ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশ আজ উন্নয়নে বিস্ময় ॥ সোনার বাংলায় ‘দারিদ্র্য’ হবে সুদূর অতীতের কোন ঘটনা

প্রকাশিত: ১০:১৩, ২৭ জুন ২০১৯

দেশ আজ উন্নয়নে বিস্ময় ॥ সোনার বাংলায় ‘দারিদ্র্য’ হবে সুদূর অতীতের কোন ঘটনা

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশী-বিদেশী নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে উন্নয়ন, অগ্রগতি আর সমৃদ্ধির পথে হাঁটছে আমাদের আজকের বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ সরকারের জনকল্যাণমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন উদ্যোগ বাস্তবায়নের কারণে বাংলাদেশের এই উন্নয়ন এবং অদম্য অগ্রযাত্রা সম্ভব হয়েছে। আশির দশকের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র অপবাদ কাটিয়ে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন বিস্ময় হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত উন্মোচিত হচ্ছে নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার। রূপকল্প-’৪১ বাস্তবায়ন করে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তুলনীয় এক শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, সুখী ও উন্নত জনপদ। সোনার বাংলায় ‘দারিদ্র্য’ হবে সুদূর অতীতের কোন ঘটনা। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থাকে বিকেন্দ্রীকরণের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থা বিকেন্দ্রায়িত হবে। সরকারী ব্যয়ের সিংহভাগ বাস্তবায়িত হবে স্থানীয় পর্যায়ে, এ দায়িত্ব পালন করবে স্থানীয় প্রশাসন; পরিকল্পনা করা হবে স্থানীয় প্রশাসন ও কেন্দ্রের সুস্পষ্ট সমন্বয়ের মাধ্যমে সুশাসন, জনগণের সক্ষমতা ও ক্ষমতায়ন হবে এই অগ্রযাত্রার মূলমন্ত্র। নারীর ক্ষমতায়ন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা, শিক্ষার প্রসার ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি হবে এই অগ্রযাত্রার নিয়ামক। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা আমরা এমন পর্যায়ে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি যে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প নিজেদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছি। পদ্মা সেতুসহ আমরা দশটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। ’৪১ সালে ১৬ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি মাথাপিছু আয় নিয়ে বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশে পরিণত হবে। বিএনপি-জামায়াত জোটের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই আওয়ামী লীগ সরকারের করা এই অগ্রযাত্রা থমকে দাঁড়ায়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে। আবার দুর্নীতির চক্রে নিপতিত হয় দেশ। হাওয়া ভবনের নামে তারেক জিয়া চালাতে থাকে লুটপাট। অর্থনৈতিক উন্নয়ন সূচকের প্রায় সবগুলোতেই বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়তে থাকে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। আমরা আবার দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য মনোনিবেশ করি। দেশ সবক্ষেত্রে এগিয়ে যায়। আগামী ৫ বছরে দেড় কোটি কর্মসংস্থান ॥ সরকার দলীয় অপর সংসদ সদস্য আবদুল লতিফের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, আমাদের সরকার আগামী পাঁচ বছরে দেড় কোটি কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সরকার দেশের বেকারত্ব দূর করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে তরুণ প্রজন্মকে মানবসম্পদে পরিণত করার লক্ষ্যে সপ্তম পাঁচসালা পরিকল্পনার (২০১৬-২০) কৌশল ও লক্ষ্যমাত্রার ভিত্তিতে বর্তমান সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি জানান, টেকসই উপায়ে মাঝারি ও চরম দারিদ্র্য নিরসনের সর্বোৎকৃষ্ট উপায় হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও প্রকৃত মজুরি প্রদান। এ লক্ষ্যে বেকার তরুণদের মানবসম্পদ হিসেবে উন্নয়নের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। লক্ষ্য সামনে নিয়ে আমরা বেকার যুবকদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের ক্ষেত্রে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছি। সংসদ নেতা জানান, অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে ক্রমবর্ধিত হারে নারী শ্রমশক্তির অংশগ্রহণে প্রায় ৩.১ শতাংশ হারে মোট শ্রমশক্তি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পাঁচবছর মেয়াদে ১২.৯ মিলিয়ন অতিরিক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যার মধ্যে প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য ২ মিলিয়ন কর্মসংস্থান ও অন্তর্ভুক্ত। প্রবাসে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের বর্তমান ধারা অপরিবর্তিত থাকবে বলে আশা করা যায়। ২০১৭-১৮অর্থবছরে বিদেশে শ্রমিক পাঠানো হয়েছে ৮ লাখ ৮০ হাজার। তিনি বলেন, বিগত ১০ বছরে দেশের ইপিজেডে ৩ লাখ ৫ হাজার ২৪২ জনবলের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার সরকারের অসহযোগিতা ॥ পুলিশের সাবেক আইজিপি সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে রাজি হয়নি। ফলে ২৫ নবেম্বর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হয়নি। আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আমরা তিনটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদন করেছি। চুক্তির একটিতে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে যে দুই বছরের মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে, তথাপিও মিয়ানমার সরকার নানা টালবাহানা সৃষ্টি করে এই প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চুক্তিতে সুস্পষ্ট বলা আছে যে বাস্তুচ্যুত এই রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা, সম্মান ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। চুক্তির এ আদর্শ ও মূল বাণী বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমার সরকারকেই উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে এবং আশ্বাস দিতে হবে কেননা মিয়ানমার সরকার নিজেরাই এ সমস্যা তৈরি করেছে। বিশ্ব জনমত ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের অব্যাহত সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘ এ বিষয়ে মানবাধিকার কমিশনে একটি রিপোর্ট প্রেরণ করেছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকার তাদের এ বিষয়ে কাজ করতে দিচ্ছে না। মিয়ানমারের অসযোগিতা সত্ত্বেও আমরা দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক দুটি পথই খোলা রেখেছি। বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত পররাষ্ট্রনীতি অনুযায়ী সকল বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির বিষয়ে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার মূলধারায় ॥ গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশের বেশ কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী কওমি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করছে। দেশের কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে মূলধারার সঙ্গে যুক্ত, জাতীয় উন্নয়ন এবং এ সব শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় রেখেই পর্যায়ক্রমে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূল ¯্রােতধারায় আনার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। তিনি জানান, কওমি মাদ্রাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতিসমূহকে ভিত্তি ধরে ‘আল-হাইআতুল উলুয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশের অধীনে কওমি মাদ্রাসাসমূহ পরিচালিত হচ্ছে। আমরা দাওরায়ে হাদিসের (তাকমীল) সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রীর (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান দিয়ে আইন প্রণয়ন করেছি। আশা করা যায়, এ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন ও বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের ফলে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থা মূলধারার শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে যেতে পারে। বিদ্যুতের ঘাটতি নেই ॥ বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মহাসচিব আবদুল মান্নানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিদ্যুত অপরিহার্য। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে গুরুত্বপূর্ণ খাত ছিল বিদ্যুত। নবম সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে তখন বিদ্যুত উৎপাদন ছিল মাত্র ৩ হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও ক্যাপটিভসহ ২১ হাজার ৬২৯ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর হতে বিদ্যুত খাতের উন্নয়নে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বেশি থাকায় বর্তমানে বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদা প্রায় ১২ থেকে ১৩ হাজার মেগাওয়াট। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ক্ষমতা বেশি থাকায় বর্তমানে সারাদেশে বিদ্যুতের কোন ঘাটতি নেই। তবে গ্রীষ্মকালে সঞ্চালন ও বিতরণ নেটওয়ার্কের সীমাবদ্ধতা, গ্যাস সরবরাহের অপ্রতুলতা ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য মাঝে মধ্যে বিদ্যুত বিভ্রাট ঘটে। বয়স্ক ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হবে ॥ সরকার দলীয় সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিলের প্রশ্নের লিখিত জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা জানান, বয়স্ক জনগোষ্ঠী বিশেষ করে বয়স্ক মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বিধান, পরিবার ও সমাজে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি ও চিকিৎসার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার সর্বপ্রথম ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে বয়স্ক ভাতা চালু করে। তখন বয়স্ক ভাতার পরিমাণ ছিল মাসিক এক শ’ টাকা এবং ভাতাভোগীর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩ হাজার। তিনি জানান, জনপ্রতি মাসিক ভাতার হার আমরা ৫০ টাকা বৃদ্ধি করেছি এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভাতাভোগীর সংখ্যা ৪০ লাখ। আগামী অর্থবছরে বয়স্ক ভাতা বৃদ্ধি করে ৪৪ লাখে উন্নীত করা হবে। বয়স্ক ভাতা সহায়তার আওতা সম্প্রসারণ ও ভাতার পরিমাণ পর্যায়ক্রমে আরও বৃদ্ধি করা হবে।
×