ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়োমেট্রিক নিবন্ধনে প্রতারণা

প্রকাশিত: ১২:০৭, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বায়োমেট্রিক নিবন্ধনে প্রতারণা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের নামে মোবাইল অপারেটররা সাধারণ মানুষকে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মোবাইল সিম রেজিস্ট্রেশনের নামে একাধিকবার ফিঙ্গার স্ক্যান ও এনআইডি নাম্বার অন্তর্ভুক্তি দিচ্ছে সফটওয়্যারে। বিভিন্ন এলাকার আনাচে-কানাচে মোবাইলের সিম বিক্রির নামে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। আকর্ষণীয় অফার দিয়ে ব্যস্ততম সড়কের মোড়ে, বাস স্ট্যান্ডে ও কলেজের সামনে নারী ও শিক্ষার্থীদের টার্গেট করছে এসব প্রতারকরা। ক্রেতাদের বোকা বানিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে ফিঙ্গার প্রিন্ট ও এনআইডি। প্রত্যক্ষভাবে দেখা গেছে, নগরীর একে খান মোড়, অলঙ্কার মোড়, জিইসি মোড়, নিউ মার্কেট মোড়, চকবাজার মোড়, সিইপিজেড মোড়, মুরাদপুর মোড়, কর্নেল হাট বাজার, আগ্রাবাদের বাদামতলী মোড়সহ প্রায় ৫০ পয়েন্টে মোবাইল অপারেটর নিয়োজিত ডিলার বা এজেন্টের লোকজন ব্যানার ফেস্টুন লাগিয়ে ও হাঁকডাক দিয়ে সিম বিক্রয় করছে। অনেকটা ১০০ টাকার সিম ৯০ টাকার টকটাইমসহ একবারে নামমাত্র মূল্যে সিম। মোবাইল অপারেটরের লোগো সম্বলিত মগ বা হেডফোন দিয়ে প্রতারণায় নেমেছে অপারেটরদের নিয়োজিত ডিলার বা এজেন্টের লোকজন। তবে বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেনের নামে পুরাতন ভোটার আইডি ও নতুন স্মার্টকার্ডের নাম্বার বার বার নিয়েই এ ধরনের প্রতারণা করছে। তবে এসব প্রতারকরা রোহিঙ্গাদের কাছে বিক্রি করছে এসব সিম। অথচ এসব সিম থেকে কোন অপরাধ সংঘটিত হলে প্রথম দফায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিটিআরসি এনআইডির ধারককেই মামলায় ঢুকিয়ে দিবে। তবুও যাচাই করে দেখে না মোবাইল অপারেটরের টার্গেটের কারণেই এমন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অনেকের অভিযোগ, ঘাড়মোটা অপরাধী অপারেটরদের আইনের আওতায় আনতে চায় না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযোগ উঠেছে, মোবাইল অপারেটররা ডিলার বা এজেন্টদেরকে অতিরিক্ত সিম বিক্রির টার্গেট দেয়া হয়। এই টার্গেটের কারণেই ডিলার ও এজেন্টরা ছোট ছোট ডেক্স দিয়ে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে ও ব্যস্ততম স্থানে প্রতিনিধি বসিয়ে শিক্ষার্থী, নারী ও পথচারীদের আকর্ষণীয় অফার দিচ্ছে। প্রতারণার মাধ্যমে উৎসুক ক্রেতাদের ফিঙ্গার স্ক্যান ও ভোটার আইডির নাম্বার নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে চতুর সিম বিক্রেতা আগতদের একাধিকবার ফিঙ্গার স্ক্যান করা ও ট্যাবের সফটওয়্যারে বার বার এনআইডি নাম্বার অন্তর্ভুক্তি দিয়ে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। গত বুধবার এমন এক অভিযানে বিপরীতে সিএমপি’র দক্ষিণ বিভাগের ডিসি এসএম মেহেদি হাসান বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের ফিঙ্গার স্ক্যান, এনআইডি বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের নামে একাধিকবার নিয়ে সিম একটিভেট করেছে গ্রেফতারকৃত চারজন। এসব সিম রোহিঙ্গাসহ এনআইডিবিহীনদের কাছে বিক্রি করে আসছিল চক্রটি। এ বিষয়ে বাকলিয়া থানার ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, বাকলিয়া থানা এলাকায় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে গ্রেফতারের পর বেশ কয়েকজন অভিযোগ করেছে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ত্রিশটিরও বেশি সিমের জন্য ফিঙ্গার স্ক্যান নিয়েছে। তবে এসব সিম বিক্রেতাদের টার্গেট পূরণ করতেই অপরাধে জড়িয়েছে এই চার সিম বিক্রেতা। তবে ওসি’র কাছে জানতে চাওয়া হলে মূলত মোবাইল অপারেটররাই ডিলার, এজেন্ট ও প্রতিনিধির কাছে মাসিক বিক্রির একটি টার্গেট দেয়ার কারণেই এ ধরনের অপরাধ হচ্ছে। এক্ষেত্রে ওসি নেজাম বললেন, অপারেটরের দোষ নেই গ্রেফতারকৃতরাই প্রতারণার মাধ্যমে সিম বিক্রি করছে। কারণ তারা সিম বিক্রির টার্গেট পূরণ করছে। গত বুধবার বাকলিয়া থানা এলাকা থেকে গ্রেফতারকৃতরা হল, জাবেদ ইকবাল, ফেরদৌস সরোয়ার রবিন, মিশু আহমেদ ও মিনহাজুল ইসলাম। তবে রবিনই অন্যদের সহযোগী হিসেবে ব্যবহার করেছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তিনটি এন্ড্রয়েড মোবাইল, দেড় শ’ সিম ও ফিঙ্গার স্ক্যানার। পুলিশের কাছে রবিন স্বীকার করেছে সে রবি আজিয়াটার লোকাল এজেন্ট।
×