ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফরিদপুরে গ্রামে গ্রামে ঘুরছে আলোর ফেরিওয়ালারা

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

ফরিদপুরে গ্রামে গ্রামে ঘুরছে আলোর ফেরিওয়ালারা

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফরিদপুর, ২৬ জানুয়ারি ॥ ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুত’ স্লোগানের বাস্তবায়নে তাৎক্ষণিক বিদ্যুত সংযোগ দিতে ফরিদপুরের গ্রামে গ্রামে ঘুরছে পল্লী বিদ্যুত সমিতির (পবিস) আলোর ফেরিওয়ালারা, যা থেকে তাৎক্ষণিক বিদ্যুত সংযোগসহ চার ধরনের সেবা নিয়ে উপকৃত হচ্ছে গ্রামগঞ্জের মানুষ। স্থানীয়দের দাবি গ্রামে গ্রামে এসে সেবা প্রদান করায় হয়রানি হতে হচ্ছে না তাদের, একই সঙ্গে রেহাই পাচ্ছেন বাড়তি খরচের হাত থেকেও। পবিস, ফরিদপুর মনে করেন, আগামী জুন মাসের মধ্যে ফরিদপুরকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনতে সরকারের যে পরিকল্পনা রয়েছে, তা পূরণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে আলোর ফেরিওয়ালা কার্যক্রম। সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যুতের তার, মিটার আর সরঞ্জামাদি ভ্যান করে নিয়ে গ্রামে গ্রামে হাক ডাক ছেড়ে বেড়াচ্ছেন আলোর ফেরিওয়ালা নামে ফরিদপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির (পবিস) কর্মীরা। গ্রামের পথে প্রান্তরে হাক ডাক ছেড়ে বেড়ানো বিদ্যুতের ফেরিওয়ালারা দ্রুত বিদ্যুত সংযোগ, দ্রুত বিদ্যুত বিভ্রাটের সমাধান, মোবাইল সেবাকেন্দ্র ও মোবাইল অভিযোগ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছেন। ফেরিওয়ালাদের হাক ডাক শুনে ভ্যানের কাছে ছুটে আসছে গ্রামের মানুষ, জানাচ্ছেন বিদ্যুত সংক্রান্ত সমস্যার কথা, নিচ্ছেন সেবা। চরভদ্রাসনের ভাদুল্লা মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামের আম্বিয়া বেগম জানান, মাইকিং শুনে রাস্তায় গিয়ে বিদ্যুতের আবেদন জানাই এরপর তারা ৪৬০ টাকা নিয়ে ঘরে বিদ্যুতের সংযোগ দিয়ে যায়। একই গ্রামের আব্দুর রশিদ মোল্লা জানান, দ্রুত সংযোগ প্রদান করায় আমরা খুশি। অফিসে যাওয়া সময় বাঁচল, খরচ বাঁচল আবার হয়রানিও হতে হলো না। ফেরিওয়ালাদের নিকট থেকে দ্রুত বিদ্যুত সংযোগ পেয়েই বিদ্যুতের সদ্ব্যবহার করছেন তারা। বিদ্যুতের সংযোগ তাদের জীবনযাত্রার মানে পরিবর্তন আনবে বলে দাবি তাদের। বন্দনা রানী বলেন, আমি সেলাই কাজ করি, ঘরের মধ্যে অন্ধকার থাকায় কাজ করতে সমস্যা হয়, অপরদিকে রাতে কাজ করতে পারিনা। এখন বিদ্যুতের সংযোগ পাওয়ায় দিনরাত কাজ করতে পারছি। এতে পরিবারের স্বচ্ছলতা আসছে। এলাকার সচেতন মানুষেরা মনে করেন, এ ধরনের আয়োজন সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার নিদর্শন। ঘরে বসেই বিদ্যুত পাওয়া ছিল কল্পনাতীত। হাজীডাঙ্গী গ্রামের মোঃ আয়ুব আলী ম-ল বলেন, বার বার অফিসে গিয়ে ধরণা দিয়ে এই সংযোগ নিতে একদিকে সময় ও অর্থের অপচয় হতো অপরদিকে কিছু দালালরাও সাধারণ মানুষকে দ্রুতসংযোগ দেয়ার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নিত, যার অবসান ঘটবে। একই সঙ্গে আলোর ফেরিওয়ালাদের চারটি সেবা প্রদানের মধ্যে আটকে না রেখে বিল সংগ্রহসহ অন্যান্য সেবা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তাদের। ফরিদপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির জেনারেল ম্যানেজার আবুল হাসান জানান, প্রধানমন্ত্রীর স্লোগানের বাস্তবায়নে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় ফরিদপুরে প্রাথমিকভাবে আলোর ফেরিওয়ালা নামে ১০টি ভ্যানে গ্রামে গ্রামে বিদ্যুত সংক্রান্ত সেবা প্রদান করা হচ্ছে। গ্রাহকের দোর গোড়ায় গিয়ে এ সেবা প্রদানের মাধ্যমে গ্রাহকের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক সৃষ্টি হওয়ায় মধ্যসত্ত্বভোগীদের অবসান ঘটবে। ফলে থাকবে না দুর্নীতি ও অনিয়ম, সর্বোচ্চ সেবা পাবে গ্রাহক। তিনি আরও বলেন, সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী জুন মাসের মধ্যে আমরা ফরিদপুর জেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের জেলা ঘোষণা করতে যাচ্ছি, যার লক্ষ্য পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে আলোর ফেরিওয়ালা কার্যক্রম। এ জেলায় ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিদ্যুত গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ৮৫ হাজার ২৫২টি, বর্তমান সরকারের বিগত দুই মেয়াদে (১০ বছরে) নতুন গ্রাহক সংখ্যা দুই লক্ষ ২৪ হাজার চারশটি বেড়ে বর্তমানে রয়েছে তিন লাখ নয় হাজার ৬৫২ জন গ্রাহক। প্রবৃদ্ধির হার ৩৪৭ শতাংশ। আর গত এক সপ্তাহে আলোর ফেরিওয়ালারা নতুন বিদ্যুত সংযোগ প্রদানসহ প্রায় পাঁচ শ’ গ্রাহকের সমস্যার সমাধান করেছে।
×