ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

র‌্যাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিশেষ দরবারে প্রধানমন্ত্রী

কোন মানুষ যেন অযথা হয়রানির শিকার না হয়

প্রকাশিত: ১১:০৬, ২৯ মার্চ ২০১৯

 কোন মানুষ যেন অযথা হয়রানির শিকার না হয়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার জন্য শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, অন্যায়ে লিপ্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, কিন্তু কোন নিরপরাধ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি বিষয় সব সময় লক্ষ্য রাখতে হবে- যারা অন্যায় করবে সে যেই হোক, অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে, সঙ্গে সঙ্গে এটাও দেখতে হবে যে, অযথা কোন মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়। কোন আইন প্রয়োগের সময় মানবাধিকারের বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখেই ‘দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের পালন’ নীতি অবলম্বন করেই প্রধানমন্ত্রী র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রতি কাজ করার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র‌্যাব ফোর্সেস সদর দফতরে র‌্যাবের ১৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ দরবারে র‌্যাব সদস্যদের উদ্দেশে একথা বলেন। খবর বাসসর। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে তিন বাহিনী প্রধানগণ, সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, পুলিশের আইজিপিসহ পুলিশ ও র‌্যাবের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, মহাপরিচালক বিজিবি, মহাপরিচালক আনসার ও ভিডিপি এবং কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ভিডিও লিংকেজের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন র‌্যাব ফোর্সেস ইউনিটের সদস্যরাও অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ২০১৮ সালে র‌্যাব ফোর্সেসের অভিযানিক সাফল্য নিয়ে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়। এর আগে এদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী কুর্মিটোলায় র‌্যাব ফোর্সেসের সদর দফতরে পৌঁছলে র‌্যাবের একটি সুসজ্জিত চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে আজকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো সহজ হয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের একটা রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। তবে, এই উন্নয়নের ধারাটা তখনই অব্যাহত থাকবে যখন আমরা দেশে বর্তমানের ন্যায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে পারব। তিনি অপরাধ প্রবণতা বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি অবরাধ প্রবণতায় যুক্ত হওয়া প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে র‌্যাবের সদস্যদের নজর দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, অপরাধ যারা করবে অর্থাৎ অপরাধীকে গ্রেফতার ও শাস্তির ব্যবস্থা করা সেটাও যেমন আমাদের কাজ তেমনি অপরাধের সঙ্গে কেউ যেন যুক্ত না হয় সেই ব্যবস্থাটাও আমাদের নিতে হবে। আর সেটা করতে হলে একটা সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার। শেখ হাসিনা বলেন, আমি এই কথাটা সকলের উদ্দেশে বলবÑ আপনারা সকলে সেই বিষয়টার প্রতি দৃষ্টি দেবেন যেন কোন ধরনের অপরাধের সঙ্গে কেউ যুক্ত না হয়। র‌্যাবের কার্যক্রমকে আরও গতিশীলকরণে তার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের কল্যাণে, জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে এবং মনে রাখতে হবে যেহেতু সকলেই এই দেশের সন্তান তাই দেশের উন্নতি হলে, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হলে এর সুফলটা নিজ নিজ পরিবারের সদস্যরাই পাবে, দেশের মানুষই পাবে। সেই সঙ্গে গ্রামে-গঞ্জে যারা বসবাস করে তাদের ভাগ্যের উন্নতি হবে। বাংলাদেশই সার্বিকভাবে দারিদ্র্যমুক্ত হয়ে গড়ে উঠতে পারবে। তিনি বলেন, দেশটার উন্নয়ন হলে কেউ গৃহহীন থাকবে না,সকলেই আবাসন সুবিধা, অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসাসহ মৌলিক সুবিধা নিয়ে সুন্দরভাবে বাঁচার সুযোগ লাভ করবে এবং সমগ্র জাতিই উন্নত, সমৃদ্ধশালী হিসেবে গড়ে উঠবে; যে স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কয়েক দফায় বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, আবাসন সঙ্কট সমাধান এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনে যানবাহনের সুবিধা বৃদ্ধিতে তার সরকারের উদ্যোগের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, অর্থনৈতিকভাবে আমরা যতটা স্বাবলম্বী হতে পারব ততটাই আমরা সুযোগ-সুবিধা দিতে পারব এবং আমাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই সুন্দরভাবে যেন তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারে