ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এক হাজার ৩২০ মে.ও. আরও একটি বিদ্যুত কেন্দ্র হচ্ছে পায়রায়

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ২৮ জুলাই ২০১৯

 এক হাজার ৩২০ মে.ও. আরও একটি বিদ্যুত কেন্দ্র হচ্ছে পায়রায়

রশীদ মামুন ॥ পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রর দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। সমান এক হাজার ৩২০ মেগাওয়টের আরও একটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে পায়রাতে। নতুন এই কেন্দ্রটি তিন বছরের মধ্যে উৎপাদনে আসবে। বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানির পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট আগামী ডিসেম্বরে উৎপাদনে আসবে। এই কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতাও এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) সূত্র জানায়, পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ শুরুর পর সিদ্ধান্ত হয় সেখানে সমান এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের দুটি কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। যার প্রথমটির নির্মাণ কাজ শেষের পথে। অন্যকেন্দ্রটির নির্মাণ ঠিকাদার হিসেবেও একই কোম্পানিকে কাজ দেয়া হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে প্রথমটির তুলনায় ১৮০ মিলিয়ন ডলার কমে কাজটি দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র সূত্র বলছে, কেন্দ্র নির্মাণের শুরুর যে ঝক্কি তা পোহাতে হবে না এবার। বিদ্যুত কেন্দ্রটির জন্য জমি অধিগ্রহণ করে তা আগেভাগে উন্নয়ন করে রাখা হয়েছে। এছাড়া কয়লা খালাস করার জন্য অবকাঠামোও প্রথম ইউনিটের নির্মাণের সঙ্গেই শেষ হচ্ছে। ফলে নানা দিক থেকে এগিয়ে থাকায় পায়রা দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ আগেই শেষ হবে। বিসিপিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। এখন টেস্ট পাইল করা হচ্ছে। টেস্ট পাইল শেষে ডিজাইন করা হবে। তিনি বলেন, যেহেতু আমরা একইসঙ্গে ভূমি অধিগ্রহণ এবং উন্নয়নের কাজ করে রেখেছিলাম তাই এখন আর এসব ঝক্কি নেই। এখন শুধু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বিদ্যুত কেন্দ্রের মূল অবকাঠামো নির্মাণ করবে। কেন্দ্রটি নির্মাণ কাজ শুরুর তিন বছরের মধ্যে উৎপাদনে আসবে। বিসিপিসিএল এর একজন কর্মকর্তা বলেন, একটি কেন্দ্র নির্মাণ করার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দ্বিতীয় কেন্দ্রটি সহজেই নির্মাণ করা যাবে। এই কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্যও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে চীন। এর আগে চীনা এক্সিম ব্যাংকের ঋণে প্রথম কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়। বিদ্যুত বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারী যেসব কোম্পানিকেই কয়লা চালিত বড় বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করতে বলা হয়েছে তাদের একই সঙ্গে দ্বিতীয় ইউনিটও নির্মাণ করতে বলা হয়েছে। সেই হিসেবে রুরাল পাওয়ার কোম্পানি (আরপিসিএল) এবং আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এএসপিসিএল) ও দুটি করে কেন্দ্র নির্মাণ করবে। এছাড়া সরকারী কোম্পানি কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (সিপিজিসিএল) মাতারবাড়িতে যে এক হাজার ২০০ মেগাওয়টের কেন্দ্র নির্মাণ করছে সেখানেও দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণের চেষ্টা করছে তারা। তবে কেবলমাত্র রামপালে পরিবেশবাদীদের প্রতিবাদের মুখে দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণ কাজ বাতিল করেছে বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানি (বিআইএফসিএল)। মনে করা হয় এমন কিছু অবকাঠামো রয়েছে যা একাধিক বিদ্যুত কেন্দ্রও ব্যবহার করতে পারে। এতে একই এলাকায় একাধিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হলে ওইসব অবকাঠামো আর প্রয়োজন পড়ে না। এতে দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণ ব্যয় কমে যায়। এতে একইসঙ্গে বিদ্যুত উৎপাদন করায় ইউনিট প্রতি খরচ কমে আসে। পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রর দ্বিতীয় ইউনিটের জন্য গত ১৬ মে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনইপিসি এর সঙ্গে চুক্তি করে বিসিপিসিএল। চুক্তি সই’র এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এনইপিসি দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে গত ১১ জুন। চলতি মাস থেকে এই কাজ জোরেশোরে শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। চুক্তিতে বলা হয়েছে ২০২২ সালের জুনে বিদ্যুত কেন্দ্রটির ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসবে। আর সমান ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে আসবে এর ঠিক ছয় মাস পর ওই বছর ডিসেম্বরে। সেই হিসেবে কেন্দ্রটি মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্রের আগে উৎপাদনে আসবে। দেশে যে কয়েকটি কোম্পানি কাজ করছে তার মধ্যে সব থেকে এগিয়ে রয়েছে বিসিপিসিএল। রাষ্ট্রীয় নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি (এনডব্লিউপি-জিসিএল) এবং চীনের ন্যাশনাল মেশিনারি এক্সপোর্ট এ্যান্ড ইমপোর্ট কর্পোরেশন (সিএমসি) কেন্দ্রর সমান মালিক। এ ধরনের একটি কেন্দ্র নির্মাণে দুই বিলিয়ন ডলার বা ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়। প্রসঙ্গত পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রর এই হাবে দুই হাজার ৬৪০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুত ছাড়াও আরও তিন হাজার ৬০০ মেগাওয়াট এলএনজি ভিত্তিক এবং ৫০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।
×