ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নদী উদ্ধার অভিযান

দ্বিতীয় দফায় ৮৮ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

প্রকাশিত: ১০:৪৬, ৬ মার্চ ২০১৯

দ্বিতীয় দফায় ৮৮ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দ্বিতীয় দফায় বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ তীরে অভিযান শুরু করেছে বিআইডব্লিটিএ। মঙ্গলবার সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালানো হয়। এ সময় তারা পাকা, আধা পাকা এবং টিনশেডসহ মোট ৮৮ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। পাকার মধ্যে একতলা থেকে তিন তলা ভবন পর্যন্ত গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তবে এই উচ্ছেদ অভিযানের সময় কেউ বাধা দেয়নি। এক সময়ের প্রমত্তা বুড়িগঙ্গা এখন দখল দূষণের মরাগাঙ। ইতোমধ্যে দখলদারদের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে গেছে পশ্চিমের শাখা নদী। দখল হতে হতে মূল নদী বর্তমানে সঙ্কীর্ণ, জীর্ণ প্রায়। আদালতের এক আদেশে বলা হয়েছে বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চার নদীকে বাঁচানো না গেলে রাজধানীর জনজীবনে বিপর্যয় নেমে আসবে। সেই থেকে বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে ২০০১ সাল থেকে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু কোন এই দীর্ঘ সময় ধরে অভিযান চালানোর পর নদীটির দখল দূষণ রোধ থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ঢাকার চার নদী বাঁচাতে যুগান্তকারী রায় দেয় আদালত। সেই থেকে লাগাতার উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলেও তা রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি মূলত প্রভাবশালী দখলদারদের কারণে। তৃতীয় দফায় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে এবার দখল উচ্ছেদে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে। এই অবস্থায় ফেব্রুয়ারি থেকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে বিআইডব্লিউটিএ। জানা গেছে নদীর নিয়ে বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বর্তমান দখল উচ্ছেদ শুরু হয়েছে। এতে অনেক প্রভাবশালী দখলদারদের স্থাপনাও গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রথম দফায় ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অভিযান চালানো হয়। ওই অভিযানে প্রায় ২ হাজার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন এই দফায় উচ্ছেদের সেেঙ্গ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে। ফলে কেউ নতুন করে নদী দখল করতে সাহস পাচ্ছে না। মঙ্গলবার থেকে আবারও উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। তা পুরো মার্চ মাস জুড়ে চলবে। প্রতি সপ্তাহে তিন দিন করে ১৩ কার্যদিবসের বছিলা থেকে গাবতলী পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। মঙ্গলবারের উচ্ছেদ অভিযানে ২৮ পাকা স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেখা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা জানান পাকা এসব স্থাপনার মধ্যে রয়েছে তিনতলা ৫, দোতলা ৪, একতলা ১৯ পাকা ভবন উচ্ছেদ করা হয়। এছাড়া উচ্ছেদ করা হয়েছে আধা পাকা ২২ স্থাপনা। অপরদিকে বাউন্ডারি ওয়াল ৩১ (১০ দশমিক ৫ একর) ও সাতটি টংঘর উচ্ছেদ করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফার অবৈধ উচ্ছেদ অভিযানের শুরুতেই রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকা থেকে কেরানীগঞ্জের মধ্যেরচর এলাকা পর্যন্ত অবৈদ স্থপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অভিযানের দ্বিতীয় পর্ব বসিলার নিকটবর্তী বুড়িগঙ্গা তীরে হাইক্কার খাল ও তুরাগের তীরে চন্দ্রিমা উদ্যান এলাকায় এ অভিযান পরিচালিত হবে। আগামী ২৮ মার্চ পর্যন্ত চারটি পর্যায়ে এ অভিযান চালানো হবে। আজ বুধবার সকাল ৯টায় থেকে অভিযান শুরু হবে। এর আগে ২৯ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম দফায় বুড়িগঙ্গা তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। বিআইডব্লিটিএর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন বুড়িগঙ্গাসহ সারাদেশে নদী রক্ষায় জিরো টলারেন্স নীতি নেয়া হয়েছে। নদীর সব দখল উচ্ছেদ করে অচিরেই নদীর ওপর মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে লাগাতার উচ্ছেদ চলছে। নদী দখলমুক্ত করতে ক্র্যাশ প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে এবারের অভিযান চালানো হচ্ছে। নদীকে দখলমুক্ত না করা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। উচ্ছেদ অভিযান শেষে নদীর দুধার দিয়ে ৫০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে ওয়াকওয়ে নির্মাণের জন্য নক্সা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে নক্সা হয়ে গেলে এই প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা হবে।
×