ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিদেশ ফেরত মহিউদ্দিন হাঁসের খামার করে স্বাবলম্বী

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ১৬ মার্চ ২০১৯

  বিদেশ ফেরত মহিউদ্দিন হাঁসের খামার করে স্বাবলম্বী

উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে একটি চাকরির আশায় অলস বসে না থেকে কিংবা সোনার হরিণের জন্য প্রিয়জনদের ছেড়ে প্রবাস জীবন যাপন না করে নিজ ইচ্ছায় অনেক কিছুই করা সম্ভব। যেটি প্রমাণ করেছেন যশোরের চৌগাছার কুয়েত ফেরত মহিউদ্দিন। কারও কোন সহযোগিতা ছাড়াই হাঁসের খামার করে তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এক বছরেই তার খরচের টাকা উঠে গেছে। অদম্য পরিশ্রমী মহিউদ্দিনকে সমাজ তথা দেশের বেকার যুবকদের কাছে দৃষ্টান্ত মনে করছেন অনেকে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বড় কিছু উপহার দিতে পারবেন বলেও মনে করছেন সচেতন মহল। চৌগাছা জেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের জলকা মাধবপুর গ্রামের হানেফ আলী বিশ্বাসের ছেলে মহিউদ্দিন (৪০)। লেখাপড়ায় বেশিদূর যেতে পারেননি তিনি। মাধ্যমিকের গন্ডি পার হওয়ার আগেই ২০০৮ সালের দিকে তিনি পাড়ি জমান সুদূর কুয়েতে। দীর্ঘ ৮ বছর প্রবাস জীবন যাপন শেষে চলে আসেন বাড়িতে। বিদেশে অনেক কষ্টে অর্জিত অর্থ দিয়ে কি করবেন এমন ভাবনায় বেশ বিচলিত ছিলেন। একদিন তার এক নিকট আত্মীয়র কাছ থেকে হাঁস পালনের গল্প শুনে বেশ মনোযোগী হয়ে ওঠেন মহিউদ্দিন। একপর্যায় তিনি হাঁসের খামার করতে মনস্থির করেন। ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি চৌগাছা- কদমতলা সড়কের ধুনারখাল ব্রিজ নামক স্থানে মাত্র ১২ কাঠা জমির ওপর গড়ে তোলেন হাঁসের খামার। এই খামারের পাশ দিয়ে প্রবহমান স্থানীয় ধুনারখাল ও কপোতাক্ষ নদ। মূলত এই খালকে ঘিরেই তার খামার প্রতিষ্ঠিত। প্রথম বছরে তিনি ঘর নির্মাণ, হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহসহ যাবতীয় কাজে ব্যয় করেন ২৬ লাখ টাকা। এরপর মাত্র সাড়ে চার মাস পর হতেই খামার থেকে আয় শুরু হয়। এক বছরেই খরচের টাকা ঘরে তুলতে তিনি প্রায় সক্ষম হয়েছেন। বর্তমানে তার খামারে ২ হাজার ৭শ’ বিভিন্ন জাতের হাঁস আছে। এরমধ্যে পুরুষ হাঁস আছে সাড়ে ৩শ’, বাকি সবই ডিম দেয়া হাঁস। এসব হাঁস থেকে তিনি প্রতিদিন ১ হাজার ৫শ’ থেকে ২ হাজার ডিম পান। প্রতিটি ডিম তিনি বিক্রি করেন ১০ টাকা দরে, যার বাজার মূল্য দাঁড়ায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। সরেজমিন হাঁসের খামারে গিয়ে দেখা যায় তিনজন কর্মচারীসহ খামারী মহিউদ্দিন খামারে কাজ করছেন। এসময় কথা হয় এই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার সঙ্গে। তিনি বলেন, অনেকে অনেক ধরনের ব্যবসা করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন। তবে আমি ভিন্ন ধরনের ব্যবসায় মনোযোগী হয়েছি এবং বলাচলে আজ অনেকটাই সফল। বিদেশ থেকে দেশে ফিরে কারও কোন সহযোগিতা ছাড়াই নিজের ইচ্ছা শক্তিতেই গড়ে তোলা হয় হাঁসের খামার। তিনজন কর্মচারীর সহযোগিতায় তিনি খামারে নিয়মিত কাজ করছেন। মহিউদ্দিন বলেন, হাঁসের খামার এ অঞ্চলে তেমন একটা নেই। সে দিকটা বিবেচনা করেই এই ফার্ম করার সিদ্ধান্ত। ১২ কাটা জমি লিজ নিয়ে হাঁসের জন্য ঘর নির্মাণ করেছি। আর পাশের খালের পানিতে হাঁস চরানোর ব্যবস্থা করেছি। দিনের বেশির ভাগ সময়ই হাঁসের দল খালের পানিতে থাকে। খাওয়ার সময় হলেই তারা উপরে উঠে আসে। আর সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে সব হাঁস দল বেঁধে ঘরে উঠে যায়। হাঁসের পিছে তেমন পরিশ্রম নেই তবে যেটুকু পরিশ্রম তা নিয়ম মাফিক করতে হয়। হাঁসের খাদ্য হিসেবে তিনি স্থানীয় বাঁওড় থেকে ছোট শামুক (গুগলি শামুক) অর্থের বিনিময়ে সংগ্রহ করেন। এই শামুক তিনি প্রতিদিন দুপুরে হাঁসের মাঝে দিয়ে দেন। এছাড়া সকাল সন্ধ্যা ও রাত ৮ টার দিকে নিজের তৈরি খাবার হাঁসের খাওয়ানো হয়। হাঁসসহ খামার পরিচর্চায় তিনজন কর্মচারী রাখা আছে। তাদের প্রত্যেককে মাসে ৯ হাজার টাকা করে বেতন দেন তিনি। তারা সকলেই খামারের জন্য নিবেদিত বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, নতুন শুরু করার কারনে অনেক কিছুই আমার অজানা ছিল যার করনে কিছুটা সমস্যা হয়েছে যা আগামীতে থাকবে না বলে মনে করছেন। হাঁসের রোগবালাই তুলনামূলক অনেক কম, তাই হাঁস পালনে তেমন বেগ পেতে হয় না। হাঁসের প্রধান রোগ হচ্ছে প্লেগ রোগ ও ডাক ভাইরাস হেপাটাইটিজ। তবে নিয়মিত রোগ প্রতিরোধক ওষুধ প্রয়োগ করলে সমস্যা হয় না। স্থানীয়রা জানান, মহিউদ্দিন সমাজের বেকার যুবকদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে চাকরির জন্য অলস বসে না থেকে কিংবা বিদেশ না গিয়ে সেই অর্থ দিয়ে এ ধরনের খামার প্রতিষ্ঠা করে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। যার প্রমান মহিউদ্দিন। এদিকে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই ধরনের উদ্যোক্তা সমাজ তথা দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। -সাজেদ রহমান, যশোর থেকে
×