অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দুরারোগ্য ও জটিল চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে বিএসএমএমইউর অধীন সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয়সহ ৮১০ কোটি টাকা ব্যয়ের ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে ৪ লাখ ৫ হাজার মে.টন ইউরিয়া সার এবং ৩ লাখ টন গম আমদানির চুক্তি অনুমোদন করেছে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এছাড়া দেশের দক্ষিণাঞ্চল উন্নয়নে পায়রা সমুদ্র বন্দরে টার্মিনাল ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ সংক্রান্ত ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়।
বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এ প্রস্তাবগুলো অনুমোদন দেয়। বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে অর্থমন্ত্রী জানান, ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ১০টি ক্রয় প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পে পরামর্শক প্রতিষ্ঠা নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৭৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় কনসালট্যান্সি সার্ভিস, নক্সা, সংযোগ রোড, ব্রিজসহ বিভিন্ন বিষয়ের জন্য পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন পায়রা সমুদ্রবন্দর বাস্তবায়িত হলে ওই অঞ্চল বাণিজ্যিক হাবে পরিণত হবে। এর ফলে ভারত, ভুটান, নেপাল ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়বে। একই সঙ্গে পদ্মা সেতু নির্মাণ সেতু অর্থবহ হয়ে উঠবে। তিনি বলেন, পায়রা হবে চট্টগ্রামের মতো একটি সমুদ্র বন্দর। এছাড়া পায়রার মতো করে মংলা পোর্ট এবং মাতারবাড়িতে ও পোর্ট নির্মাণের বিষয়ে কাজ করছে সরকার।
ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধীন সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল নির্মাণে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রায় জিরো শতাংশ সুদে কোরিয়ান ফান্ডের সহায়তায় প্রাথমিক পর্যায়ে ২৭৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি আমদানি করা হবে। দেশে দুরারোগ্য ও জটিল চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে বিএসএমএমইউকে বিশ্বের সেরামানের হাসপাতালের একটি পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এজন্য প্রাথমিক পর্যায়ের অকাঠামো নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে শুরু করা হয়েছে। বিএসএমএমইউকে বিশ্বমানের হাসপাতাল ও আধুনিক মানের চিকিৎসা দেয়া গেলে রোগীদের বিদেশ গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নেয়ার বিষয়টি কমে আসবে। এছাড়া স্বল্পখরচে ভাল চিকিৎসা পাবে এদেশের জনগণ। এলক্ষ্যে বিএসএমএমইউতে উন্নত যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে সরকার। এদিকে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, খুলনা কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন খুলনা শহরে এডমিনিস্ট্রেটিভ কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় দুই তলা বেজমেন্টসহ ১৫ তলা বিল্ডিং ও শহরে কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ করা হবে। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সহকারী কমিশনারদের জন্য ডাবল কেবিন পিকআপ ক্রয় করা হবে সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে। এতে মোট ব্যয় হবে ১০৩ কোটি টাকা।
এছাড়া আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্যাকেজ-৮ এর আওতায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। অস্ট্রেলিয়ার কোম্পানি জেকে ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড থেকে ২৭১ দশমিক ৭৫ মার্কিন ডলার প্রতি মেট্রিক টন দামে এ গম কেনা হবে। প্রতি কেজি ২২.৮২ টাকা। এতে ব্যয় হবে ১১৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা। তবে ধাপে ধাপে ৩ লাখ টন গম আমদানি করা হবে।
এর আগে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে সৌদির বিসিক ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (সাবিসি) সৌদি আরব হতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে ৪ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদনও দেয়া হয়েছে। সভায় অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হলো, পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচীর জন্য ৪র্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচীর আওতায় ১০০ মিলিয়ন চক্র স্বল্পমাত্রার জন্মনিয়ন্ত্রণ খবার বড়ি ক্রয় করা হবে। ব্যয় হবে ১১০ কোটি টাকা।
এছাড়া জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের চারটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। রূপকল্প -১ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় শ্রীকাইল ইস্ট-১ এর। তিনটি প্রস্তাবে কূপ খনন এলাকায় অস্থায়ী শ্রমিক ও আনসার ক্যাম্প এবং কেমিক্যালস সংরক্ষণের জন্য দুইটি গোডাউন নির্মাণ, অনুসন্ধান কূপ খনন ড্রিল সিস্টেম টেস্টিং ও ওয়ার লাইন লোগিং সার্ভিস সেবা গ্রহণের প্রস্তাব অনুমোদন। এই তিনটি প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা। রূপকল্প-২ শীর্ষক প্রকল্পের অধীন জকিগঞ্জ-১ কূপ খনন কাজে নিয়োজিত অস্থায়ী শ্রমিক ও আনসারদের জন্য আবাসিক ক্যাম্প নির্মাণ, নিরাপত্তা বেষ্টনী, চৌকি, কেমিক্যাল গোডাউন নির্মাণ কাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২ কোটি ২৪ লাখ টাকা।