ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় সন্তুষ্ট আইকাও

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮

শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় সন্তুষ্ট আইকাও

আজাদ সুলায়মান ॥ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মানসম্মত বলে সন্তোষ প্রকাশ করেছে আইকাও অডিট টিম। সিভিল এভিয়েশনের সর্বশেষ নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার পর ঢাকা ত্যাগের আগে এ মনোভাব প্রকাশ করে তারা। এই টিম পরিদর্শন শেষে ঢাকা ত্যাগ করেছে বৃহস্পতিবার। গত ২৪ নবেম্বর শুরু হয়ে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে এ অডিট। এখন অপেক্ষা করতে হচ্ছে ফেডারেল এভিয়েশন এ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) পরিদর্শনের জন্য। যার ওপর নির্ভর করবে ক্যাটাগরি-১ হবার অগ্রগতি। এ বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল নাইম হাসান বলেছেন, আমরা আইকাও’র সব ধরনের প্রশ্নের সঠিক জবাব ও ব্যাখ্যা দিতে পেরেছি। আইকাও’র সফরকারী প্রতিনিধিদল চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে শাহজালাল বিমানন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আসলে আইকাও দেখে গ্রাউন্ড সার্ভিসের নিরাপত্তা। অন্যদিকে এফএএ দেখে ফ্লাইটের সেফটি সিস্টেম। দুটোতেই যদি আমাদের অবস্থান তাদের কাছে সন্তোষজনক হয়, তাহলে অবশ্যই সেটা আমাদের জন্য অত্যন্ত বড় অর্জনের। আমরা এখন যথেষ্ট আশাবাদী আইকাও যেহেতু পরিদর্শন শেষে শাহজালাল বিমানবন্দর গ্রাউন্ডের সেফটি সিকিরিউিটি সম্পর্কে ‘গুড’ মন্তব্য করে গেছে, তারা মন্ট্রিল ফিরে একটা ভাল প্রতিবেদন দেবে। মাস দুয়েকের মধ্যে সে রিপোর্ট দেবে। তারপর আসবে এফএএ টিম। সেটা আরও গুরুত্বপূর্ণ। তবে আইকাও’র প্রতিবেদন ভাল হওয়ার পর আমরা জোর দিয়ে বলতে পারব আমাদের সেফটি সম্পর্কে; যা এফএএ’র রিপোর্টও ভাল করতে জোরালো ভূমিকা পালন করবে। তখন আমাদের বেবিচক ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীত হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। ঢাকা থেকে সরাসরি নিউইয়র্ক ফ্লাইট কেবল তখনই চালু করার সুযোগ এনে দেবে। উল্লেখ্য, সদ্য সমাপ্ত আইকাও অডিটের আগে বেবিচক সদস্য এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমান ও সদস্য নিরাপত্তা শাহ মোহাম্মদ এমদাদুল হকের নেতৃত্বে সবচেয়ে বড় এই অডিটের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। তাদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে শাহজালাল পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল ফারুক ও এভসেক পরিচালক উইং কমান্ডার নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বিগত চারমাস দিনরাত ঘুম হারাম করে ডকুমেন্টেশন তৈরির কাজ সম্পন্ন করেন। জানা গেছে, আইকাও টিম এবার দেশীয় বিমানবন্দর ও এয়ারলাইন্সগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার ত্রুটি-বিচ্যুতি পুঙ্খনাপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে। কোথায় কোন ঘাটতি বা ত্রুটি আছে কিনা তা সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করে তারা। বিশাল পরিধির এই কর্মযজ্ঞ চলছে চার মাস ধরে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তিন তলায় এভসেক পরিচালক নূূূর-ই-আলম সিদ্দিকী তৈরি করেন নিরাপত্তার সব ভলিয়মের ডকুমেন্টেশন। বিমানবন্দর ও এয়ারলাইন্স অপারেটরগুলো আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে চলছে কিনা নাকি কোথাও কোন ঘাটতি আছে তা শনাক্ত করেন। নিরাপত্তার বিভিন্ন ধাপের মান কি রকম কিংবা কতটাা ঝুকিতে রয়েছে সেটা স্বচক্ষে দেখেছেন অডিট সদস্যরা। আইকাও চার সদস্যের যে টিম ঢাকায় পরিদর্শন করেছেন তারা হচ্ছেন কারেন্ট জুদাহ, রবি কান্নাহ, জয়কান্তা ও স্মিথ। টানা দশদিন তারা ঢাকায় অবস্থান করে অডিট করেন। এসাইনমেন্ট অনুযায়ী তাদের মোকাবেলা করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি আগেই শেষ করেছিল বেবিচক। এ জন্য এভসেকের এ অডিটের প্রাক প্রস্তুতি হিসেবে আইকাও সদর দফতরে ৪৮১টি নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তর (কুয়ারি) আইকাও সদর দফতর মন্ট্রিলে পাঠানো হয় গত সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে। আইকাও এর আগেই এসব প্রশ্নের উত্তর স্টাডি করে। ঢাকায় আসার পর সেই আলোকেই তারা অনুসন্ধান করে এবং বাস্তবে তার কতটুকু প্রতিফলন ঘটেছে তা যাচাই করে তারা। চারমাস ধরে শাহজালাল বিমানবন্দরে উইং কমান্ড নূর-ই-আলম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে একদল তরুণ মেধাবী এভসেক কর্মকর্তাকে দিনরাত ডকুমেন্ট তৈরির কাজে ব্যস্ত দেখা গেছে। ছুটির দিনেও তাদের কাজ করতে হয়েছে। এ জন্য এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি প্রোগ্রামের ওপর সাড়ে পাঁচ শ’ ভলিয়ুম তৈরি করতে হয়। বিমানবন্দরের স্বাভাবিক অপারেশনাল কাজের পাশাপাশি তাদের এই বিশাল কর্মযজ্ঞে ডুবে থাকতে হচ্ছে। সদ্য সমাপ্ত অডিট সম্পর্কে জানতে চাইলে, বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, এবারের অডিট শুধু উত্তীর্ণ হলেই চলবে না, সেটা ধরে সমুন্নত রাখাটাই হবে বড় চ্যালেঞ্জের। উল্লেখ্য, এর আগে দু’বছরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ঘাটতি পূরণে ব্যাপক সংস্কার আনা হয়েছে। বিশেষ করে যেই কার্গোর নিরাপত্তায় প্রশ্ন তুলে যুক্তরাজ্য ঢাকা থেকে সরাসরি কার্গো রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। সেখানে আজ বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। বেবিচক সদস্য এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কার্গো হাউজে স্থাপন করা হয়েছে ইডিএস, ইটিডি, ডুয়েল মুড স্ক্যানার ও ডগ স্কোয়াডসহ প্রয়োজনীয় সব ইকুইপমেন্ট। এখনকার বর্তমান নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অভিভূত দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষকরাও।
×