ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

১২ মে মা দিবস মায়েদের জন্য ভালবাসা ও শ্রদ্ধা

প্রকাশিত: ১১:৪৪, ১০ মে ২০১৯

 ১২ মে মা দিবস মায়েদের জন্য ভালবাসা ও শ্রদ্ধা

‘মা’ একটি ছোট্ট শব্দ। কিন্তু এর গভীরতা, ব্যাপকতা এবং তাৎপর্যের কোন সীমানা নেই। এমন বোধ আর অভিব্যক্তি সৃষ্টির উষাকাল থেকেই। মা এক চিরস্থায়ী সুষমা যা সন্তানদের জীবনে নিরন্তর স্রোতধারা। আদিম গুহাবাসী মানুষ যখন অপরিচিতের অন্ধকারে তখন একমাত্র মা-ই সন্তান জন্ম দিয়ে নিজের পরিচয়কে উন্মোচন করে। প্রাচীন কালের অবাধ স্বেচ্ছাচার আর বর্বর যুগে দলগত বিবাহের উন্নতমানের পর্যায়েও পিতার কোন স্বীকৃতি ছিল না। মা-ই ছিল চিহ্নিত এবং স্বীকৃত জন্মদাত্রী। তাই মায়ের সঙ্গে সন্তানের নিবিড় সম্পর্ক সেই পৃথিবী সৃষ্টির গোড়া থেকেই। তাই আত্মিক বন্ধনও সে মাত্রারই এক চিরকালের অন্তরদোতনা। সেই বোধে কোন দিবস বা দিনে এর আটকে থাকা একেবারে অসম্ভব। জন্মমুহূর্ত থেকে যার সঙ্গে সন্তানের নাড়ির টানই শুধু নয়, এক অবিচ্ছিন্ন অন্তর নিঃসৃত সুধাবর্ষণেরও এক অনুপম ঝরণা। সত্যিই মা মানেই এমন এক হৃদয় স্রোত উৎসারিত আলো যা সন্তানকে আলোকিত জগতের মুখ দর্শনই শুধু নয়, স্নেহ-মমতার অবিমিশ্র ধারায় এক অনাবিল সুখস্বপ্নও বটে। মা দিবসে সন্তান বাৎসল্যের অতুলনীয় অভিব্যক্তিকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা, ভালবাসা আর অভিনন্দন। ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে জগতের সব মাই এক কাতারে নিজের অবস্থানকে সংহত করে, আলো ছড়ায় এবং মায়া মমতার গ্রন্থিকে দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর করে তোলে। কোন এক কন্যাশিশু জন্মের শুভমুহূর্তে জননীর কোল ভরিয়ে দেয়ার সময়ই সেও মাতৃত্বের মহিমায় নিজের ভাবি জীবনকে অনুভব করে নেয়। আস্তে আস্তে বড় হতে হতে তার ভেতরের বোধ তাকে ভাবি জননীর এক স্বর্ণ সিংসাহনে বসিয়ে দেয়। তাই শিশুকন্যার জীবনের প্রথম খেলনার প্রতিমূর্তি হয়ে ধরা দেয় কোন এক পুতুল। আর এই পুতুল খেলার মধ্য দিয়ে তার মাতৃসুধা অন্তর থেকে সিক্ত হতে থাকে। বাস্তবে মা হওয়ার আগেই খেলার আঙিনায় তার মাতৃরূপ স্পষ্টতর হয়ে উঠতে থাকে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়- ছিলি আমার পুতুল খেলায় প্রভাতের শিব পুজোর বেলায় তোকে আমি ভেঙেছি আর গড়েছি। আশৈশব মাতৃমহিমায় সেই যে নিজেকে সাজানো, গোছানো সেখান থেকেই একটি অবোধ বালিকা মাতৃত্বের চিরস্থায়ী অহঙ্কারে অভিষিক্ত হয়। যথার্থ মায়ের ভূমিকায় যেসিন তার পথচলা সেখানে সে হয় মাতৃশৌর্যের এক অনির্বাণ শিখা। যার নিরন্তর আলোয় সন্তানের জীবন গড়ার সবচাইতে বড় পাথেয়। মা মানেই জীবন ও সম্পর্কের এক সৃদৃঢ় গ্রন্থি যা সন্তানদের পথ পরিক্রমাকে এক অবিস্মরণীয় গন্তেব্যে পৌঁছে দিতে সবচাইতে নিয়ামক শক্তি। নেপোলিয়নের বক্তব্য আজও মাদের উদ্দীপ্ত করার এক অমৃত বার্তা। তিনি বলেছিলেন আমাকে একজন ভাল মা দাও আমি একটি সুন্দর জাতি উপহার দিব। যুগে যুগে এমন মায়েদের শ্রেষ্ঠ সন্তানরাই দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করেছেন। শুধু তাই নয়, জ্ঞান-বিজ্ঞানে সারা পৃথিবীকে আলোয় আলোয় ভরে দিয়েছেন মায়েদের যোগ্য সন্তানরাই। মায়ের ছায়া আর স্নেহে সন্তানের ভাবি জীবনের যে সুনিশ্চিত পথ চলা সেখান থেকে বিচ্যুত হলে সর্বনাশ হতেও সময় নেয় না। এমন নজিরও আমাদের চার পাশে কম নেই। তবে এমন মহতী দিনে শুধু মায়ের জয়গানে লক্ষকোটি সন্তানের জীবন ও পথচলা সুষ্ঠু ও স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে যাক। সন্তানরা দেশের বিশিষ্টতম এবং যোগ্য নাগরিক তৈরি হোক মায়েদের তত্ত্বাবধানের অকৃত্রিম স্নেহজালে। মায়ের অবিস্মরণীয় সুষমায় সন্তানরা যেভাবে প্রতিনিয়ত সিক্ত হতে থাকে তার কিছু বিচ্যুতি কিংবা ব্যতিক্রমে মা এবং সন্তান দু’জনেই বিপাকে পড়তে সময় নেয় না। মনে রাখতে হবে বাল্য বিয়ে আর অকাল মাতৃত্ব মা ও সন্তানের জীবনকে উল্টোদিকে মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। একটি মেয়ের স্বাভাবিক বয়োবৃদ্ধিতে সে বিয়ের পিঁড়িতে বসার উপযুক্ত কিনা সেটা যেমন ভাবা জরুরী-একইভাবে মা হবার মতো শরীর আর মনের পরিপক্বতা কতখানি তাও চিন্তায় আনতে হবে। তা না হলে মা দিবস তার মর্যাদা হারাবে। কন্যা সন্তানের বিয়ের ও মা হবার বয়স আইনী ব্যবস্থাপনায় যাই থাকুক না কেন চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরামর্শকে অনুসরণ করা সবার নৈতিক দায়িত্ব। একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক নারী যে কিনা বিয়ে এবং মাতৃত্বকে ধারণ করার ক্ষমতা রাখে সেই একজন যথার্থ সন্তানের জন্ম দিতে পারে। মা দিবসে এমন অঙ্গীকার সব মেয়ের জীবনকে নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করে তুলবে। বাল্য বিয়েকে জোরালোভাবে থামাতে হবে। অপরাজিতা প্রতিবেদক
×