ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গ্রামের সেই ভাঙ্গা কাপের চায়ের দোকানেও এখন টিভি, ইন্টারনেট

প্রকাশিত: ১১:০৯, ১১ জুন ২০১৯

 গ্রামের সেই ভাঙ্গা কাপের চায়ের দোকানেও এখন টিভি, ইন্টারনেট

বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ ॥ গ্রামের পাকা সড়ক দিয়ে হেঁটে এসে চায়ের দোকানে বসলেন গান্ধাইলের আশরাফ আলী। এক কাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে বেঞ্চে বসে চোখ রাখলেন টেলিভিশনের দিকে। আশরাফ আলী চায়ের কাপে চুমুক দিয়েই টেলিভিশনের চ্যানেলটি ঘুরিয়ে দিলেন। রাজনৈতিক আলোচনা শুনবেন। এরই মধ্যে একজন বলে উঠলেন, ভাই, দেখি তো ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের রান কত? রাজনীতি, ক্রিকেট, উন্নয়ন ও বিনোদনের খবরও রাখেন গ্রামের মানুষ। এসবই চায়ের দোকানে বসে আড্ডায় আলোচনা হয়। তর্ক বিতর্ক হয়। ষাটের দশকে এ দেশে টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হলেও তা ছিল রাজধানী কেন্দ্রিক। ক্রমান্বয়ে তা শহরে ছড়িয়েছে। ডিজিটাল যুগে গ্রামে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে গেছে টেলিভিশন। তারপর চায়ের দোকানে। এখন তো টেলিভিশন, টেরিস্ট্রিয়াল ও ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়া চা দোকান মানায় না। গান্ধাইল সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলার এক পাড়াগাঁও। গান্ধাইল- কুড়িপাড়া পাকা সড়কের পাশে স্কুল মাঠের পূর্ব কোনায় এই চায়ের দোকানে চুলা জ্বলে সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। গ্রীষ্মকালে তা গড়ায় রাত দ্বি-প্রহর পর্যন্ত। এই পাড়াগাঁয়ে সে সময়ের জুনিয়র হাই স্কুলে বাল্যকালে পড়ালেখা করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিশ্বস্ত রাজনৈতিক সহচর, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের মন্ত্রী, ১৯৭৫ এর ৩ নবেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ঘাতকের বুলেটে নিহত সিরাজগঞ্জের মাটি ও মানুষের সন্তান শহীদ এম মনসুর আলী। যিনি ‘ক্যাপ্টেন মনসুর’ নামে বঙ্গবন্ধুর কাছে পরিচিত ছিলেন। শহীদ এম মনসুর আলীর স্মৃতি বিজড়িত গান্ধাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, স্বাস্থ্য সেবায় টেকনিক্যাল সাপোর্ট প্রদানে শিক্ষিত জনবল তৈরির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আই এইচটি) স্থাপন করেছেন। এ প্রজন্মের মানুষের কাছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও মনসুর আলীকে তুলে ধরার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও মনসুর আলীর ম্যূরাল স্থাপন করে অত্যাধুনিক ডিজাইনের তোরণ ও গোলচত্বর নির্মাণ করা হয়েছে। এসব গ্রাম এখন শহরের পরিবেশ ফিরে পেয়েছে। গ্রামের চায়ের দোকানে টেলিভিশন, ভিডিও। রীতিমতো আড্ডা চলে রাত পর্যন্ত। এই আাড্ডা কখনও কখনও রাত দ্বি-প্রহর পর্যন্ত গড়ায়। রেডিও এখন আর বাজে না। টেরিস্ট্রিরিয়াল চ্যানেল না থাকলেও ডিশ লাইনে সারা দুনিয়ার দেখা মেলে। আড্ডায় রাজনীতির আলোচনাই বেশি। গ্রামের মানুষজনও এখন রাজনীতিতে জড়িয়েছে। উন্নয়ন চোখে দেখে, উন্নয়নের কথা বলে। গ্রামের রাস্তাঘাটেরও উন্নয়ন হয়েছে। কাঁচা কিংবা ইটপারা হেরিংবন বন্ড রাস্তা গ্রামে খুঁজে পাওয়া ভার। ক্রিকেট খেলার দর্শকেরও কমতি নেই। এক সময় গ্রামে চায়ের দোকান খুঁজে পাওয়া ছিল দুষ্কর। এখন সড়কের মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকান, এসব দোকানে টি ব্যাগের চা সহ গ্রীন টি ও পাওয়া যায়। প্রতিটি দোকানে টেলিভিশনে ভিডিও চলে। বিদ্যুত পৌঁছেছে ঘরে ঘরে। এ সুবাদে টেলিভিশনও দেখার সুযোগ মিলেছে। চায়ের দোকানে টেলিভিশন এর মূল উদ্দেশ্য গ্রাহক আকর্ষণ করা। যে চা দোকানে টেলিভিশন নেই, সে দোকানে কাস্টমারও কম। গ্রামের মানুষ শহরের অনেক মানুষের মতোই চা পানে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। সামান্য অবসরে চা দোকানে বসে। টেলিভিশনের পর্দায় দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলাসহ দুনিয়া দেখার সুযোগ নেয়। এসবই হচ্ছে গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে। জীবন যাত্রার মানও বেড়েছে। গ্রাম এবং শহরের পার্থক্যও অনেকাংশে কমে এসেছে। এক কালের গ্রামের ভাঙ্গা কাপের চায়ের দোকান এখন ডিজিটালাইজড হয়েছে। তবে এ বছর ধানের দাম নিয়ে গ্রামের কৃষক ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। এক মণ ধান বিক্রি করে এক দিনের কামলা (কৃষি মজুর) খরচ জোটাতে পারেনি। সরকারের নীতি নির্ধারকেরা কে কী বলেছেন তাও তারা ঘরে বসে জেনেছেন। উপজেলা পরিষদের ভোট জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সমগ্র দেশের চিত্রও অবগত হয়েছেন। সিরাজগঞ্জ তথা গোটা বাংলাদেশের গ্রামে তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের ঢেউ লেগেছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির উন্নয়নের ফসল শুধু শহর নয়- গ্রামের মানুষও ভোগ করছেন।
×