্রায় ১০ পয়েন্ট বেশি। ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলন ক’দিন আগে আবার শুরু হয়েছে বটে তবে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। ম্যাক্রোঁ অবশ্য স্বীকার করেছেন যে তাঁর গোড়ার দিকের কিছু ভুলভ্রান্তির কারণেই এই আন্দোলন। কোন পরিবর্তন আনার জন্য তিনি হয় বেশি তাড়াহুড়ো করে ফেলেছিলেন। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তার তেমন কোনই সচেতনতা ছিল না। ম্যাক্রোঁ বলেন ‘সম্ভবত আমি এই অনুভূতির জন্ম দিয়েছিলাম যে আমি জনগণের বিরুদ্ধে গিয়েও সংস্কার করতে চাই। কখনও কখনও আমার অধৈর্যকে ফরাসী জনগণের ওপর ধৈর্যহারা হিসেবে অনুভূত হয়। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে তা নয়। পাঁচ বছর মেয়াদের অর্ধেক পথে দাঁড়িয়ে ম্যাক্রোঁ এখন তার দ্বিতীয় পর্বের কর্মসূচীতে হাত দিয়েছেন। সেই কর্মসূচী আরও বেশি বিপ্লবাত্মক এর প্রভাব হবে আরও সুদূরপ্রসারী। এবারের সংস্কারে তিনি ট্রেড ইউনিয়নগুলোকেও সংশ্লিষ্ট করবেন। পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে ইতোমধ্যেই তিনি শান্তি নির্মাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। রাশিয়া, ইউক্রেন ও জার্মানির নেতাদের একত্রিত করে তিনি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে যুদ্ধের অবসান ঘটানোর চেষ্টা করছেন এবং অন্যদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানির সঙ্গে মুখোমুখি বসার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন। ম্যাক্রোঁ দাবি করেন যে তার নেতৃত্বে ইতোমধ্যে ফ্রান্সের দৃশ্যপটের পরিবর্তন ঘটেছে। তার ক্ষমতায় আসার সময়কার পরিস্থিতির চেয়ে এখনকার পরিস্থিতি উন্নত। ফ্রান্সে বেকারত্বের হার এক দশকেরও বেশি সময়কার মধ্যে এখন সবচেয়ে কম- সাড়ে ৮ শতাংশ। তার ক্ষমতা গ্রহণের সময় ছিল সাড়ে ৯ শতাংশ। গত বছর ফ্রান্সে সরাসরি বিদেশিক বিনিয়োগ এক দশকের মধ্যে ছিল সর্বোচ্চ। এ বছর প্রবৃদ্ধি ১.৩ শতাংশ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ম্যাক্রোঁ বলেন, নতুন ফ্রান্স গড়ে তোলাই হলো তার সর্বক্ষণের চিন্তা। সেই চিন্তায় তিনি সর্বদা আচ্ছন্ন হয়ে আছেন। আবার সেই অন্বেষার মধ্যেই তাঁর সবচেয়ে বড় বিপদ নিহিত। চলমান ডেস্ক সূত্র : টাইম
×