ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ পৌঁছাবেন প্রধানমন্ত্রী ॥ তুলে ধরা হবে ছয় চ্যালেঞ্জ

জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু

প্রকাশিত: ১০:১৯, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু

এম শাহজাহান, নিউইয়র্ক থেকে ॥ ছয় চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম বার্ষিক অধিবেশনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সম্মেলনে যোগ দিতে এবার ১৯৩ দেশের সরকারপ্রধান নিউইয়র্ক আসছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্থানীয় সময় রবিবার বিকেলে নিউইয়র্ক পৌঁছানোর কথা। এই সফর ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ব্যাপক কর্মসূচী নিয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের মতো বড় চ্যালেঞ্জ প্রধানমন্ত্রীর সামনে। এ বিষয়ে বিশ্ব জনমত গড়ে তোলার পাশাপাশি বিশ্বনেতাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জন, মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবাসন, দারিদ্র্য বিমোচন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলা, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধের মতো চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। পাশাপাশি দীর্ঘ এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অর্জন রয়েছে। এসব বিষয় জাতিসংঘে তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে, রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতোমধ্যে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জাতীয় বাজেটের টাকা ব্যয় হচ্ছে রোহিঙ্গাদের পেছনে। এছাড়া পার্বত্য অঞ্চল ঘিরে যে বিশাল পর্যটন অর্থনীতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল তা ফিকে হয়ে আসছে। এছাড়া জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় এর প্রভাব সরাসরি দেশের অর্থনীতির ওপর আঘাত হানে। যদিও এমডিজি অর্জনের মতো এসডিজি অর্জনে পারদর্শিতা দেখাতে পারবে বলে আশাবাদী সরকার। এসডিজি অর্জনে বেশকিছু কর্মসূচী সরকারের রয়েছে যা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে আনুষ্ঠানিক বিতর্ক। এতে ১৯৩ দেশের রাষ্ট্র, সরকার অথবা তাদের প্রতিনিধিরা যোগ দিচ্ছেন। এই উচ্চ পর্যায়ের অধিবেশনে সাধারণ বিতর্ক পর্ব আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর হতে ২৯ সেপ্টেম্বর হবে। এ অধিবেশনে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী আজ ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে নিউইয়র্কে পৌঁছবেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতিসংঘের এবারের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বাংলাদেশে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। শীঘ্রই তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় কয়েক দফা চেষ্টা করেও কোন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে পাঠানো সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে, রোহিঙ্গাদের ন্যূনতম জীবন-যাপনের জন্য যতটুকু অর্থ প্রয়োজন তাও দাতারা দিচ্ছে না। ফলে বাজেটে বরাদ্দ না থাকলেও থোক বরাদ্দ থেকে রোহিঙ্গাদের পেছনে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। সঙ্কট তৈরি হচ্ছে বাজেট বাস্তবায়নে। অন্যদিকে বৈশ্বিক কারণে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি চাপের মুখে রয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এছাড়া ’৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য বিমোচনসহ এসডিজি অর্জনে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এ অবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে এবারের সাধারণ অধিবেশন। এ বিষয়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বিশ্বজনমত গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন। বাংলাদেশের এই সঙ্কটে জাতিসংঘ কি অবস্থান নেয়, সংস্থাটির ভূমিকা কতটুকু তা সরকার ও দেশের মানুষের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করবেন। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী চীন, জাপান ও ভারতের সহযোগিতা চেয়েছেন। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর ইউএনজিএ ৭৪তম বার্ষিক অধিবেশনে ভাষণ দেবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ২৪ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে এবং ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানসূচী ॥ সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে একদিন যাত্রাবিরতির পরে প্রধানমন্ত্রী আজ বিকেল চারটা ২৫ মিনিটে (স্থানীয় সময়) নিউইয়র্কে জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবেন। বিমানবন্দরে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন। এছাড়া আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের সঙ্গে কো-চেয়ার হিসেবে জাতিসংঘ ইকোনমিক এ্যান্ড সোস্যাল কাউন্সিলে (ইসিওএসওসি) একই সঙ্গে ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের বহুপাক্ষিক প্যানেল বৈঠক পরিচালনা করবেন। প্রধানমন্ত্রী অছি পরিষদে ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরবেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ হলে ক্লাইমেট এ্যাকশন সামিটে বক্তব্য রাখবেন এবং রিকগনাইজিং পলিটিক্যাল লিডারশিপ ফর ইম্যুনাইজেশন ইন বাংলাদেশ বিষয়ক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী লোটে নিউইয়র্ক প্যালেস হোটেলের কেনেডি রুমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সদর দফতর (ইউএনএইচকিউ) বুথে জাতিসংঘ মহাসচিবের স্পেশাল এ্যাডভোকেট ফর ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স ফর ডেভেলপমেন্ট কুইন মেক্সিমার সঙ্গে বৈঠক করবেন। তিনি ইউএনএইচকিউর কনফারেন্স রুম ৭ এ গ্লোবাল কমিশন অন এ্যাডাপ্টেশন আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। তিনি নর্থ ডেলিগেট’স লাউঞ্জে জাতিসংঘ মহাসচিব আয়োজিত স্টেট লাঞ্চনে অংশ নেবেন। এছাড়া তিনি ইউএনএইচকিউ’র কনফারেন্স রুম ১১ তে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন ও ওআইসি সচিবালয় আয়োজিত মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের অবস্থার ওপর একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকেও যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী লোটে নিউইয়র্ক প্যালেস হোটেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ২৫ সেপ্টেম্বর, ট্রাস্টশিপ কাউন্সিলে টেকসই উন্নয়নের (এসডিজি সম্মেলন) ওপর উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামে ‘লোকালাইজিং দ্য এসডিজিসে’ প্রধানমন্ত্রী কো-মডারেটরের দায়িত্ব পালন করবেন। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসে এ ‘এ কনভারসেশন উইথ অনারেবল প্রাইম মিনিস্টার শেখ হাসিনা’ শীর্ষ একটি অনুষ্ঠানেও অংশ নেবেন। একই দিনে লোটে নিউইয়র্ক প্যালেস হোটেলে বাইলেটারেল মিটিং রুমে তিনি অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সবার জন্য স্যানিটেশন ও পানির সভাপতি কেভিন রাডের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ হাউসে একটি নৈশভোজে অংশ নেবেন। এছাড়া শেখ হাসিনা একই দিনে লোটে নিউইয়র্ক প্যালেসের হোলমেসে ইউএস চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। ২৭ সেপ্টেম্বর ইউএন সদর দফতরের কনফারেন্স রুম ১ এ শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন আয়োজিত ‘সাসটেইনেবেল ইউনিভার্সেল হেল্থ কভারেজ : কম্প্রিহেনসিভ প্রাইমারি কেয়ার ইনক্লুসিভ অব মেন্টাল হেলথ এ্যান্ড ডিএ্যাজবিলিটিজ’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী একই দিন জাতিসংঘ সাধারণ সম্মেলনের ৭৪তম বার্ষিক সাধারণ বিতর্কে বক্তৃতা দেবেন। ২৮ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে প্রেস ব্রিফিং করবেন এবং এছাড়াও তিনি নিউইয়র্কেও হোটেল ম্যারিয়ট মারকুইসে বাংলাদেশী কমিউনিটির অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। জাতিসংঘ সচিবালয়ে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন। প্রধানমন্ত্রী ভ্যাকসিনেশন ও যুব দক্ষতা উন্নয়নে বাংলাদেশের ব্যাপক সাফল্যের জন্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে দুটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার গ্রহণ করবেন। ২৯ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় রাত নয়টায় প্রধানমন্ত্রী ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে করে নিউইয়র্ক থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন। ১ অক্টোবর ভোরে ফ্লাইটটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত মোমেন বলেন, এবারের জাতিসংঘের অধিবেশনে বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জলবায়ূ পরিবর্তন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, মানসম্মত শিক্ষা, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, সকলের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন এবং অভিবাসন ও শরণার্থী সমস্যার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বহুপাক্ষিক পর্যায়ে সহযোগিতা বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হবে। সাধারণ বিতর্ক পর্বের পাশাপাশি এসডিজি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু সভা হবে। এছাড়া জাতিসংঘের এ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ে আলোচনা হবে বেশ কিছু ইভেন্টও। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী ৭২তম অধিবেশনে প্রদত্ত ৫ দফা ও ৭৩তম অধিবেশনে পুনর্ব্যক্ত ৩ দফা প্রস্তাব এখনও প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘে এসব বিষয় তুলে ধরবে বাংলাদেশ।
×