ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ডিএমপির ব্যাপক পরিচ্ছন্নতা অভিযান

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সারাদেশে পুলিশের সচেতনতামূলক কার্যক্রম

প্রকাশিত: ১২:০২, ৪ আগস্ট ২০১৯

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সারাদেশে পুলিশের সচেতনতামূলক কার্যক্রম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গুজব মোকাবেলার পর এবার ডেঙ্গু প্রতিরোধে মাঠে নেমেছে পুলিশ। ইতোমধ্যেই পুলিশ সারাদেশে ডেঙ্গু রোগ সর্ম্পকে সচেতনতামূলক নানা কার্যক্রম শুরু করেছে। পাশাপাশি নিজেরা ছাড়াও স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাচ্ছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে যেসব এলাকায় শহরের সুবিধা আছে, সেসব এলাকায় পুলিশ জোরালোভাবে কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই ঢাকায় পঞ্চাশ হাজার পুলিশ সদস্য পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেছে। ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ থাকা পর্যন্ত এমন তৎপরতা চালাতে পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দেশনা জারি করেছেন। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ জুলাই পুলিশ সদর দফতরে বাহিনীর সকল ইউনিটের প্রধান ছাড়াও দেশের সব জেলার পুলিশ সুপারদের ডাকা হয়েছিল। সেখানে দিনব্যাপী দেশের নানা বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা সভা হয়। আলোচনায় সারাদেশে ডেঙ্গু আতঙ্কের বিষয়টিও প্রাধান্য পায়। এক্ষেত্রে পুলিশের করণীয় সর্ম্পকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সম্প্রতি গুজব ঠেকাতে সারাদেশে পুলিশ সম্মিলিতভাবে কাজ করে সফল হয়। গুজব ঠেকানোর অভিজ্ঞতা থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে সচেতনতাসহ নানা কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত হয়। সভা শেষে পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী গুজবের মতো ডেঙ্গু প্রতিরোধেও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করেন। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পুলিশের প্রতিটি ইউনিটকে নির্দশনা দেন তিনি। শনিবার সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানের উদ্বোধন করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ লাইন এলাকায় এডিস মশার লার্ভার সন্ধান পেয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। এরপর এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে ডিএমপির সব ইউনিটকে একযোগে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলাতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শনিবার সকাল সাতটা থেকে সব জায়গায় এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ডিএমপি পরিচ্ছন্নতা অভিযান অব্যাহত রাখবে। ঈদের আগেই ডেঙ্গু পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক করা যায়, সে চেষ্টাও চলছে। শুধু সরকার বা স্বাস্থ্য বিভাগের একার পক্ষে মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এজন্য সবার সচেতন হতে হবে। নিজ নিজ আঙ্গিনা পরিষ্কার করতে হবে। ঢাকা শহরের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের গতি আরও বাড়ানো হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৩০ জুলাই রাতে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশের বিশেষ শাখায় কর্মরত এক নারী সদস্য মারা গেছেন। এমন ঘটনা পুলিশের উচ্চ পর্যায়ে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। এমন ঘটনার পর ডিএমপির সকল স্থাপনা, তার আশপাশ, পুলিশ লাইন্স, ব্যারাক, অফিস, থানা, ফাঁড়ি, কন্ট্রোল রুম, তদন্ত কেন্দ্র, পুলিশের শপিং মল, মেস ও ডাইনিং এবং আবাসিক ভবনের পরিত্যক্ত আঙ্গিনা, ফুলের টব, ড্রেন, জমে থাকা স্বচ্ছ পানির স্থান, ডাবের খোসা ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে অভিযান চালানো হচ্ছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকা পর্যন্ত এমন অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তরফ থেকে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রতিটি জেলার পুলিশ সুপাররাও ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম ছাড়াও পুলিশের সকল স্থাপনায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাচ্ছে। ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ থাকা পর্যন্ত এমন অভিযান অব্যাহত রাখা হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে রংপুর জেলায় নেয়া নানা কার্যক্রম সর্ম্পকে জেলার পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, পুলিশ অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে গুজব মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে। সেই আলোকে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে পুলিশ সদর দফতরের তরফ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ডেঙ্গুর হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না রংপুর জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষও। বিশেষ করে যেসব এলাকায় শহরের সুবিধা আছে, সেসব এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ তুলনামূলক বেশি। তিনি আরও জানান, রংপুর জেলায় পুলিশের প্রতিটি স্থাপনায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হয়েছে। পুলিশ লাইন থেকে শুরু করে পুলিশের সকল স্থাপনায় এমন অভিযান ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকা পর্যন্ত চালানোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। শুধু পরিচ্ছন্নতা অভিযান নয়, পাশাপাশি মশক নিধনে কার্যকর ওষুধ ছিটানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এমনকি মশক নিধন কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং করতে বলা হয়েছে। এছাড়া জেলার প্রতিটি সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ও নতুন করে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগী সর্ম্পকেও নানা তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। জেলাটিতে থাকা নির্মাণাধীন ভবন চিহ্নিত করে, সেসব ভবনে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হচ্ছে। এছাড়া ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তারা যেন ক্লাসে এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করেন, তা বিষয়ে অনুরোধ করা হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ডেঙ্গু সচেতনতায় কাজ করছে। তবে যেসব এলাকায় শহরের সুবিধা আছে, সেসব এলাকাগুলোতে ডেঙ্গুর প্রকোপ আছে। প্রত্যন্ত গ্রামের ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ নেই বললেই চলে। এজন্য প্রত্যন্ত গ্রামে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে তেমন কোন কাজ করতে হয় না। তারপরেও আগাম সচেতনতা বাড়াতে গ্রামের মানুষদের ডেকে স্থানীয়দের মাধ্যমে ডেঙ্গু সর্ম্পকে জানানো হচ্ছে। জেলাটিতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা যাতে কোথাও থাকতে না পারে, এজন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ের তৎপরতা অব্যাহত রাখা হয়েছে। এমন তৎপরতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখা হবে।
×