ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গৃহবধূকে গাছে বেঁধে বিবস্ত্র করে চুল কর্তন

প্রকাশিত: ১১:১২, ২৯ মার্চ ২০১৯

 গৃহবধূকে গাছে বেঁধে বিবস্ত্র করে চুল কর্তন

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুষ্টিয়া, ২৮ মার্চ ॥ গাছে বেঁধে বিবস্ত্র করে মাথার চুল কেটে মধ্যযুগীয় কায়দায় এক গৃহবধূকে (৩৫) নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে তার সতীন ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে ২৪ মার্চ ভেড়ামারা উপজেলার প্রত্যন্ত গোলাপনগর বাজার এলাকায়। প্রথমে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ভয়ে প্রতিবেশীরা কেউ এগিয়ে না এলেও তার আর্তচিৎকারে পথচারীরা এগিয়ে এসে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে ভেড়ামারা উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। এদিকে গৃহবধূর শ^শুরবাড়ির লোকজনের এই বর্বরতার ঘটনায় থানায় মামলা হলেও জড়িতদের কাউকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। এতে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ। তবে পুলিশ বলছে, দ্রুতই আসামিদের গ্রেফতার করা হবে। ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তালাকপ্রাপ্ত ওই নারী দ্বিতীয় বিয়ে করেন বর্তমান স্বামী আসলাম হোসেনকে। ২৪ মার্চ বিনা অপরাধে তাকে ঘর থেকে টেনে হিঁচড়ে বাইরে নিয়ে গিয়ে বিবস্ত্র করে চরম আপত্তিকর অবস্থায় গাছের সঙ্গে বেঁধে মাথার চুল কেটে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। প্রকাশ্যে এমন বর্বর দৃশ্য দেখে স্থানীয়রা ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। এদিকে নির্যাতনের শিকার ওই নারী সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি এ ঘটনায় জড়িতেদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। এ বিষয়ে তিনি জড়িত ৭ জনের বিরুদ্ধে ভেড়ামারা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। কিন্তু ঘটনার ৫ দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। প্রত্যক্ষদর্শী আলেজান নেছা (৫৫) জানান, বিকেলের দিকে হঠাৎ শোরগোল শুনে বাইরে এসে দেখি ময়নাকে তার স্বামী আসলামের ১ম স্ত্রী সাবিনাসহ ৫/৬ জন মিলে টেনে হিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে এনে মাথার চুল কেটে, গায়ের পোশাক খুলে সজিনা গাছের সঙ্গে ওড়না ও রশি দিয়ে বেঁধে বেদম মারধর করছে। নির্যাতিতার স্বামী আসলাম হোসেন বলেন, মাত্র দেড় মাস আগে তালাকপ্রাপ্ত ময়নার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রথম স্ত্রী সাবিনা তার আত্মীয় স্বজনকে সঙ্গে করে প্রথমে আমাকে মারধর করে। পরে তারা ঘরে ঢুকে ময়নাকে টেনে হিঁচড়ে বাইরে বের করে নিয়ে যায় এবং চুল কেটে, বিবস্ত্র করে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন চালায়। ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও আসাদুজ্জামান বলেন, নির্যাতিতা গৃহবধূকে যখন হাসপাতালে আনা হয় তখন তার চুল কাটা ও শরীরে কিছু কিছু স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তিনি এখন চিকিৎসাধীন এবং অবস্থা আগের থেকে ভাল। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি কুষ্টিয়ার সভাপতি এ্যাডভোকেট মঞ্জুরী বেগম বলেন, একজন গৃহবধূকে প্রকাশ্যে এমন মধ্যযুগীয় বর্বর নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করার দাবি করছি। সেই সঙ্গে নির্যাতিতার সব রকম আইনী সহায়তার কথা জানালেন তিনি। ভেড়ামারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানান, গৃহবধূ নির্যাতনের ঘটনায় ময়না খাতুন নিজেই বাদী হয়ে ৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রয়া চলছে।
×