সেটাই আমরা চাই। এজন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠান যেন স্ব -স্ব ক্ষেত্রে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে তাদের সেই কাজের সুবিধাটা আমরা করে দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় র‌্যাবের প্রতিটি সদস্য দেশপ্রেম, আন্তরিকতা,সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের পেশাগত দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমন, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র এবং মাদকদ্রব্য উদ্ধার, জাল মুদ্রা, জাল পাসপোর্ট প্রস্তুতকারী, অবৈধ ভিওআইপি বিরোধী অভিযান এবং ভেজালবিরোধীসহ নানা অভিযানে র‌্যাব অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে এবং অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তিনি বলেন, কাজেই র‌্যাবের সদস্যগণ দেশের অভ্যন্তরে সাধারণ মানুষের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় যে অবদান রেখেছে আমি এটুকু বিশ্বাস করি যে, দেশের মানুষেরও একটা আস্থা ও বিশ্বাস র‌্যাবের সদস্যদের প্রতি জন্মেছে এবং তারা র‌্যাবকে যথেষ্ট সম্মানের চোখে দেখে। সুন্দরবন এলাকায় জলদসুদের দমন করে তাদের সাধারণ জীবনে পুনর্বাসনে প্রধানমন্ত্রী র‌্যাবের বিশেষ ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি র‌্যাবের সদস্যদের ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, তারা এই পুরো এলাকাটা দস্যুমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। সুন্দরবনকে দস্যমুক্ত করার জন্য তার সরকার ২০১২ সালে একটি টাস্কফোর্স করে দেয় এবং যৌথবাহিনী প্রায়ই সেখানে অভিযান পরিচালনা করত বলেও তিনি উল্লেখ করেন। কেউ যদি দস্যুতা ছেড়ে দিয়ে সাধারণ জীবনে ফিরে আসে তাহলে তিনি তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেবেন মর্মে অতীতে প্রদত্ত ঘোষণার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অঞ্চলের ৩২টি বাহিনীর প্রায় ৩২৮ জলদস্যু এ পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের আমরা আর্থিক সহায়তা দিয়ে ঘর-বাড়ি তৈরি এবং তারা যেন তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারে তার ব্যবস্থা করে দিয়েছি । তিনি বলেন, দস্যুতা ত্যাগকারীদের ছেলেমেয়েরা স্কুল-কলেজে পড়শোনা করছে এবং একটি স্বাভাবিক জীবনযাপন প্রক্রিয়ার মধ্যে চলে এসেছে। দস্যুর সন্তান হিসেবে কেউ আর অপমাণিত হচ্ছে না। একটা সম্মানজনক জীবনযাপন করতে পারছে। শেখ হাসিনা বলেন, যারাই নানারকম সমাজবিরোধী কাজে যুক্ত তারা যদি আত্মমসমর্পণ করে তাহলে তাদেরকে পুনর্বাসনে তার সরকার একই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। দেশে শান্তি বজায় থাকার পাশাপাশি জনগণ যেন সুন্দরভাবে বাঁচার সুযোগ পায় সেটা নিশ্চিত করাই তার সরকারের লক্ষ্য বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিষাক্ত কুফল তুলে ধরে এর কারণে একটি পরিবার ও সমাজ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করে সমাজকে মাদকমুক্ত করার জন্য এ সময় সরকারের জঙ্গীবাদ বিরোধী গণসচেতন কার্যক্রমের ন্যায় সকলকে সম্পৃক্ত করে সমন্বিত কর্মসূচী চালুর বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন। তিনি জঙ্গীবাদকে কেবল বাংলাদেশে নয় একটি বৈশ্বিক সমস্যা আখ্যায়িত করে বলেন, এটি বিশ্বব্যাপী বিরাজমান একটি সমস্যা হলেও এক্ষেত্রে আমরা বেশ কিছুটা সফলতা অর্জন করতে পেরেছি । গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন শ্রেণী পেশার জনগণকে একত্রিত করে এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার কারণে এই সফলতা এসেছে। তিনি বলেন, একদিকে র‌্যাবের অভিযান এবং অপরদিকে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির ফলে জঙ্গীবাদ দমনে আমাদের সফলতা অর্জিত হয়। আর এক্ষেত্রে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে সাফল্য তা আজ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। প্রধানমন্ত্রী জঙ্গী দমনে র‌্যাবের সাফল্যের প্রশংসা করে বলেন, আমরা চাই ভবিষ্যতে আর কখনও এদেশে যেন জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাস মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। জঙ্গীবাদ সৃষ্টির পেছনে অতীতে কতিপয় রাজনৈতিক দলের মদদ থাকার প্রসঙ্গ টেনে সরকার প্রধান বলেন, এখানে দুর্ভাগ্য যে, কোন কোন রাজনৈতিক দল মদদ দিয়ে আসছে। যেমন গত নির্বাচনে তারা একটা প্রচেষ্টা চালিয়েছিল, সেখানে র‌্যাবের একটি সফল অভিযানের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক দলের অফিস থেকে বিশাল অঙ্কের অর্থ ধরা পড়ে। আর এর পরেই আমরা দেখেছি তাদের এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে আর কেউ যেন এ ধরনের মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে। তার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।
×