ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গোপনে কোম্পানির উদ্যোক্তা শেয়ার বিক্রির পথ বন্ধ হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৯:৫৬, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

গোপনে কোম্পানির উদ্যোক্তা শেয়ার বিক্রির পথ বন্ধ হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আইন লঙ্ঘন করে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা এবং প্লেসমেন্টধারীদের শেয়ার বিক্রির পথ বন্ধ হচ্ছে। গোপনে শেয়ার বিক্রির সুযোগ বন্ধ করতে নিজেদের সফটওয়্যারে কিছু পরিবর্তন আনছে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)। চালু করছে নতুন পদ্ধতি। সূত্র জানিয়েছে, নতুন পদ্ধতি চালু হলে কোনো উদ্যোক্তা অথবা কোন প্লেসমেন্টধারী ব্যক্তি বিদ্যমান বিধিমালাকে পাশ কাটিয়ে শেয়ার বিক্রি করতে পারবে না। শেয়ার বিক্রি করতে হলে তাদের আগাম ঘোষণা দিতে হবে। একইভাবে প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করতে হলেও কিছু আনুষ্ঠানিকতা ও শর্ত পরিপালন করতে হবে। উদ্যোক্তা ও প্লেসমেন্টধারীদের শেয়ার বিক্রিতে অনিয়ম-অনাচার ও দুর্নীতি বন্ধে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশে এই ব্যবস্থা নিয়েছে সিডিবিএল। বিষয়টি নিশ্চিত করে সিডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভ্র কান্তি চৌধুরী বলেন, কোন উদ্যোক্তা বা প্লেসমেন্ট শেয়ারধারী যাতে আইন লঙ্ঘন করে শেয়ার বিক্রি করতে না পারে, সে লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন। ইতোমধ্যে প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, তাদের উদ্যোগের বিষয়ে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি) এর কাছ থেকেও ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য, আইনানুসারে তালিকাভুক্ত প্রত্যেক কোম্পানির স্পন্সরদের শেয়ার বিক্রিতে ৩ বছরের নিষেধাজ্ঞা থাকে। এই সময়ে তারা নিজ কোম্পানির কোন শেয়ার বিক্রি করতে পারেন না। নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও শেয়ার বিক্রির জন্য তাদের কিছু আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয়। শেয়ার বেচতে চাইলে কী সংখ্যক শেয়ার বিক্রি করবেন, স্টক এক্সচেঞ্জের প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে করবেন না-কি বাইরে করবেন, পাবলিক মার্কেটে করবেন না-কি ব্লক মার্কেটে করবেন চিঠি দিয়ে তা বিএসইসি ও দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে জানাতে হয়। স্পন্সরের চিঠি পাবার পর স্টক এক্সচেঞ্জ তার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ওই তথ্য বিনিয়োগকারীদের জানিয়ে দেয়। অভিযোগ রয়েছে, অনেক উদ্যোক্তা অসৎ উদ্দেশ্যে কোন ঘোষণা না দিয়েই গোপনে তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে চলছে এই অসাধু তৎপরতা। কেন্দ্রীয়ভাবে স্পন্সরদের শেয়ার লক করা না থাকার সুযোগ নিচ্ছে তারা। উল্লেখ, বর্তমানে সংশ্লিষ্ট ডিপির কাছে স্পন্সর শেয়ার চিহ্নিত করা থাকে। চাইলে ডিপি ও উদ্যোক্তা গোপন সমঝোতার মাধ্যমে ওই শেয়ার বিক্রি করে দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ডিপি অসাধু প্রস্তাবে সম্মত না হলে স্পন্সর লিংক এ্যাকাউন্ট করে তার শেয়ার অন্য ব্রোকার হাউসে নিয়ে যান। সেখানে ওই শেয়ারে কোন চিহ্ন থাকে না বলে চাইলেই স্পন্সর যখন তখন তার শেয়ার বিক্রি করে দিতে পারে। কর ফাঁকি দেয়ার অসৎ উদ্দেশে অনেক প্লেসমেন্টধারীও তাদের শেয়ার বিক্রিতে একই কৌশল অবলম্বন করে থাকে। বর্তমানে প্লেসমেন্ট শেয়ারের ওপর ৫ শতাংশ ক্যাপিটাল গেইন (মূলধনী মুনাফা) ট্যাক্স আছে। প্লেসমেন্টের বরাদ্দ মূল্যের চেয়ে বাজারে বেশি দামে শেয়ার বিক্রি হলে ওই মুনাফার ওপর যে কর দিতে হয়, তা-ই মূলধনী মুনাফা। যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে গোপন শেয়ার বিক্রি ॥ নতুন ব্যবস্থায় তালিকাভুক্ত প্রত্যেকটি কোম্পানির সব স্পন্সরের শেয়ার লক করা থাকবে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ নিজেরাই তা লক করবে। তবে তাদের কাছে আনলক করার ক্ষমতা থাকবে না। এ ক্ষমতা থাকবে স্টক এক্সচেঞ্জের হাতে। স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে প্রত্যেক স্পন্সরের এ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড থাকবে। সংশ্লিষ্ট স্পন্সর স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে শেয়ার বিক্রি করার ঘোষণা দিলে স্টক এক্সচেঞ্জ ঘোষিত সংখ্যক শেয়ারকে আনলক করে দেবে। তাতে শুধু ওই নির্দিষ্ট সংখ্যক শেয়ারই বিক্রি করতে পারবেন তিনি। একই পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করা হবে প্লেসমেন্ট শেয়ারের বিক্রি।
×